মোহনবাগান ৫ (ওডাফা হ্যাটট্রিক, টোলগে ২)
সাদার্ন সমিতি ০ |
চার কোটির ‘উল্কাপাত’ দেখার জন্য মোহনবাগান সমর্থকদের অপেক্ষা করতে হল আট মাস!
ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের চার, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই সুদে আসলে ফিরিয়ে দিলেন করিম বেঞ্চারিফা। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর ক্লাব সাদার্নকে গত শনিবার চার গোল দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই টিমকেই ওডাফারা বাড়তি একটা গোল হজম করালেন।
চারের পালটা পাঁচের চমকটা অবশ্য চাপা পড়ে যাচ্ছে দেশের দুই সেরা বিদেশি স্ট্রাইকারের আগুনে পারফরম্যান্সের জন্য। মরসুমে প্রথম বার ওডাফা-টোলগে জুটি সব অর্থেই যুগলবন্দি হয়ে উঠেছিলেন সোমবার। গোল করা, একে অপরকে পাস বাড়ানো, গোলের পর আলিঙ্গন। মনে হচ্ছিল মঞ্চে যেন মান্না দে-র সঙ্গে রাধাকান্ত নন্দী সঙ্গত‘আমি যামিনী, তুমি শশী হে’!
কী অসাধারণ সব গোল! |
ঘাড়ের উপর বিদেশি ডিফেন্ডার। তা সত্ত্বেও মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে ওডাফা ওকোলি গোল করলেন কম্পাস মাপা শটে।
টোলগে ওজবের পাস ধরে সাপের মতো ড্রিবল করতে করতে বিপক্ষ গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে লব করে ওডাফার দুর্দান্ত গোল। এবং হ্যাটট্রিক।
কুইনটনের সঙ্গে ‘ওয়াল’ খেলে খেলে বিপক্ষ বক্সের সামান্য দূর থেকে রামধনু শটে টোলগের অসাধারণ গোল। বলটা ঝুপ করে যেন আকাশ থেকে পড়ল।
ওডাফার শট সাদার্ন পোস্টে লেগে ফিরতে...টোলগের নিখুঁত প্লেসিং।
গোলগুলো দেখে মনে হল বসন্তের যুবভারতীতে যেন উৎসব লেগেছে। রঙিন গোলের উৎসব।
‘এমনও বসন্ত দিনে’ বাড়ি ফেরার পথে তাই উচ্ছ্বাসে ভাসলেন দু’জনেই।
ওডাফা ওকোলি: মরসুমে এটাই মোহনবাগানের সেরা ম্যাচ। টোলগে আর আমি দু’জনে এক সঙ্গে এত ভাল কখনও খেলিনি। এ রকম খেলতে পারলে কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।
টোলগে ওজবে: ওডাফা দুর্দান্ত খেলেছে। মনে হয় আমিও আজ নিজের সেরা ম্যাচটা খেললাম। এটা টোলগে-ওডাফা জুটির সেরা ম্যাচ।
চাতক পাখির মতো হাপিত্যেশ করে বসে থাকা সবুজ-মেরুন সমর্থকদের ‘ইচ্ছে’ কলকাতা লিগের সুপার নাইনে এসে পূর্ণ হলেও, তাতে গঙ্গাপারের তাঁবুতে কোনও প্রভাব পড়ছে না। পাঁচ গোলের কৃতিত্ব দলের দুই স্ট্রাইকার ভাগ করে নেওয়ার দিনেও তাই স্টেডিয়ামে সমর্থক নেই। কারণ, সবাই জানে যত উচ্ছ্বাসই হোক, আসলে অসীম অন্ধকারে এই ‘পাঁচ গোল’ আকাশে পাঁচটা টিমটিমে তারার মতো। যে আলোয় ক্লাবের কোনও আঁধারই ঘুচবে না।
সর্বভারতীয় স্তরে সেরা দুটো টুর্নামেন্ট আই লিগ আর ফেড কাপ হাতছাড়া। উল্টে অবনমনের লড়াই লড়তে হচ্ছে আই লিগে। কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের পিছনে ধাওয়া করলেও লিগ টেবিলে এখনও পিছিয়ে মোহনবাগান। হাতে পেন্সিল বলতে আইএফএ শিল্ড!
খড়কুটোর মতো তাই বাংলার দু’টো টুর্নামেন্টকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছে করিম ব্রিগেড। মোহন কোচ বলেও ফেললেন, “শিল্ডের আগে পুরো টিমের এই পারফরম্যান্স সবাইকে উদ্দীপ্ত করবে।” |
সুপার নাইনে খেললেও সাদার্ন সমিতির শক্তি খুবই কম। তার উপর ক্লাবের কর্তারা নতুন কোচ নিয়োগ হবে ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় সাবির আলি রিজার্ভ বেঞ্চে দাঁড়িয়ে হাত পা নাড়লেন। নানা নির্দেশ দিলেন। করিম জানতেন বিপক্ষ ‘বেড়াল’। সে জন্যই ৪-৩-৩ ফর্মেশনে টিম নামিয়ে তিনি ‘বাঘ’ হলেন। মণীশ ভার্গবকে জুড়ে দিলেন ওডাফা-টোলগের সঙ্গে। তেরো মিনিটের মধ্যে ২-০ হয়ে গেল। এরপর কি আর ম্যাচের কোনও রং থাকে? থাকেওনি। ফলে বাকি সময়টা অসম লড়াই হল। গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে অন্তত ১০-০ জেতার কথা বাগানের। ইমানুয়েল, মার্কোস-সহ বেশ কয়েক জন পরিচিত ফুটবলার ছিলেন সাদার্নে। কিন্তু সেটা নামমাত্র উপস্থিতি। মোহন-ঝড় যে ভাবে শুরু থেকেই আছড়ে পড়ল টালিগঞ্জের টিমটার উপর, তাতে তাঁদের করারও কিছু ছিল না। হারের ধাক্কায় ম্যাচের পরই চাকরি গেল সাদার্ন কোচ সাবিরের। তাঁর জায়গায় কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন সুখবিন্দর সিংহ।
স্টেডিয়াম ছেড়ে যাওয়ার আগে এ দিন ওডাফা বলছিলেন, “আজ আমরা দশে দশ।” অন্তত আজকের জন্য মোহন অধিনায়ক একশোয় একশো!
মোহনবাগান: অরিন্দম, রাজীব (মেহরাজ), খেলেম্বা, স্নেহাশিস, ডেনসন (মণীশ মৈথানি), মাসি, মণীশ ভার্গব (ফেলা), টোলগে, ওডাফা।
|