১০০ দিন কাজের প্রকল্পে টাকা তছরুপের অভিযোগে এক প্রকল্প সুপারভাইজারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মহম্মদবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় গত বছর অক্টোবরে ব্লক প্রশাসনের তরফে তৃণমূল প্রধান, পঞ্চায়েতের সহায়ক ও টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, একজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও বাকিরা এখনও পলাতক। ধৃত মহম্মদবাজারের লোহাবাজার সংসদের সুপারভাইজার সুষম মাহারাকে সোমবার সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েতের দশটি আসনের মধ্যে আটটি কংগ্রেস ও দু’টি সিপিএম জেতে। পরে কংগ্রেসের আট সদস্যই যোগ দেন তৃণমূলে। ফলে পঞ্চায়েতের দখল যায় শাসকদলের হাতে। ২০১১ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ওই পঞ্চায়েতের কাঁইজুলি, ফুল্লাইপুর, মহম্মদবাজার ও লোহাবাজার এই চারটি সংসদ এলাকায় ১০০ দিন কাজ প্রকল্পে চারটি পুকুর কাটা হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যেই ওই কাজে টাকা তছরুপ করা হয়েছে এই মর্মে জনৈক বাসিন্দা সংশ্লিষ্ট বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
মহম্মদবাজারের তৎকালীন বিডিও সুতীর্থ দাস অভিযোগের তদন্ত করে গত ১১ অক্টোবর মহম্মদবাজার থানায় পঞ্চায়েতের প্রধান মুক্তিরানি বাউড়ি, ওই সময় সচিবের দায়িত্ব সামলানো পঞ্চায়েতের সহায়ক রবীন্দ্রনাথ পাল, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিতাই মণ্ডল ও চারটি সংসদ এলাকার দশজন সুপারভাইজারের নামে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেন। বিডিও-র অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে কয়েক মাস আগেই পুলিশ চার্জশিটও দিয়েছে। সম্প্রতি অভিযুক্ত ১৩ জনের বিরুদ্ধেই জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে সিউড়ি আদালত। পুলিশের দাবি, তারপর থেকেই অভিযুক্তেরা পলাতক। যদিও এ দিনও ঘটনায় অন্যতম দুই অভিযুক্ত টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিতাই মণ্ডল ও কাঁইজুলির সুপারভাইজার মেহরুল আলি-র সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা গিয়েছে। নিতাইবাবুর দাবি, “ওই চারটি পুকুরে মাটি কাটার কাজ সন্তোষজনক হয়নি। এ কথা প্রধানকে লিখিত ভাবে জানিয়েওছিলাম। কিন্তু ওই প্রকল্পে কাজ করা দিনমজুরদের চাপে পড়েই পঞ্চায়েতের বোর্ড মিটিংয়ে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মজুরদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই প্রত্যেককে টাকাও মেটানো হয়। কিন্তু আমরা কোনও টাকা তছরুপ করিনি।” অন্য দিকে, মেহরুলবাবুরও দাবি, “আমরা আসলে ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার। এটা ঠিকই যে, সন্তোষজনক কাজ না হলেও মজুরদের চাপে পড়ে তাঁদের টাকা মিটিয়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু আমরা কোনও টাকা তছরুপও করিনি।” অভিযুক্ত প্রধান মুক্তিরানিদেবীর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।
মহম্মদবাজার ব্লকের বর্তমান বিডিও সুমন বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি পুলিশ দেখছে। তারাই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।” |