সম্পাদকীয় ২...
প্রহসনমাত্র
লনেত্রী যাহা বলিবেন, তাহার বাহিরে একটি শব্দও উচ্চারণ করা সম্ভবত তৃণমূল কংগ্রেসে নিষিদ্ধ। মন্ত্রীই হউন বা উপদেষ্টা, অথবা পরিষদীয় সচিব, সকলেই সমস্বরে গাহেন তোমারই ইচ্ছা করো হে পূর্ণ আমার জীবন মাঝে। শিল্প উপদেষ্টা সৌগত রায়, অতএব, তাঁহার প্রস্তাবিত শিল্পনীতিতে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাকেই শিরোধার্য করিয়াছেন। তবে, রাজ্যবাসীকে আশার ছলনায় ভুলাইবার পরিবর্তে সত্য কথাটি স্পষ্ট বলিয়া ফেলিবার জন্য তিনি কিঞ্চিৎ সাধুবাদ দাবি করিতে পারেন। তিনি বলিয়াছেন, বড় শিল্প যখন এই রাজ্যে আসিবেই না, তখন তাহার মুখ চাহিয়া থাকিবার আর অর্থ নাই। রাজ্য সরকার কুটির, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প লইয়া ভাবিবে। অর্থাৎ, আচার দেওয়া হইতে বিড়ি বাঁধা, এবং অতি অবশ্যই রবীন্দ্রজয়ন্তী মুখ্যমন্ত্রী বলিয়া দিয়াছেন, ‘শিল্প কাহাকে বলে’। কেন বৃহৎ বিনিয়োগ পশ্চিমবঙ্গে আসিবে না, সৌগতবাবু তাহাও বলিয়াছেন তাঁহাদের সরকার জমি দিবে না। অতএব, ক্ষুদ্রের সাধনাই চলুক। রাজ্যের শাসক দলের মন কোন পথে চলে, তাহা আরও এক বার প্রমাণ হইল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার রাজনৈতিক জীবনে বহু বার প্রমাণ করিয়াছেন, তিনি অর্থনীতি বুঝেন না। আজ তিনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হইয়াছেন বলিয়াই তাঁহাকে ওই দুর্বোধ্য বিষয়টি দখল অর্জন করিতে হইবে, এমন দাবি করা বোধ হয় অন্যায়। অর্থনীতি বুঝিলে তিনি হয়তো টের পাইতেন, শিল্পের প্রশ্নে তিনি এযাবৎকাল যত কথা বলিয়াছেন, তাহাতে হাস্যরসের উদ্রেক ভিন্ন আর কিছু হয় না। তাঁহার শিল্পের সংজ্ঞা আলোচনার অতীত। ‘যে কোনও পথেই কর্মসংস্থান করিবার’ যে দর্শন তিনি আমদানি করিয়াছেন, তাহাও প্রকৃত প্রস্তাবে অন্তঃসারশূন্য। তাঁহার জমিনীতিতে রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি সর্বনাশ হইতেছে। সৌগত রায়ের প্রস্তাব সেই সর্বনাশে সরকারি সিলমোহর লাগাইয়া দিল, ইহাই মাত্র। তাঁহারা এখন যে শিল্পের কথা বলিতেছেন, বৃহৎ শিল্প না থাকিলে তাহা কোন জমিতে দাঁড়াইবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মুখ্যমন্ত্রীর নিকট না থাকাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় কথা, যে কোনও শিল্পের জন্যই যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তাহার কোনও হদিশ এই রাজ্যে নাই।
নয়া শিল্পনীতির যে খসড়া সৌগত রায় প্রস্তুত করিয়াছেন, তাহা কবে প্রকাশিত হইবে জানা নাই। কিন্তু অনুমান করা চলে, রাজ্যের মূল সমস্যাগুলির সমাধানের কোনও ইঙ্গিত তাহাতে থাকিবে না। সমস্যা হইতে মুখ ফিরাইয়া রাখিবার যে বিপজ্জনক খেলাটি রাজনীতিকদের চিরকালই পছন্দ, পশ্চিমবঙ্গে তাহার চূড়ান্ত প্রদর্শন চলিতেছে। সৌগত রায় বৃহৎ বিনিয়োগের প্রশ্নে পূর্ণচ্ছেদ টানিয়া দিয়াছেন। তাহা হইলে আর শিল্পনীতির প্রয়োজন কী? তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থানের বিজ্ঞাপনের জন্য আর একটি সরকারি নথির দরকার নাই। জমির ব্যবস্থা যদি না-ই করা হয়, শুভেন্দু অধিকারীদের যদি না-ই নিয়ন্ত্রণ করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী যদি শিল্পের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন না হন, তবে শিল্পনীতির প্রহসনের কী দরকার?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.