এক সময়ের শক্ত ঘাঁটি বর্ধমানে সিপিএমের লাগাতার ‘শুদ্ধকরণ’ অভিযান চলছেই।
গত দু’মাসে শুধু দুর্গাপুরেই অন্তত ৪৮ জনের সদস্যপদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এ বার বহিষ্কার করা হল দুর্গাপুর (পশ্চিম) জোনাল কমিটি তথা সিটুর জেলা কমিটির সদস্য রক্তিম চৌধুরীকে। তাঁর বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন সম্পত্তি, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং অ-কমিউনিস্টসুলভ জীবনযাপনের অভিযোগ ছিল। সোমবার জেলা কমিটির বৈঠকে তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সমবায় সংস্থার কর্মী রক্তিমবাবু শুধু সিটুর বর্ধমান জেলা কমিটি নয়, গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্য কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন। সিপিএমের সদস্যপদ লাভ করেন নয়ের দশকের শেষ দিকে। গত দশকে বাম সরকারের শিল্পপ্রচেষ্টার সুবাদে যখন দুর্গাপুরের রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পাঞ্চল ও লেনিন সরণি এলাকায় একের পর এক বেসরকারি কারখানা গড়ে উঠছে, সিটু নেতা হিসাবে রক্তিমবাবু অন্তত তিনটি কারখানায় পাকা জায়গা করে নেন।
কিন্তু দলের কাছে অভিযোগও আসতে থাকে। যেমন শ্রমিক আন্দোলনের নামে পরোক্ষে ঠিকাশ্রমিক সরবরাহ করতেন রক্তিমবাবু। ঠিকাশ্রমিকদের কাজ পাইয়ে দিয়ে ‘কাটমানি’ও নিতেন। বেনামে ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গেও তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন। দুই ভাইকেও বেআইনি ভাবে ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন। রাজ্যের বাইরেও টাটানগর, ভুবনেশ্বর প্রভৃতি জায়গায় ঠিকাদারি ব্যবসাতেও যুক্ত ছিলেন। ব্যবহার করতেন দু’টি দামি গাড়ি। বছর কয়েক আগে সিটি সেন্টারের অন্যতম অভিজাত এলাকা ‘বেঙ্গল অম্বুজা’য় প্রাসাদোপম বাড়িও করেন।
সামান্য একটি সমবায় সংস্থার কর্মী হয়ে রক্তিমবাবুর কী ভাবে এত টাকা করলেন, তা নিয়ে বিরোধীরা বারবার সরব হয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অভব্য ব্যবহারেরও বহু অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকী দলেরই একাংশ এমন অভিযোগ করেছেন বারবার। সিপিএম নেতৃত্ব আগে সে সবে আমল দেননি। কিন্তু একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয় পরিস্থিতি পাল্টে দেয়।
বিধানসভা ভোটের পরেই এক লপ্তে অন্তত তিন হাজার কর্মীর দলীয় সদস্য পদ খারিজ করে দিয়েছিল সিপিএম। পরে জেলার আরও ১৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়। দুর্গাপুর পুরভোটে দায়িত্ব পালন না করে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার দায়ে গত বছর জুলাইয়ে বেনাচিতি লোকাল সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিবেকানন্দ হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বিনয় মণ্ডলকে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ডিপিএল এলাকার আরও ৪৮ জনের সদস্যপদ কাড়া হয়। এর মধ্যে ডিওয়াইএফ-এর জোনাল সম্পাদক ছাড়াও ছিলেন সিপিএমের এক শাখা সম্পাদক। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ছাড়াও উপদলীয় কার্যকলাপের অভিযোগ ছিল এঁদের বিরুদ্ধে।
এ দিন সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার জানান, দলীয় স্তরে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেই রক্তিমবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এত সময় লাগল কেন? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে অমলবাবু শুধু বলেন, “ধাপে-ধাপে সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তদেরই তাড়ানো হবে।” ফোনে বারবার চেষ্টা করেও রক্তিমবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এক বার ফোন ধরেও তিনি কেটে দেন। পরে ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। |