‘শুক্ল’পক্ষের আকাশ ঢাকা পড়ছে ব্যাটিং-অমাবস্যায়
পালে ভিড় করে বসে স্বেদবিন্দু, জার্সি দিয়ে মুছে চলেছেন অনবরত। ম্যাচ শেষ, তবু অসহ্য টেনশনের বলিরেখাগুলো আছে বহাল তবিয়তে। ক্লাবহাউসের একতলায় উপস্থিত সাংবাদিক-কুলকে দেখে বলেও ফেললেন, “যাক, জিতলাম শেষ পর্যন্ত!”
কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে তখন সামি আহমেদ। এবং উড়ে এল ছুটকো রসিকতা, “দেখে রাখুন। লক্ষ্মীরতন শুক্ল ছাড়া বাংলার একমাত্র অলরাউন্ডার! কালে কালে আমাকেও না ছাড়িয়ে যায়!”
উপরোক্ত ক্রিকেটার কে, এর পর নিশ্চয়ই আর বলার প্রয়োজন নেই। ঠিক তেমনই এটাও বোঝা শক্ত নয়, টিমের অধিনায়ক যখন এক নম্বর পেস-অস্ত্রকে অলরাউন্ডার ‘স্লটে’ ফেলে দেন, ব্যাটিং-লাইন আপের দশাটা ঠিক কী! ‘ব্যাটসম্যান’ সামি (৯ বলে ২৩ ন:আ:, ৩X৬) বাংলাকে যে ভাবে সোমবার জেতালেন, অতীতে ভারত ‘এ’-কেও এক বার জিতিয়েছেন। কিন্তু অমোঘ প্রশ্নটাও তো পিছু-পিছু সদর্পে হাজির।
এ ভাবে আর কত দিন?
ইডেনে: মরিয়া লক্ষ্মী জয় আনলেন বাংলার।
রঞ্জিতে বাংলা ব্যর্থ, চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের জন্য। রঞ্জি-পর্ব শেষ, এ বার মঞ্চ বিজয় হাজারের। আশ্চর্যের হচ্ছে, ফর্ম্যাট পাল্টালেও বাংলার ‘রোগমুক্তির’ কোনও লক্ষ্মণ নেই! কোনও দিন ১৮৬ রানে ধ্বংস হচ্ছে ব্যাটিং। কখনও আবার ১৬২ তুলতে কালঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে। মনে রাখা ভাল, বিজয় হাজারের কোয়ালিফাইং পর্ব এটা। রাঘববোয়ালরা ওঁত পেতে থাকবে পরে, নকআউটে। সেখানে এই ব্যাটিং দিয়ে বাংলা বাঁচবে তো? সহজ ম্যাচে কঠিন জয়ের গল্প এখন টিম বাংলার যেমন মজ্জাগত, তেমনই অবধারিত সব শেষে একত্রিশ বছরের এক অক্লান্ত যোদ্ধার উঠে আসা।
এ বারও যাঁকে চিনতে অসুবিধা হবে না। ইনি লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
বাংলার স্কোরবোর্ড দেখলে মনে হতে পারে, শুধু লক্ষ্মী কেন? সামি-ইরেশ সাক্সেনারাও তিনটে করে উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু স্কোরবোর্ড বলবে না, এই ঝাড়খণ্ড এক সময় ৬ ওভারে ৪৬ ছিল, রান রেট ছিল সাতের উপরে। ভারতীয় দলের পেসার সামি আহমেদকেও তখন স্কোয়্যার লেগ দিয়ে বাইরে ফেলতে অসুবিধা হয়নি ঝাড়খন্ডীদের। এবং তাঁদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা নামেই আটত্রিশ ওভারের (আউটফিল্ড ভিজে থাকায় পঞ্চাশ ওভারের হয়নি)। আদতে হচ্ছে টি-টোয়েন্টি। ওই সময়ই বল হাতে বাংলা অধিনায়কের আবির্ভাব। একটা এলবিডব্লিউ, একটা ফিল্ডারের হাতে লোপ্পা, একটা বোল্ড। আকাশ বর্মাকে যে বলটায় বোল্ড করলেন, এক কথায় স্বপ্নের ডেলিভারি। অফস্টাম্পে লাইনে পড়ে ভিতরে ঢুকে এল আচমকা। বাঁ-হাতি স্পিনার ইরেশ সাক্সেনা আজ সবচেয়ে কৃপণ, দুর্দান্ত বোলিংও করলেন। কিন্তু তবু তিনি বা সামি নন, সেরার সিংহাসনটা লক্ষ্মীর। সামির তিন উইকেট ঝাড়খন্ড ব্যাটিংয়ের ‘লেজ’ সাফ করেছে। কিন্তু এ দিন অন্তত তাঁকে চেনা সামি মনে হয়নি। সেখানে লক্ষ্মী প্রথমে বলে ৩-৩৫, পরে ব্যাটে ২৩।
ছয় মেরে ম্যাচ জেতাচ্ছেন সামি।
কিন্তু বাকিরা? ইডেনের পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল না। তবু অরিন্দম দাস, সন্দীপন দাস, অনুষ্টুপ মজুমদারদের আউটের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সন্দীপন (০) যে ভাবে ফিরলেন, সেটা সবচেয়ে শোচনীয়। বলের লাইনেই পা গেল না। বোল্ড, হুড়মুড়িয়ে পড়তে-পড়তে টাল সামলালেন কোনও মতে। শুভময়-ঋদ্ধিমানও যখন ব্যাট করছিলেন, রান রেট সাড়ে তিনে আটকে থেকেছে। সামান্য টার্গেটেও ম্যাচ হেঁটেছে অনিশ্চয়তার সরণি ধরে। নইলে আর লক্ষ্মীকে পরের ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে ওলট-পালটের কথা ভাবতে হয়? বলতে হয়, “জুনিয়রদের প্রোমোট করছি। না পারলে কী করব?”
উপায় কী? শুক্ল-পক্ষের আকাশও যে ভাবে ঢাকা পড়ছে ব্যাটিং-অমাবস্যায়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঝাড়খন্ড ১৬১ (সুব্রত ৪০, ইরেশ ৩-১৯, লক্ষ্মী ৩-৩৫, সামি ৩-৫৪)
বাংলা ১৬২-৭ (ঋদ্ধি ৩৭, শুভময় ৩৬, লক্ষ্মী ২৩, সামি ২৩ ন:আ:)

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.