গার্ডেনরিচ-কাণ্ড ঘটিয়ে একতরফা ভাবে হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করতে চলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। সোমবার কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনেই তা মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কারণ, কলেজ সূত্রের খবর, ৩১টি আসনের জন্য টিএমসিপি-রই ৩৮টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বিরোধীদের একটিও জমা পড়েনি।
কলেজ নির্বাচনকে ঘিরে গোলমালের আশঙ্কা যে দিন সব থেকে বেশি থাকে, সেই মনোনয়ন তোলার দিনেই হরিমোহন ঘোষ কলেজে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল ঢিলেঢালা। গত মঙ্গলবার ওই কলেজের মনোনয়ন তোলার দিন রাস্তায় চলা খণ্ডযুদ্ধের আড়ালেই সেখানকার ছাত্র সংসদ কার্যত দখল করে নেয় টিএমসিপি। কারণ, ১৫৩টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ১৪৯টিই সে দিন তারা তুলে নেয়। বিরোধী ছাত্র পরিষদ নিতে পেরেছিল ৪টি। এ দিন তার একটিও জমা পড়ল না। অর্থাৎ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই কলেজের ছাত্র সংসদের দখল নিতে চলেছে। যদিও আপাতত এই ফল ঘোষণা করা যাবে না। কারণ, সরকার এ দিনই সব কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছ’মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে।
সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন অবশ্য কলেজের ভিতরে-বাইরে ছিল অস্ত্র হাতে পুলিশ, ছিলেন পুলিশের বড়কর্তারা। এমনকী র্যাফও। পুলিশের নিশ্ছিদ্র ঘেরাটোপেই নিশ্চিন্তে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন টিএমসিপি-র সমর্থকেরা। কর্তৃপক্ষই কি পুলিশকে কলেজে ডেকেছিলেন? কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজয় আচার্য বলেন, “আমি শুধু পুলিশকে বলেছিলাম উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।” |
হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে পুলিশি প্রহরা। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র |
কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে গোলমাল কী আকার নিতে পারে, গত মঙ্গলবারের ঘটনা তা দেখিয়ে দিয়েছে। এক দুষ্কৃতীর গুলিতে পুলিশকর্মীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। বস্তুত, কলেজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত হয়েছিল ১১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার রাতে। সেই রাতে বোমা বাঁধতে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিৎ-সহ তিন জন আহত হন। শনিবার হাসপাতালে জখম অভিজিৎ মারা গিয়েছেন।
অভিজিৎ ছাড়াও এই গোলমালে শাসক দলের বরো চেয়ারম্যান, তাঁর ছেলে ও শাগরেদদের সরাসরি জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় মুখ পুড়েছে সরকারের। জড়িয়ে পড়েছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নামও। রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলা এই ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি।
সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনে কলেজের ভিতর-বাইরে পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মনোনয়নপত্র তোলার দিনই নির্বাচনের ফলাফল মোটের উপরে বোঝা গিয়েছিল। সেই মনোনয়নপত্রগুলি জমা দেওয়ার জন্য এত নিরাপত্তার কী প্রয়োজন, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। ডিসি (বন্দর) ভি সলোমন নেসাকুমার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত কলেজের বাইরে উপস্থিত ছিলেন। কলেজের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও জমায়েত না করার জন্য সকাল থেকেই মাইকে প্রচার চালানো হয়। সলোমন পরে বলেন, “যত দূর সম্ভব নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই র্যাফ নামানো হয়েছে।”
কিন্তু কার্যত বিরোধীহীন নির্বাচনে ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনা ঘটবে কেমন করে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ। এসএফআইয়ের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের বক্তব্য, “যেখানে বাকিরা মনোনয়নপত্র তুলতেই পারেনি, সেখানে এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাদের জন্য, তা প্রশাসনই বলতে পারবেন।” ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচীর কথায়, “টিএমসিপি-র নিরাপত্তা ছাড়া পুলিশের সেখানে আর কী করার ছিল! ওই কলেজের অনেক টিএমসিপি সমর্থক ছাত্র পরিষদে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছিলেন। এই অন্তর্দ্বন্দ্ব যাতে কোনও গোলমালের হাত ধরে প্রকাশ্যে চলে না আসে, সে জন্যই এত আটঘাট বেঁধে নামা!”
যদিও টিএমসিপি এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, “ওই কলেজে ছাত্র পরিষদের হয়ে দাঁড়ানোর জন্য কেউ নেই। এই জন্যই ওরা মাত্র ৪টি মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছিল।” |