সম্পাদকীয় ১...
বৃহত্তর স্বার্থ
তিস্তা নদীর জলবণ্টন লইয়া বাংলাদেশের সহিত ভারতের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি নীতিগত ভাবে স্বীকৃত হইয়াছে। এমন নয় যে, এই বণ্টন লইয়া দুই দেশের মধ্যে নীতিগত কোনও মৌলিক মতপার্থক্য ছিল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাহা থাকা সম্ভবও নয়। কোনও নদী যদি একাধিক সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভিতর দিয়া প্রবাহিত হয়, তবে সব দেশেরই তাহার জল পাইবার অধিকার আছে। একতরফা ভাবে কোনও দেশ অন্য দেশকে সেই অধিকার হইতে বঞ্চিত করিতে পারে না। তিস্তা যেহেতু ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দিয়া প্রবাহিত হইয়া বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়াছে, তাই সেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রকেও তাহার জল ব্যবহার করিতে দিতে হইবে। প্রশ্ন ছিল, কোন দেশ কতটা জল পাইবে, তাহা লইয়া। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের কৃষি তিস্তার জলের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হওয়ায় এ ব্যাপারে জলের বখ্রা লইয়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত দরকষাকষি বা দড়ি-টানাটানি স্বাভাবিক। ভারতের বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের ঢাকা সফরে স্থির হইয়াছে, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদের ভারত সফরের সময় এ সংক্রান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষর করিয়া ফেলা হইবে।
মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরকালে যে সংশ্লিষ্ট চুক্তিটি সম্পাদিত হইতে পারে নাই, তাহার কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি। আপত্তির কারণ রাজ্যের প্রাপ্য কিংবা বাংলাদেশকে দেয় জলের ভাগ তত নয়, যতটা তাঁহার সহিত আগাম পরামর্শ না করিয়া একতরফা ভাবে কেন্দ্রের চুক্তি লইয়া অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় সরকারের এই কর্মপদ্ধতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবিন্যাসের চলতি কাঠামো উপেক্ষা করিবার যে অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা লক্ষিত হয়, রাজ্যের তরফে তাহার প্রতিক্রিয়া অযৌক্তিক ছিল না। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ সে জন্যই তাঁহার চলতি সফরে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ও সেচে তিস্তার জলের প্রয়োজনের কথা এবং রাজ্যের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখও করিয়াছেন। একই সঙ্গে জলের বখ্রা সংক্রান্ত বিষয়টি যে মূলত পদ্ধতিগত খুঁটিনাটির অন্তর্গত, তাহার সহিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বৃহত্তর স্বার্থের যে কোনও বিরোধ নাই, তাহাও স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন। বস্তুত, ইতিপূর্বে ফরাক্কা ব্যারেজ হইতে গঙ্গার জল বণ্টন লইয়া দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাহাও নীতিগত স্তরেই সম্পাদিত হইয়াছিল, প্রাপ্য বা দেয় জলের ভাগ লইয়া খুঁটিনাটি বিষয়গুলি পরবর্তী কালে, ক্রমশ, ধাপে-ধাপে স্থির হইয়াছে। তিস্তার জলের ভাগ লইয়াও তেমনটাই ঘটিতে পারে।
বস্তুত, জলের ভাগ কে কত পাইবে, তাহারও কোনও অপরিবর্তনীয় কোটা থাকা সম্ভব নয়, নদীতে জলের প্রবাহের উপরই তাহা সর্বদা নির্ভর করিবে। তিস্তার বেলাতেই যেমন, নদী-বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্ষার সময় তিস্তার জল বাংলাদেশের দিকে ছাড়িয়া না-দিলে উত্তরবঙ্গের সংলগ্ন অববাহিকায় ভয়াবহ বন্যা-পরিস্থিতির অনিবার্য হইয়া ওঠার আশঙ্কা। শুখা মরসুমে আবার ছাড়া জলের পরিমাণ হ্রাস পাইতে বাধ্য। এ সবই কিন্তু জলবণ্টন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি, যাহা চুক্তি-সম্পাদনের পরেই ক্রমে নির্ণীত হইতে পারে, আগে নয়। তাই বাংলাদেশকে দেয় জলের ভাগ লইয়া আগে হইতেই কোনও হট্টগোল শুরু করিয়া দেওয়া বোধহয় বিচক্ষণতার কাজ হইবে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ইহাও উপলব্ধি করিতে হইবে যে, তিস্তার জলের সহিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কৃষি ও সেচের সমস্যাটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই বর্তমানে ভারতের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য মিত্ররাষ্ট্র। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, এমনকী মালদ্বীপের মতো দেশও ভারতকে চাপে রাখার কূটনীতি অনুসরণ করিয়া চলিয়াছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মৈত্রীর স্বার্থে অনেক রাষ্ট্রই নিজের স্বার্থত্যাগেও ইতস্তত করে না। বাংলাদেশের সহিত সুসম্পর্ক নিবিড় করিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাহার প্রাপ্য তিস্তার জল ছাড়িয়া দেওয়া ভারতের কর্তব্য। মুখ্যমন্ত্রী এই বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতটি বুঝিবেন কি? রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায় বা মর্যাদা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে তাঁহার অবস্থান অভিবাদনযোগ্য। কিন্তু বিবেচনাবোধের পরিচয় দিলে সেই অবস্থানের স্বীকৃতি বাড়িবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.