অর্থনীতির হাল ফেরা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দাবিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল শিল্প সূচক।
মঙ্গলবার কেন্দ্র প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিসেম্বরে (আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়) সরাসরি ০.৬% কমেছে দেশের শিল্পোৎপাদন। নভেম্বরের (সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী ০.৮%) পর এই নিয়ে টানা দু’বার। শুধু তাই নয় আশঙ্কা আরও উস্কে দিয়ে একেবারে হতাশাজনক ফল করেছে উৎপাদন ও খনন শিল্প। এই দুই ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়েছে যথাক্রমে ০.৭% ও ৪%।
তবে কিছুটা অবাক করে শিল্প সূচকের এই পতনের দিনেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুষড়ে থাকা শেয়ার বাজার। এর আগের টানা আটটি লেনদেনে ৫৪৫ পয়েন্ট পড়ার পর এ দিন সেনসেক্স উঠেছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ মূলত দু’টি। এক, পড়তি বাজারে কম দামে চুটিয়ে ব্লু-চিপ শেয়ার কেনায় মন দেওয়া। আর দুই, শিল্প সূচকের এই পতন বাজারের কাছে একেবারে অস্বাভাবিক না ঠেকা।
|
শিল্পোৎপাদন হ্রাস এ দিন বাজারকে সে ভাবে প্রভাবিত না করলেও, কাঁপুনি ধরিয়েছে শিল্পমহলের ভিতর। যে কারণে হাল শোধরাতে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে তারা। চেয়েছে শিল্পে প্রাণ ফেরাতে উচ্চ পর্যায়ের নজরদারি কমিটি গড়ুন মনমোহন সিংহ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মাঠে নামতে বলেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-ও।
গত শনিবারই চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাসকে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। দাবি করেছিলেন অর্থনীতিতে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। কিন্তু ডিসেম্বরে শিল্পের পরিসংখ্যান সেই আশার উপর জোরালো ধাক্কা কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বিশেষত, উৎপাদন শিল্পের সঙ্কোচন আদৌ ভাল লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
কিন্তু তেমনি অনেকেই আবার মনে করছেন, শিল্প সূচকের এই নেমে আসা একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয়। এর সঙ্গে সে ভাবে সরাসরি যোগাযোগ নেই অর্থমন্ত্রীর দাবিরও। কারণ, দেশের অর্থনীতির হাল বিগড়ালে চাহিদায় টান পড়ে। ফলে কল কারখানায় উৎপাদন ছাঁটাই করে বিভিন্ন সংস্থা। কমে যায় লগ্নির অঙ্ক। আর এই সব কিছুর প্রভাবে মার খায় শিল্পোৎপাদন। কিন্তু এর সব কিছুই যে একেবারে সঙ্গে সঙ্গে ঘটে, এমনটা নয়। বরং বৃদ্ধির ঢিমেতাল বা মন্দার মতো পরিস্থিতির সম্পূর্ণ প্রভাব বোঝা যায় তার কিছু দিন পর। তাঁদের দাবি, ডিসেম্বরের শিল্প সূচকেও এই ছবি প্রতিফলিত হয়েছে। হয়তো সে কারণেই আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৬-৭% হবে বলে এ দিনও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন।
তবে এই যুক্তিতে ‘না ভুলে’ শিল্প অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে মূলধনী ও মধ্যবর্তী (ইন্টারমিডিয়েট) পণ্য উৎপাদন সঙ্কোচনের কথা। তাদের মতে, এই পণ্য লাগে অন্য পণ্য তৈরিতে। তাই এর উৎপাদন কমার মানে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার জায়গা পুরোদস্তুর বজায় থাকা। সেই কারণে আসন্ন বাজেটে নতুন করে করের বোঝা আর না চাপানোরও আর্জি জানিয়েছে তারা।
এর উপর আবার এ দিনই কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে জানুয়ারিতে আরও বেড়েছে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার। তা ছুঁয়েছে ১০.৭৯%। ফলে চাইলেও আগামী দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে ফের সুদ কমানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে এখন চিন্তিত অনেকেই। |