পনেরো সেকেন্ড। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ওই এক পলক। তাঁর গুলিতেই নিথর বিশ্বের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি ওসামা বিন লাদেন। বছর দু’য়েক হতে চলল অ্যাবটাবাদে লাদেনের ডেরায় মার্কিন বিশেষ বাহিনী সিলের হামলার। এত দিন বাদে তা নিয়ে মুখ খুললেন ওসামা নিধনের মূল কাণ্ডারী। নাম গোপন রেখে তাঁর সাক্ষাৎকার বেরোল মার্কিন পত্রিকায়।
২০১১-র ২ মে। বিন লাদেন রয়েছেন বাড়িরই চার তলার ঘরে। নিশ্চিত হয়ে সবুজ সঙ্কেত দিলেন এক মহিলা সিআইএ এজেন্ট। ওই সেনার কথায়, ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরেই খোঁজ মেলে আল-কায়দা প্রধানের। দরজার সামনেই মার্কিন সেনা দেখে কিছুটা হতচকিত। ওসামাকে দেখে অবাক হয়েছিলেন সেনারাও। লম্বায় তাঁকে যতটা ভেবেছিলেন তার চেয়েও বেশ কিছুটা লম্বা ছিলেন বিন লাদেন।
বিশেষ চশমা থাকায় অন্ধকার ঘরেও তাঁর দেখতে অসুবিধে হয়নি, জানিয়েছেন সিলের ওই সেনা। ঘরে ঢুকেই চোখ স্থির করে নেন তাঁর নিশানায়। বিন লাদেনের সঙ্গে ওই ঘরে ছিলেন তাঁর ছোট স্ত্রীও। শেষ সময়ে সেনার সামনে স্ত্রীকেই ঢাল করে দাঁড়ান আল-কায়দা প্রধান। হাতের নাগালে রাখা ছিল একটা বন্দুকও। বন্দুকটা নিতে সামনে এগিয়েওছিলেন। কিন্তু এত সময় তো তাঁকে দেওয়া চলবে না। ভাবা মাত্র ট্রিগার টেপেন তিনি। নিখুঁত নিশানায় ওসামার মাথা লক্ষ্য করে। পর পর দু’বার। বিছানার সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বিশাল শরীরটা।
ট্রিগার টিপলেন আরও এক বার। শেষ বারের মতো। আবার সেই মাথা লক্ষ্য করেই। হাঁ করা মাথা থেকে ঘিলু ছিটকে এসে লেগে গিয়েছে চোখে মুখে। চোখের সামনেই বিন লাদেনের শেষ নিঃশ্বাস মিলিয়ে গেল বাতাসে। অপারেশন শেষ পনেরো সেকেন্ডেই।
ওসামার স্ত্রী তো ছিলেনই। তবে চটক ভাঙল আর এক জনের চিৎকারে, সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ওই মার্কিন সেনা। বিন লাদেনের ছোট ছেলে। বড় জোর দু’-তিন বছর বয়স তখন তার। চোখের সামনেই সে শেষ হয়ে যেতে দেখেছে তার বাবাকে। কিন্তু তাড়াহুড়ো আর উত্তেজনায় প্রথমে তাকে খেয়ালই করেননি কেউ। বাচ্চাটিকে শেষমেশ মায়ের কোলে তুলে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সিলের সেনারা।
গোটা অপারেশনে তাঁরা বেকায়দায় পড়েছিলেন এক বারই। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, অ্যাবটাবাদের বাড়িতে নামার জন্য যে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা। ওসামার ঘরে ঢোকার আগে শুনতে পান, ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তারই একটা। হয় গাড়ি চুরি করে পালাতে হবে অথবা পচতে হবে পাকিস্তানের জেলে বসে মাথার মধ্যে তখন এ সবই ঘুরছিল, জানান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত জালালাবাদের বেস ক্যাম্পে ভাল ভাবেই ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা।
ওসামা হত্যায় যাওয়ার আগে পর্যন্ত অবশ্য তাঁর বিশ্বাস ছিল না, বেঁচে ফিরবেন এ যাত্রা। তাই আগের দিন রাতে স্ত্রী আর সন্তানদের জন্য শেষ চিঠিও লিখে রেখেছিলেন। ‘সফল’ হয়ে ফিরে এসেছেন বটে। তবে তার সুফলের ছিটেফোঁটাও নিজের জীবনে আসেনি, তাঁর আক্ষেপ শুধু এটাই। চাকরি শেষ হওয়ার তিন বছর আগেই নিয়েছেন স্বেচ্ছা অবসর। জানান, “এক শুক্রবার অবসর নিলাম। সে দিন মাঝ রাত থেকেই থেমে গেল চিকিৎসার যাবতীয় পরিষেবা।” পরিবারের জন্য নিরাপত্তার বন্দোবস্ত থেকে পেনশন, কোনও কিছুতেই সরকারি সাহায্য পান না।
ওসামা হত্যা ঠিক ছিল না ভুল, উত্তর হাতড়াচ্ছেন এখনও। খালি মানেন, ওই এক মুহূর্ত মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে গোটা জীবনের। |