গার্ডেনরিচে হাঙ্গামার জেরে সদ্য অপসারিত পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে নিয়ে রাজ্য সরকার যে অযথা জটিলতা বাড়াতে চায় না, সোমবার তার প্রমাণ মিলেছে। এ দিনই তাঁর দু’মাসের ছুটি মঞ্জুর করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের আবেদনের ভিত্তিতেই ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশন’ বা ব্যবস্থা নেওয়ার পরে পচনন্দা নতুন পদে যোগ না-দিয়েই ছুটিতে চলে গেলেন। এটা ব্যতিক্রম বলেই কিছু স্বরাষ্ট্রকর্তার মত।
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, পচনন্দা আপাতত রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তার পদে যোগ দিচ্ছেন না। ব্যতিক্রম হিসেবে ওই পুলিশকর্তাকে যে-ভাবে ছুটি দেওয়া হয়েছে, তাতে তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির ছাড়পত্রও দেওয়া হতে পারে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই বিষয়ে জটিলতা বাড়াতে চাইছেন না বলে জানান স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। সেই জন্য প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে নতুন পদে যোগ দিতেও বাধ্য করানো হয়নি।
নিরাপত্তা অধিকর্তার কাজ হয় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার তদারক করা। অপসারিত পচনন্দা আপাতত ওই পদে যোগ না-দেওয়ায় নিরাপত্তা অধিকর্তা-পদের দায়িত্ব এখন অন্য কাউকে দেওয়া হবে। পচনন্দা ছুটি কাটিয়ে নতুন পদে যোগ দিতে পারেন বলে খবর। তবে অনেকেই মনে করেন, প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার আর এ রাজ্যেই থাকতে চান না। দু’মাস ছুটি কাটিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও চাকরিতে যোগ দিতে চান।
তাঁর শেষ পদের সমতুল কোন কোন পদে যোগ দিতে পারেন, দু’মাসের ছুটিতে পচনন্দা তার খোঁজখবর সেরে নিতে চান বলেই মহাকরণে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই সূত্রে বলা হয়েছে, পচনন্দা কেন্দ্রীয় সরকারের এসপিজি, বিএসএফ এবং সিবিআইয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এ বারেও ছুটির দু’মাসের মধ্যে তিনি কেন্দ্রের কোনও না কোনও এডিজি-পদে যোগ দিতে সক্ষম হবেন। তার জন্য রাজ্য সরকারের ছাড়পত্র প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী গত দেড় বছরে দু’-এক জন ছাড়া কোনও আইএএস বা আইপিএস অফিসারকেই দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র দেননি। তবে পচনন্দার ছুটির আবেদন পত্রপাঠ মঞ্জুর হওয়ায় তাঁকে সেই ছাড়পত্রও দেওয়া হতে পারে বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের খবর।
বদলির পরে নতুন পদে যোগ না-দিয়েই ছুটিতে যাওয়াটা কি ব্যতিক্রম? এটা কি শৃঙ্খলাভঙ্গের সমতুল?
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার মতে, সচরাচর এমন ঘটনা ঘটে না। সাধারণ ভাবে বদলির পরে নতুন পদে যোগ দিয়ে অনেকেই ছুটিতে গিয়েছেন, এমন নজির রয়েছে। কিন্তু নতুন পদে যোগ না-দিয়ে ছুটিতে চলে যাওয়ার নজির বেশি নেই। তবে এর মধ্যে শৃঙ্খলাভঙ্গের মতোও কিছু নেই।
বিরল হলেও এমন নজিরের কথা জানা গিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রেই। বর্তমান স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় টি বোর্ডের চেয়ারম্যান-পদ থেকে রাজ্য সরকারে ফেরার সময় একই ভাবে ছুটি নিয়েছিলেন। তিনি নতুন পদে যোগ দেওয়ার আগেই ছুটিতে গিয়েছিলেন এবং ছুটিটা নেন কেন্দ্রীয় সরকার থেকেই। পচনন্দার ক্ষেত্রে তেমনটাই হচ্ছে। শুধু কেন্দ্রের বদলে তিনি ছুটিটা নিলেন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। রাজ্যের দেওয়া নতুন পদে তিনি আপাতত যোগ দিচ্ছেন না। দু’মাসে কেন্দ্রের কোনও পদে বদলি নিশ্চিত করতে পারলে তিনি সেখানেই চলে যাবেন। এতে তেমন কোনও ব্যতিক্রমী কাণ্ড ঘটেনি, শৃঙ্খলাভঙ্গও হয়নি।
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী যদি পচনন্দাকে দিল্লি যেতে ছাড়পত্র দেন, সেটিই হবে তাঁর প্রতি রাজ্য সরকারের ব্যতিক্রমী আচরণ। গত দেড় বছরে এই ছাড়পত্র কার্যত বন্ধ আছে। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ছাড়পত্র পেলে বুঝতে হবে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রতি এখনও ‘সদয়’।
|