সম্পাদকীয় ১...
অকর্মের সংস্কৃতি
লিকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি তাঁহার এই পদে আসিয়াছেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই রাজ্যবাসীর মানসিকতায় আলস্য, কর্মহীনতা ও ছুটি উপভোগের প্রতি তীব্র আকর্ষণের বিষয়টি তিনি ধরিয়া ফেলিয়াছেন। হয়তো কিছুটা শোনা কথার ভিত্তিতে, কিছুটা নিজ অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝিয়া গিয়াছেন, যাহাদের মনের মধ্যে বন্ধ-অচলাবস্থার সংস্কৃতি বাসা বাঁধিয়াছে, আইনি নির্দেশ বা কড়াকড়িতে তাহারা কর্মসংস্কৃতির পথে ফিরিবে না। এই প্রত্যাবর্তন সম্ভব কেবল অন্তরের তাগিদে, মনের ভিতর হইতে আসা তাড়নায়। তাই চলতি মাসে পর-পর দুই দিন ডাকা বন্ধ বাতিল করার আবেদনের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতির মন্তব্য আদালত একক প্রচেষ্টায় কর্মসংস্কৃতি ফিরাইয়া আনিতে পারে না।
বস্তুত, আদালত বরাবরই বন্ধ-ধর্মঘট-হরতালের মতো কর্মনাশা আন্দোলনের বিরোধিতা করিয়া আসিয়াছে। রাজনৈতিক দলগুলি যে-ভাবে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য কথায়-কথায় ধর্মঘট-হরতাল ডাকিয়া দেয়, তাহার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আইনি অনুমোদন নির্বাচিত সরকারগুলি আদালতের কাছ হইতেই পাইয়াছে। কেরল, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে আদালত এই মর্মে আপন সুচিন্তিত মতামত জানাইয়াছে। বিচারপতিদের সেই মতামত জনসাধারণকে অংশত কর্মহীনতার সংস্কৃতির কুফল সম্পর্কে সচেতন করিয়াছে, ইহাতে সংশয় নাই। কিন্তু বন্ধ-ধর্মঘটের কর্মসূচি উপেক্ষা করিয়া জনসাধারণের কাজে যোগ দিবার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করিতে মুখ্য ভূমিকা থাকা উচিত যে প্রশাসনের, সেখানেই গলদ থাকিয়া গিয়াছে। প্রায়শ দলীয় সরকারের প্রশাসন দলের ডাকা বন্ধ ব্যর্থ করার কোনও সক্রিয় চেষ্টাও করে নাই। যেখানেই ইহার ব্যত্যয় ঘটিয়াছে, সেখানেই কিন্তু কর্মহীনতার সংস্কৃতিকে পরাস্ত করিতে ইচ্ছুক কর্মীরা তৎপর হইয়াছেন। দৃষ্টান্ত: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসিত পশ্চিমবঙ্গ। একদা তিনি নিজে অসংখ্য কর্মনাশা অরাজকতার আবাহনকারী হইলেও ক্ষমতাসীন হওয়ার পরমুহূর্ত হইতে তাঁহার কঠোর বন্ধ-বিরোধী অবস্থান এবং রাজ্য প্রশাসনের সেই অবস্থান অনুযায়ী গৃহীত বন্দোবস্ত কর্মসংস্কৃতির আবহ সৃষ্টিতে সহায়ক হইয়াছে। এই রাজ্যে শ্রমদিবস নষ্ট হওয়ার হার অনেকটা হ্রাস পাইয়াছে। সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক-অধ্যাপকরা বন্ধ-এর দিনেও কর্মস্থলে হাজির হইতে প্রয়োজনে আগের দিন বিছানাপত্র লইয়া রাত কাটাইতে অফিসে চলিয়া আসিতেছেন।
এই নূতন মানসিকতাও কিন্তু ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। এবং ইহা সম্ভব হইয়াছে প্রথমত আদালতের সহায়ক ভূমিকার কারণে। বিচারপতিরা সর্বত্রই কাজ করিতে ইচ্ছুক কর্মীদের পাশে দাঁড়াইয়া প্রশাসনকে তাঁহাদের কাজে যোগদানের অধিকার নিশ্চিত করিতে বলায় প্রশাসনও রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করিতে সাহসী হইয়াছে। প্রশাসনকে গায়ের জোরে ইচ্ছুক কর্মীদের কর্মস্থলে আনিতে হইবে না, গায়ের জোরে যাহারা ইচ্ছুক কর্মীদের কাজে আসিতে দেয় না, তাহাদের নিরস্ত করিতে হইবে। তাহার পাশাপাশি, অনুপস্থিত থাকিলে বেতন কাটার কিংবা চাকুরিতে ছেদ ঘটানোর কিংবা চাকুরির মেয়াদ হ্রাসের যে সকল আইনি পদ্ধতি রহিয়াছে, দৃঢ়তার সহিত সেগুলি অনুসরণ করাও দরকার। তাহা হইলেই দেখা যাইবে, ইচ্ছুক কর্মীদের সংখ্যা জ্যামিতিক প্রগতির হারে বাড়িতেছে এবং অধিকাংশ মানুষই প্রধান বিচারপতির ভাষায় কাজে যোগ দিবার জন্য ‘অন্তরের তাগিদ অনুভব’ করিতেছেন। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে উপর্যুপরি দুই দিনের কর্মনাশা বন্ধ যে এক দিনে নামিয়া আসিয়াছে, তাহার পিছনেও কিন্তু কেবল ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা’ই একমাত্র কারণ নয়, প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের প্রভাবও অস্বীকার করিলে ভুল হইবে ধর্মঘটের আয়োজকরা স্পষ্টতই প্রশাসনের তীব্র বন্ধ-বিরোধিতায় প্রমাদ গনিয়াছেন। আশা, এই ভাবেই রাজ্যবাসীর মনে বাসা বাঁধা ছুটি উপভোগ ও আলস্যের সামূহিক উদ্যাপনের বন্ধ-সংস্কৃতি হইতে মুক্ত হইবে, তাহার স্থান লইবে কর্মসংস্কৃতি। সেটা রাতারাতি হওয়ার নয়, ইহা যেমন সত্য, তেমনই সত্য হইল, সেটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেও হওয়ার নয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে, বিশেষত ইচ্ছুক কর্মীদের সচেতন প্রচেষ্টা চালাইতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.