পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে তরুণী গাড়িতে উঠেছিলেন মাঝরাতে। নয়াদিল্লির বাসে ধর্ষণের ঘটনা যখন ঘটেছিল, তখনও বেশ রাত। ভরসন্ধ্যায় তরুণীকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হল দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে।
পুলিশের কাছে তরুণীটি অভিযোগ করেছেন, সোমবার সন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের উদয়শঙ্কর বীথির কাছে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে তিন দুষ্কৃতী। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি চোট পান। এর মধ্যে এলাকার লোকজন ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয়। পুলিশের টহলদার গাড়ি গিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করে। সিটি সেন্টারের একটি নার্সিংহোমে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর বাড়ি মালদহে। বেসরকারি সংস্থায় চাকরির কারণে থাকেন সিটি সেন্টারে কর্মরত মহিলাদের হস্টেলে। তাঁর অভিযোগ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ তিনি অফিস থেকে ফিরছিলেন। উদয়শঙ্কর বীথির কাছে একটি গাড়ি পথ আটকে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে তিন দুষ্কৃতী নেমে এসে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তারা টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকে। এতে তিনি অল্পবিস্তর চোট পান।
ইতিমধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসেন। বেগতিক বুঝে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তারাই তরুণীকে উদ্ধার করে সিটি সেন্টারে এক নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশের কাছে তিন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের বিরুদ্ধে অপহরণের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। দুর্গাপুর থানার ওসি দিব্যেন্দু দাস জানান, ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু পুলিশের কথায় নাগরিকেরা বিশেষ আশ্বস্ত হতে পারছেন না। বরং সন্ধ্যার ব্যস্ত রাস্তায় আচমকা এ হেন ঘটনায় অনেকেই বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। তৃণমূল বিধায়ক তথা দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ই এলাকার কাউন্সিলর। তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত। প্রশাসন উপযুক্ত তদন্ত করে কড়া ব্যবস্থা নিক।” তাঁর মতে, আশপাশের মানুষজন তরুণীর বিপদে যে ভাবে ছুটে এসেছেন তা প্রশংসার যোগ্য। বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে।
বিধাননগরের দ্য মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু আগে সিটি সেন্টারেই থাকতেন। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগের। পুরুষদের মতোই গভীর রাতেও মহিলারা একা চলাফেরা করতে পারবেন, এটাই কাঙ্ক্ষিত।” তাঁর আশঙ্কা, এই ধরনের ঘটনায় শহরের বাইরে থেকে আসা নার্স ও মহিলা চিকিৎসকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। প্রশাসন যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন তিনি। দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীও বলেন, “সিটি সেন্টারে বেশ রাত পর্যন্ত মহিলারা একা চলাফেরা করেন। এমন ঘটনা ঘটলে তা খুবই দুশ্চিন্তার। গা-ছাড়া মনোভাব ছেড়ে পুলিশ দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করুক।” |