অ্যাম্বুল্যান্সের থেকেও জরিমানা নিল ট্রাফিক পুলিশ
যেন সেই বাঘের ‘শিকার’ ধরার গল্প। বাঘ আর মেষশাবক এসেছে একই জলাশয়ে জল খেতে। বাঘ হুঙ্কার দিয়ে বলল, মেষশাবক তার জল ঘোলা করেছে, তাই শাস্তি দিতে সে তাকে খাবে। ভয় থরহরিকম্প মেষশাবক বলল, সে মুখই দেয়নি জলে। তখন বাঘের যুক্তি, “তুই জল ঘোলা না করলেও তোর বাপ, ঠাকুরদা কেউ করেছে। তাই তোকে খাব।”
যাদবপুর কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি চিঠি পেয়ে গল্পের সেই মেষের মতোই থতমত খেয়ে যান। চিঠি এসেছে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক দফতর থেকে। তাতে লেখা ২০১২ সালের মে মাসে এই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স মহাত্মা গাঁধী রোড বা ডায়মন্ড হারবার রোডে সিগন্যাল ভেঙেছিল! তার জন্য জরিমানা দিতে হবে! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন, অ্যাম্বুল্যান্সকে আবার ট্রাফিক সিগন্যাল ভাঙার শাস্তি দেওয়া যায় নাকি! রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছতে হামেশাই সিগন্যাল ভাঙতে হয়। এখানে শাস্তি আসছে কোথা থেকে? তা ছাড়া, রাস্তার নামটিও তো নির্দিষ্ট বলা নেই! আর হঠাৎ ন’মাস পরেই বা এল কেন এই চিঠি?
ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদককে পাল্টা চিঠি দিয়ে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান যক্ষ্মা হাসপাতালের সুপার বিনয়রঞ্জন প্রধান। জরিমানা মকুব হল বটে, কিন্তু সঙ্গে ট্রাফিক থেকে আরও একটি চিঠি এল। তার বয়ান এই রকম ২০১২-এ না হোক, ২০০৮ সালের ৪ মার্চ, ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল এবং ২০১০ সালের ১ এপ্রিল ওই অ্যাম্বুল্যান্স শহরের কোনও তিনটি জায়গায় সিগন্যাল ভেঙেছে। প্রত্যেকটির জন্য একশো টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। বিভ্রান্ত, বিরক্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বার রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে ৩০০ টাকা তুলে অ্যাম্বুল্যান্সের সিগন্যাল ভাঙার জরিমানা দিলেন।
ক্ষুব্ধ সুপারের বক্তব্য, “আমাদের একটিই অ্যাম্বুল্যান্স। তাকে সর্বত্র ছুটতে হয়। কলকাতায় যা যানজট আর ঘনঘন সিগন্যাল, তাতে সব কিছু মানতে গেলে অনেক রোগী রাস্তাতেই মারা যাবেন। তা ছাড়া তিন বছর, চার বছর আগে কী হয়েছিল, কার মনে আছে? আমি স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি।”
মেডিক্যাল কলেজ থেকে মহকুমা হাসপাতাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরের ৩১৮টি অ্যাম্বুল্যান্স চলে। ব্লক স্তরে রয়েছে আরও ৪০০টি। স্বাস্থ্য দফতরের যানবাহন বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা পার্থসারথি পালের কথায়, “এই ভাবে তো জরিমানাতেই রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা বেরিয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমার কাছেও তিন-চার বার অ্যাম্বুল্যান্সের সিগন্যাল ভাঙার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়েছে। আমি পাল্টা চিঠি দিই। ওরা কথা বাড়ায়নি।”
কী বলছেন ট্রাফিকের কতর্রা? ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “সাধারণত অ্যাম্বুল্যান্সকে সিগন্যাল ভাঙার জন্য ধরা হয় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে চালকেরাও গোলমাল করেন। রোগী না থাকলেও রাস্তার ভুল দিক দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে যানযট বাড়িয়ে দেন। অনেকের বৈধ কাগজও থাকে না। তবে আমার মতে, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যাপারে ছাড় দেওয়া উচিত। আমরা সব ট্রাফিক গার্ডে সেই বার্তা পৌঁছে দেব।” প্রশ্ন উঠেছে, ’০৮-’০৯ সালের সিগন্যাল ভাঙার জন্য এখন জরিমানা করা হচ্ছে কেন? দিলীপবাবুর যুক্তি, “পুরনো খাতার রেকর্ড কম্পিউটারে ঢোকানো হচ্ছে। তখনই পড়ে থাকা কেসগুলি সামনে আসছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.