সফল অস্ত্রোপচার আরজিকরে
বিরল জটিলতা সত্ত্বেও সুস্থ সন্তান প্রসব বধূর
চিকিৎসকদের মতে যে রোগে আক্রান্ত হলে বেশি দিন বাঁচারই কথা নয়, সেই রোগে আক্রান্ত এক মহিলাই জন্ম দিলেন সুস্থ সন্তানের। আর এই ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করলেন কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁদের তত্ত্বাবধানেই হার্টের জটিল অসুখ ‘আইজেনম্যাঙ্গার সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত বছর বত্রিশের উমেহানি বিবির কোলে এখন খেলে বেড়াচ্ছে সুস্থ কন্যাসন্তান। শহরের চিকিৎসক মহল যে ঘটনাকে ‘বিরল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মানবদেহে কম অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বহন করে ‘পালমোনারি আর্টারি’। সেই রক্ত ফুসফুসে ঢুকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়ে চলে যায় ‘এওর্টা’য়। সেখান থেকে বিশুদ্ধ রক্ত সংবহন প্রণালীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বছর বত্রিশের উমেহানি বিবির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বাধা পাচ্ছিল। হৃৎপিণ্ডে জন্মগত ত্রুটি ছিল তাঁর। উমেহানির ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল ‘পালমোনারি আর্টারি’ ও ‘এওর্টা’র মধ্যে একটি অস্বাভাবিক সংযোগ। এই পরিস্থিতিকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ‘পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসিস’। চিকিৎসকেরা বলছেন, মায়ের জরায়ুতে থাকার সময়ে শিশুর ক্ষেত্রে ওই সংযোগ থাকে। জন্মের সাত দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় ওই নালীপথ। যদি কোনও কারণে এ রকম না হয়, তবে ছোটবেলায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয় নালীপথটি। উমেহানির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে তা বন্ধ হয়নি।
সাফল্য
জটিল অস্ত্রোপচারে সফল হল সরকারি হাসপাতাল।
অস্ত্রোপচার না করায় ‘পালমোনারি আর্টারি’ শক্ত হয়ে ভিতরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে ফুসফুসে যাওয়ার আগেই কম অক্সিজেন যুক্ত রক্ত ওই নালীপথের মাধ্যমে মেশে ‘এওর্টা’র অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তে। ফলে স্বাভাবিক গতিপথে না গিয়ে রক্তসঞ্চালন বিপরীত দিকে চলতে থাকে। এই পরিস্থিতিকে বলে ‘আইজেনম্যাঙ্গার সিনড্রোম’। এর কারণে সামান্য কাজও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় রোগীর ক্ষেত্রে। যে কোনও অস্ত্রোপচার, অ্যানাস্থেশিয়াও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন উমেহানি। সামান্য হাঁটাহাঁটি, কথাবার্তাতেই হাঁফিয়ে উঠতেন। পরিবারের দাবি, তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু ত্রুটি যখন ধরা পড়ে, তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, এর কোনও চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। এমনকী বিয়ে করতে কিংবা সন্তান ধারণেও উমেহানিকে নিষেধ করা হয়।
পারিবারিক অনটন আর সামাজিক চাপে বছরখানেক আগে উমেহানি বিয়ে করেন পেশায় রাজমিস্ত্রী দিলাবর শেখকে। সন্তানসম্ভবা উমেহানি ৩৬ সপ্তাহে ভর্তি হন আরজি করে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুবীর ভট্টাচার্য, অ্যানাস্থেটিস্ট বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার’ বিশেষজ্ঞ সুগত দাশগুপ্ত-সহ একটি চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ওই বধূর প্রসব করানো হয় এ মাসের গোড়ায়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সুস্থ রয়েছে মা-সহ কন্যাসন্তানটি।
আরজিকরের ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগীর দাবি, “গত বছরে এই হাসপাতালেই শুধু প্রসব হয়েছে ২০,৮০০টি। সীমিত পরিকাঠামো নিয়েও চিকিৎসকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এটা সত্যি বড় সাফল্য।” উমেহানির ঘটনা যে বড় ধরনের সাফল্য, তা মানছেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বকেশ মজুমদার। তাঁর মতে, “‘আইজেনম্যাঙ্গার সিনড্রোম’-এর রোগী এত দিন বাঁচাটাই দুর্লভ। সেখানে সফল ভাবে মা হতে পারা সত্যিই অভাবনীয়।” হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অশোক কর বলছেন, “যে কোনও অবস্থাতেই এমন রোগীর সফল অস্ত্রোপচার চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য।”
এ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহাল ছবিটাই বার বার সামনে আসে। উমেহানির এই অভিজ্ঞতা সেখানে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বলে মানছে চিকিৎসক মহল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.