নলেন-সুবাসে মিঠে দেবী, ভয় পিঁপড়েকে
ছোট ঘরের আশপাশে ছেলে-বুড়োর জটলা। ঘর থেকে ভেসে আসছে নলেন গুড়ের সুবাস। ভিড় জমানোই সার, চেখে দেখার সুযোগ নেই। সন্দেশ দিয়ে যে মূর্তি তৈরি হচ্ছে। কয়েক কিলোগ্রাম সন্দেশে গড়া হচ্ছে বিদ্যার দেবীকে। সন্দেশেই শেষ নয়, কালনায় এ বার বাগদেবীর দেখা মিলবে চকমকে পাথরের আড়াল, অ্যাকোয়ারিয়ামের মধ্যেও।
সরস্বতী পুজো কালনায় সব থেকে বড় উৎসব। মহকুমার সর্বত্রই তিন দিন ধরে এই উৎসব চলে। এ বার মহকুমা জুড়ে পুজোর সংখ্যা হাজারেরও বেশি। অভিনবত্বে একে অপরকে টেক্কা দিতে মাস দুয়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। বড় বাজেটের পুজোগুলির বেশির ভাগই কালনা শহরের। সেখানে বিনা যুদ্ধে কেউ কাউকে জমি ছাড়তে নারাজ। তাই দর্শকের নজর নিজেদের দিকে টানতে তারা প্রায় কেউই এ বার মাটির প্রথাগত মূর্তির দিকে ঝোঁকেনি।
নলেন গুড়ের সন্দেশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।
কালনার লিচুতলা এলাকা থেকে কয়েক পা এগোলেই একটি গলিপথ গিয়ে মিশেছে রং পাড়ায়। পাড়ার দু’টি ক্লাব, সমাপ্তি সঙ্ঘ ও যুবশক্তি ক্লাবের মধ্যে সম্পর্কে সারা বছর এমনিতে তাপ-উত্তাপ নেই। তবে সরস্বতী পুজোর ময়দান যেন তাদের কাছে ‘ডার্বি ম্যাচ’। এ বার পাড়ায় ঢোকার মুখে ঝুলছে একটি রঙিন ব্যানার। তাতে জানানো হচ্ছে, সমাপ্তি সঙ্ঘের পুজোর ২৫তম বর্ষে আকর্ষণ সন্দেশের প্রতিমা। ব্যানারের অদূরেই মাথা তুলছে মণ্ডপ। সেখান থেকে কিছু দূরে একটি ছোট পাকা ঘরে সন্দেশ দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ করছেন বৃদ্ধ শিল্পী নীলকান্ত বালা। শুধু প্রতিমা নয়, দেবীর গয়নাও গড়া হচ্ছে সন্দেশ দিয়েই। সন্দেশ ফুরলেই উদ্যোক্তাদের তিনি পাঠাচ্ছেন ময়রার কাছে। নীলকান্তবাবু বলেন, “বছরখানেক আগে মূর্তি গড়ার কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ক্লাবের ছেলেরা গিয়ে ধরল, সন্দেশ দিয়ে প্রতিমা গড়ে দিতে হবে। আব্দার ফেলতে পারলাম না।” তিনি জানালেন, প্রতিমার জন্য দশ কিলোগ্রাম সন্দেশ লাগছে।উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিমার জন্য সন্দেশ আলাদা ভাবে বরাত দিতে হচ্ছে। ময়রাকে বলে দিতে হচ্ছে, সন্দেশ যাতে আঠালো হয়। তাতে দেড়শো টাকা কেজি সন্দেশ তিনশো টাকায় কিনতে হচ্ছে বলেও দাবি উদ্যোক্তাদের। ক্লাবের সদস্য প্রদীপ বারুই, দীপু মণ্ডল, শঙ্কর দাসেরা বলেন, “আমরা নানা উপকরণ দিয়েই প্রতিমা গড়ে থাকি। ২০১২ সালে কাজু-কিসমিস, ২০১১-তে মাখন, তার আগের বছর পাখির পালক দিয়ে মূর্তি তৈরি হয়েছিল। আশা করি এ বার সন্দেশের প্রতিমাও দর্শনার্থীদের ভাল লাগবে।”
অ্যাকুয়ারিয়ামে দেবী। রঙিন পাথরে সাজছেন সরস্বতী।
যুবশক্তি ক্লাবেও ব্যস্ততা তুঙ্গে। মোড়ে মোড়ে লাগানো হয়েছে রঙিন আলো। মণ্ডপে টেরাকোটার কাজ। মূর্তি তৈরি হচ্ছে চকমকে রঙিন পাথর দিয়ে। সে জন্য দিন-রাত কাজ করছেন কালনার একচাকা গ্রামের শিল্পী সুশান্ত কোলে। তিনি জানান, প্রতিমার কাজ শেষের পথে। প্রয়োজন হচ্ছে ছোট-বড় প্রায় পঞ্চাশ হাজার পাথর। রাতে প্রতিমার গায়ে আলো পড়লেই দর্শনার্থীরা পাবেন হিরের দ্যুতি, দাবি শিল্পীর।
গত বছর সরস্বতী পুজো মেটার পরপরই ফের প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েছিল কালনার সূর্য সমিতি। বছরখানেকের চেষ্টায় স্থানীয় শিল্পী সাধন দেবনাথ এই ক্লাবের জন্য শ্যাওলার প্রতিমা তৈরি করেছেন। প্রতিমা রাখা হচ্ছে একটি বড় অ্যাকুয়ারিয়ামে। দেবীর আশপাশে খেলে বেড়াবে রঙিন মাছ। সাধনবাবু বলেন, “সম্পূর্ণ নতুন এই ভাবনা আশা করি মানুষ পছন্দ করবেন।” শহরের লালবাগান পাড়ার রোহিণীতারা সঙ্ঘও এ বার প্রথাগত প্রতিমার পথে হাঁটেনি। দর্শকদের আকর্ষণ করতে দু’মিলিমিটারের প্রতিমা গড়েছে তারা। একটি মসুর ডালের উপরে তৈরি হয়েছে ক্ষুদ্র প্রতিমাটি। প্রতিমার সূক্ষ্ম্য কারুকাজ দর্শকেরা দেখবেন আতস কাচ দিয়ে। কালনার একশো আট শিবমন্দির লাগোয়া স্পুটনিক ক্লাবে আবার প্রতিমা হচ্ছে ঝামা ইটের। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যশিল্পে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ছাত্রী মৌমিতা মুখোপাধ্যায় পাঁচ ফুটের এই সরস্বতী তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, “মূর্তি তৈরি করতে লাগছে আড়াইশো ঝামা ইট।” প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। সমাপ্তি সঙ্ঘের সদস্যেরা অবশ্য খানিকটা শঙ্কায়। চার দিন-চার রাত সন্দেশের দেবীকে পিঁপড়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে তো, চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
—কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.