এক দিকে নায়িকাকে দেখতে জড়ো হওয়া ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ল মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের অস্থায়ী চালাঘর। তাতে তিন কিশোর-কিশোরী-সহ চারজন জখমও হল। আহতদের ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। অন্য দিকে, সেই একই নায়িকাকে দেখার জন্য সকাল থেকে ভিড় জমাল হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করেও নায়িকার দেখা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হল জনতা।
দু’টি ঘটনারই কেন্দ্র বিন্দুতে বাংলা চলচ্চিত্রের এক সম জনপ্রিয় নায়িকা তথা বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। সোমবার ঘটনাস্থল নলহাটি বিধানসভা এলাকার কুশমোড় ও রুদ্রনগর। এ দিন মুরারই থানার রুদ্রনগরে তৃণমূলের প্রচারসভায় মানুষ মূলত ভিড় করেছিলেন নায়িকাকে দেখবেন বলেই। কিন্তু দেবশ্রী রায় সভায় আসতে না পারায় রীতি মতন ক্ষোভ ছড়াল রুদ্রনগরের ওই সভায়। মঞ্চে বসে থাকা তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে বিরক্ত জনতার একটি অংশকে বলতেও শোনা গেল, “কাজে না গিয়ে এখানে এসে দিনটাই মাটি হয়ে গেল!” মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে যদিও বারবারই বলতে শোনা গেল, “দেবশ্রী খুব তাড়াতাড়ি এখানে এসে পৌঁছবেন। পথে আটকা পড়েছেন।” |
নলহাটিতে দেবশ্রী রায়ের রোড-শো।—নিজস্ব চিত্র। |
বস্তুত, স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা আগে থেকেই প্রচার চালিয়েছিলেন, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও এ দিনের সভায় থাকবেন দেবশ্রী রায়ও। ফলে প্রিয় নায়িকাকে কাছ থেকে দেখার জন্য রুদ্রনগর গ্রামের খেলার মাঠের সভাস্থলে নির্ধারিত সময়ের দু’-তিন ঘণ্টা আগে থাকতেই ভিড় জমতে শুরু করে। দুপুর ২টোর দিকে মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ছাড়ায়। পরে তা দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজারে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ধরে সভা চলতে থাকলেও শুভেন্দু ও বিশেষ করে দেবশ্রী উপস্থিত না হওয়ার জন্য মহিলা ও যুবকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে থাকে। বারবার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাইকে দর্শক-শ্রোতাদের ধৈর্য ধরে বসার অনুরোধও জানাতে থাকেন।
খোদ অনুব্রবাবুকে বারবার মাইকে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে দেখা গেল। কখনও বললেন, “দেবশ্রীকে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখেছেন, তাই দেরি হচ্ছে।” কখনও জানালেন, “কুশমোড় গ্রামে দেবশ্রীর গাড়ি খারাপ হয়ে পড়েছে।” শেষ দিকে তাঁকে এও বলতে শোনা গেল “পাশের গ্রাম সুহুদিঘিতে এসে পড়েছেন দেবশ্রী।” মাঝে সাড়ে চারটের দিকে এসে পৌঁছলেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। মাত্র দশ মিনিট বক্তৃতা দিয়ে তিনিও সেখান থেকে সরে পড়েন। একটা সময়ের পর এক তৃণমূল নেতাকে বাধ্য হয়ে ঘোষণা করতেই হল, “দেবশ্রী গুরুতর আহত হওয়ায় আসতে পারলেন না। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” নায়িকাকে দেখতে না পেয়ে জনতা কিন্তু চুপ ছিল না। হতাশ হয়ে এক মহিলাকেই বলতে শোনা গেল, “বোরো চাষের দিনমজুরি না খেটে দেবশ্রীকে দেখব বলেই এসেছিলাম। ২০০ টাকা মজুরিও গেল, নায়িকাকেও দেখতে পেলাম না।” কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলকেই একহাত নিয়ে বলে ফেললেন, “আপনারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করলেন।” পরে অবশ্য অনুব্রতবাবু সাংবাদিকদের সামনে দাবি করলেন, “দেবশ্রীর হাত ভেঙে গিয়েছে।” যদিও রাত পর্যন্ত দেবশ্রী রায়ের হাত ভাঙার কোনও খবর নেই। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করা গেলেও জেলার এক শীর্ষস্থানীয় তৃণমূল নেতার দাবি, “ওই সভায় কিন্তু দেবশ্রী রায়ের আসারই কথা ছিল না।”
|
|
|
ঘাসফুল শাড়ি |
মুরারইয়ের রুদ্রনগরে প্রচারসভায় তখন বক্তৃতা দিচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। মঞ্চের কাছেই হাজির তৃণমূলের ঘাসফুল ছাপ মারা শাড়ি পরা জনা কুড়ি মহিলাও। সেই দলের অন্যতম সদস্য মুরারই ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সেলের সভাপতি ফাল্গুনী সিংহ বললেন, “আসলে এখানকার মানুষ এখনও দিদির প্রিয় জোড়াফুল-ঘাসফুল প্রতীকের সঙ্গে ততটা পরিচিত হতে পারেননি। অনেকেই একে পদ্মফুলের সঙ্গে গুলি ফেলেন!” তাই স্থানীয় তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে তাঁরা দলবেঁধে ওই শাড়ি পরে সভায় এসেছেন। শুধু শাড়িই নয়, ওঅ মহিলারা দলীয় প্রতীক চিহ্ন আঁকা টুপিও পেয়েছেন। ফাল্গুনীরা এখন ভোটের এই কয়েকটা দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে দিদির প্রতীককে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান।
|
|
নলহাটিতে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক চট্টোপাধ্যায়ের প্রচারে এলেন
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
সোমবার সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি। |
রোড শোয়ের চাপে |
বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকা তথা তৃণমূলের বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের রোড শো। সেই রোড শো করতে গাড়িতে চড়ার জন্য খানিকটা রাস্তা পায়ে হেঁটেই যেতে হল তাঁকে। গতকালের বৃষ্টির কারণে সেই কাদা রাস্তাতেই হাঁটতে বাধ্য হলেন নায়িকা। রোড শোতে নায়িকাকে সঙ্গ দিলেন তৃণমূল সাংসদ চৌধুরীমোহন জাটুয়াও। নির্ধারিত সময়েরও প্রায় ৪০ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া এই রোড শোয়ের জন্য নলহাটি ঢোকার প্রধান সড়কটি ঘণ্টাখানেকের জন্য অবরুদ্ধই থাকল। আটকে পড়ে বিরক্ত এক বাসযাত্রীর টিপ্পনী, “রোড শো নয়, নেতাদের স্টেজ শো করা উচিত!” |
|