তিস্তা চুক্তি এ বছরেই, হাসিনার মেয়েকে বার্তা সনিয়া-প্রণবের
বছরের মাঝামাঝি নাগাদ তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে ভারত সরকার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সাইমা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে গত কাল সনিয়া গাঁধী এই খবর জানিয়ে দিয়েছেন। পুতুলকে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। অর্থাৎ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের এই আমলেই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে মনমোহন সিংহের সরকার।
একটি অনুষ্ঠানে নয়াদিল্লি এসে সোমবার ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনার কন্যা পুতুল। সনিয়া তাঁকে আবারও বলেন, তিস্তা চুক্তি করতে বদ্ধপরিকর ইউপিএ সরকার। নানা কারণে ঢাকাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখা যায়নি। কিন্তু আর বিলম্ব না করে কয়েক মাসের মধ্যেই ভারত সরকার এই চুক্তি সম্পাদন করতে চায়। প্রণববাবুও পুতুলকে একই আশ্বাস দিয়েছেন বলে রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের খবর।
শেখ হাসিনার কন্যা পুতুল
চলতি মাসেই ঢাকা যাবেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তার পর মার্চে রাষ্ট্রপতি প্রণববাবুরও সে দেশে যাওয়ার কথা। এই দুই সফরের পরে ভারত সফরে আসার কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, তখনই তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে দু’দেশের মধ্যে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি করে ফেলার চেষ্টা চলছে। তবে, জল বণ্টনের পরিমাণ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে হেতু এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি, তাই চুক্তি পত্রে এই বিষয়টি উহ্য রাখা হবে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, গঙ্গা চুক্তির সময়েও জলের পরিমাণের বিষয়টি পরে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়েছিল। সুতরাং তিস্তার ক্ষেত্রেও বিষয়টি নিয়ে পরে আলোচনা সম্ভব। মন্ত্রকের বক্তব্য, চুক্তিটি নিয়ে টালবাহানা চললে বাংলাদেশে কিছু ভারত-বিরোধী শক্তি নানা ধরনের অপপ্রচার করতে পারে। শেখ হাসিনার সরকারও তাতে বিপাকে পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য তিস্তা চুক্তিটি সেরে ফেলা।
তিস্তা চুক্তি রূপায়ণে প্রধান অন্তরায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি। প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে চুক্তি করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে মমতার আপত্তিতে পিছিয়ে আসেন। তিস্তা চুক্তি যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচিতে ওঠে, প্রণব মুখোপাধ্যায় তখন অর্থমন্ত্রী। তৃণমূল তখনও ইউপিএ-র অন্যতম প্রধান শরিক। তাদের বিরোধিতায় সে সময়ে মন্ত্রিসভায় ওই চুক্তি পাশ করানো যায়নি। কিন্তু তৃণমূল এখন ইউপিএ-র বাইরে। ঢাকা বরাবর দিল্লির উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে, যাতে প্রতিশ্রুতি রেখে মনমোহন সরকার অবিলম্বে তিস্তা চুক্তিটি সম্পাদন করে। এ বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে নির্বাচন। পরের বছরের মাঝামাঝি ভারতে লোকসভা নির্বাচন। বিদেশ সচিব রঞ্জন মাথাই সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে এসেছেন। বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্তাদের সূত্রে খবর, মাথাইও তাঁদের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই তিস্তা চুক্তিটি হয়ে যাবে।
এর পর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ দু’দিনের সফরে ঢাকা যাচ্ছেন। ওই সফরেও তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। তার পর মার্চে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকা যাচ্ছেন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সলমন ও প্রণববাবু দু’জনেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রণববাবুর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একটি বিশেষ সম্মান দেওয়ারও পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রণববাবুর হাতে সেই বিশেষ সম্মান তুলে দেওয়ার কথা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির।
বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, তিস্তা চুক্তি করতে রাজ্য সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে মমতার সঙ্গে বার বার আলোচনা করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা টি কে এ নায়ার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ নানা স্তরে মমতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, এই চুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গ কোনও ভাবেই তার প্রাপ্য জল থেকে বঞ্চিত হবে না।
শেখ হাসিনার বিশেষ ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখিকা বেবি মাওদুদও মমতার সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে মমতা ওই চুক্তিতে রাজি হন। মহাকরণে এসে মমতাকে বোঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি। এমনকী কলকাতায় এসে মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনও মমতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের যা অবস্থান, তাতে নিরাপত্তার কারণেই প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ভাল সম্পর্ক রাখাটা জরুরি।
কয়েক দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব সুশীলকুমার শিন্দে বাংলাদেশে গিয়ে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি করে এসেছেন। ওই চুক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একাধিক মহল সরব হলেও হাসিনা সরকার তাতে সবুজ সংকেত দেয়। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশ যখন ভারতকে সাহায্য করছে, তখন জলের ক্ষেত্রে ভারত কেন তাদের সাহায্য করবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কন্যা পুতুল অটিজম ও স্নায়ু সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি এসেছেন। কানাডার বাসিন্দা পুতুল অটিজম-এর উপর বাংলাদেশের জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা এবং অটিজম সংক্রান্ত একটি বেসরকারি সংস্থার প্রধান। কিছু দিন আগে তাঁর আমন্ত্রণে সনিয়া গাঁধী বাংলাদেশ অটিজম সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। দিল্লি থেকে ঢাকা ঘুরে পুতুলের কানাডা ফেরার কথা। বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, তিস্তা নিয়ে সনিয়া-প্রণবের এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি তাঁর মায়ের কাছে পৌঁছে দেবেন পুতুল। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, এটি আরও এক ধরনের কূটনীতি, যেখানে অরাজনৈতিক ভাবে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। পুতুল শেখ মুজিবর রহমানের নাতনি হওয়ায় ভারতের কাছে তাঁর আলাদা কদর রয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.