|
|
|
|
ডানলপ কারখানা |
লিকুইডেটরেই ভরসা বঞ্চিত শ্রমিকদের |
তাপস ঘোষ • হুগলি |
লিকুইডেটরের মধ্যস্থতাতেই দুরবস্থা কাটবে বলে আশা করছেন হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার শ্রমিকেরা।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সোমবার থেকেই লিকুইডেটরের দখলে চলে গিয়েছে ডানলপ কারখানার যাবতীয় সম্পত্তি। এ দিন বিকেল থেকে কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে জেলা পুলিশ।
আদালতের রায় শুনে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে ডানলপের শ্রমিক মহল্লাও। দীর্ঘ দিন ধরে পাওনাগণ্ডা না পেয়ে হতাশায় ডুবেছিলেন তাঁরা। আদালতের রায়ে সেই হতাশা তাঁরা কাটিয়ে উঠছেন। পাশাপাশি, বন্ধ এই কারখানার জমিতে নতুন করে শিল্পস্থাপনের সম্ভাবনা এবং তার বাস্তবায়ন নিয়ে রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন তাঁরা।
২০১১ সালের ৮ অক্টোবর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এই কারখানায়। বকেয়া পাওনা এবং উৎপাদন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকেরা। তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম প্রভাবিত তিন শ্রমিক সংগঠন মিলিত ভাবে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’ তৈরি করে। মঞ্চ বেধে ধর্নাও শুরু হয়। এর পর থেকে কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে একাধিকবার শ্রমিকদের দাবি মেটানোর প্রতিশ্রতি দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এই মুহূর্তে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৭৩৯ জন শ্রমিক রয়েছেন। কারখানা বন্ধের পরে অনেকেই বাড়ি ফিরে যান। যাঁরা আছেন, তাঁদের দিন গুজরান হচ্ছে কোনও মতে। ঐতিহ্যশালী কারখানার শ্রমিক থেকে দিনমজুরে রূপান্তরিত হয়েছেন অনেকে। ২৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
১৯৭৮ সাল থেকে ডানলপে কাজ করছেন শম্ভুনাথ দাস। আর বছর দু’য়েক চাকরি রয়েছে মোটর বিভাগের এই শ্রমিকের। স্বভাবতই কারখানার অনেক উত্থান-পতনের স্বাক্ষী তিনি। এ দিন সংবাদমাধ্যমে আদালতের রায়ের কথা শুনে চলে এসেছিলেন কারখানা চত্ত্বরে। বলছিলেন, “ডানলপের যে এমন দশা হবে কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। রুইয়া এসে সর্বনাশ করে দিল এই কারখানার। তবে হাইকোর্ট আশার আলো দেখাচ্ছে। কয়েক লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে আমার। সেটা পেলে সংসারটা একটু ভাল ভাবে চালাতে পারি।” একই সুর জায়ান্ট-কভার বিভাগের কর্মী রঘুবংশ সত্যনারায়ণ রাওয়ের গলাতেও। তাঁর বক্তব্য, “রুইয়া আমাদের সঙ্গে জোচ্চুরি করেছে। হাইকোর্ট তো স্পষ্টই সে কথা বলেছে। এখন মনে হচ্ছে দেরি হলেও টাকাটা পেয়ে যাব।” একই বক্তব্য রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কর্মী সুভাষচন্দ্র ভুঁইয়ারও। ব্যাগোমোটিভ বিভাগের শ্রমিক দেবকুমার সরকার ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে অবসর নিয়েছেন। এখনও অবসরকালীন ভাতা মেলেনি। একই অবস্থা ওটিআর বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সমর দাসেরও। হাইকোর্টের রায় শুনে দু’জনেরই প্রতিক্রিয়া, “আশ্বস্ত হলাম।”
হোস পাইপ বিভাগের কর্মী রামেশ্বর সিংহ বলেন, “আমার ৪ লক্ষ টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে। মালিকপক্ষ আমাদের খাদের কিনারায় এনে ফেলেছিল। এখন হাইকোর্টের রায়ে স্বস্তি পাচ্ছি। এই রায়কে স্বাগত জানাই।” তাঁর বক্তব্য, “আমরা চাই যাবতীয় বকেয়া মিটে যাওয়ার পরে ডানলপ কারখানার জমি শিল্পের কাজেই লাগানো হোক। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হোক।”
ডানলপের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থারই ১৪ জন কর্মী আজ, মঙ্গলবার থেকে আর কাজে আসবেন না। তাঁদেরই এক জনকে বলতে শোনা গেল, “এই দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পেলাম। রাত-বিরেতে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব আর সহ্য করা যাচ্ছিল না।” |
|
|
|
|
|