হুল্লোড়
অফিস প্রেমের ইতিকথা
শান্ত মনের কোণে তার ছায়া ঘোরাফেরা করে কাজের ফাঁকে ফাঁকে... প্রেম একেই বলে। অফিসও তার ব্যতিক্রম নয়। কখনও খুনসুটি, কখনও বা চুটিয়ে আড্ডা। তার মধ্যেই হঠাৎ করে ভাল লেগে গেল অফিসের তন্বী তরুণীটিকে। কিংবা মন-চুরি করা তরুণ-মুখের প্রেমে মজলেন। কখনও মুগ্ধতা, কখনও নীরবতা আবার কখনও অপলক দৃষ্টিতে শুধুই চেয়ে থাকা... সে যে পূর্বরাগের সূচনা। কখন যেন সব ভাললাগা অজান্তেই ভালবাসা হয়ে যায় নিজেও বুঝে ওঠা যায় না। তার পর পরস্পরকে জানা। আবেগে ভেসে যেতে মন চাইলেও লজ্জায় আর ভয়ে কেঁচো হয়ে থাকা। যতটা সম্ভব গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা দু’তরফেই। কিন্তু ওই যে কবি বলেছেন, গোপন কথাটি রবে না গোপনে। এ দিক সে দিক থেকে ভেসে আসে চাপা গুঞ্জন। করিডর-ক্যান্টিন বা বারান্দায় ফিসফাস, হাসাহাসি। খালি মনে হয় আপনার একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ নিয়ে চলছে বেদম খিল্লি। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একটু কৌশল আর বুদ্ধি করে চললেই সম্পর্ক বয়ে চলবে মনোমতো।
কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরোলেই পাজি
বছর দু’য়েক হল অফিসের প্রেম স্বমহিমায় উতরে বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছেন বোধিসত্ত্ব এবং দেবস্মিতা রায়চৌধুরী। দু’জনেই তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। তুখোড় পেশাদার। ইঁদুরদৌড়ের এই কঠিন সময়ে কাজে ডুবে থাকতে হত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাজ পেরিয়ে কারও সঙ্গে দেখা করার সময় কোথায়? তা এ হেন অস্থির চিত্তকে শান্ত করেছিল দু’জনার পরস্পরকে দেখা। “অফিসেই ওর সঙ্গে প্রথম দেখা। তারপর বন্ধুত্ব গড়িয়ে প্রেম,” জানালেন বোধিসত্ত্ব। অফিসে সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে অসুবিধের মুখে পড়তে হয়েছিল কি? স্পষ্ট জানালেন দেবস্মিতা, “ অফিসের কাজ তো মন দিয়েই করতাম। দেখা করতাম অফিসের বাইরে। আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে অফিসে গসিপ তৈরি হোক, সেটা একেবারেই কাম্য ছিল না।”
অফিসে অনেকেই জানতেন ওঁদের সম্পর্কের কথা। কিন্তু ভুলেও ওরা এমন কোনও আচরণ করেননি যাতে সকলের চোখ টাটায়। “হাত ধরা কিংবা ঘনিষ্ঠ কথাবার্তার মতো ব্যাপারগুলো তোলা থাকত অন্য সময়ের জন্য,” মুচকি হেসে জানালেন দেবস্মিতা।
গোপন কথাটি রইল গোপনে সঞ্চিতা বিশ্বাস কাজ করেন মুম্বইয়ের এক খ্যাতনামা পর্যটন সংস্থায়। তাঁরও অফিস-প্রেম চলে বেশ লুকিয়ে-চুরিয়ে। নিজে কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ। সম্পর্ক গড়েছেন অফিসেরই অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের শমিত সেনের সঙ্গে। তাঁদের প্রেমের বয়স এক বছর গড়িয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত অফিসে কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি তাঁদের সম্পর্কের কথা। বলছেন, “যতটা সম্ভব গোপনীয়তা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। কাজের জায়গায় কোনও ভাবেই যাতে ওকে অসুবিধায় না পড়তে হয় সেটা মাথায় ছিল সব সময়ই।” একসঙ্গে অফিস থেকে বেরোতেন না। আই কনট্যাক্ট যতটা পারতেন এড়িয়ে চলতেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতেও নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু আপডেট দিতেন না।
ডরনা মানা হ্যায় “অফিসে প্রেম করলেই যে লজ্জা কিংবা ভয়ে গুটিয়ে থাকতে হবে, এটা ভাবা ভুল। ভেবে দেখুন, আপনি ভালবেসেছেন, দোষ তো কিছু করেননি,” বলছেন কলসেন্টার-কর্মী শঙ্খনীল। তিনি বেশ মেনে চলেন এই ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যয়া’ নীতি। তিন বছর ধরে জমিয়ে প্রেম করছেন সহকর্মী সম্পূর্ণার সঙ্গে। ক্যান্টিন, স্মোকিং জোনে তো প্রেমপর্ব চলেই, এমনকী কনফারেন্স রুমেও পাশাপাশি না বসলে চলে না তাঁদের। অফিসের পরিবেশে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় না? অন্যান্য সহকর্মী বাঁকা চোখে তাকায় না? বললেন, “কুছ তো লোগ কহেঙ্গে। কেউ কিছু বললে হেসে উড়িয়ে দিই। আরে বাবা, প্রেমটা তো টেকাতে হবে।”
ভাবিয়া করিও প্রেম অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয় যে অফিস-প্রেম বেশি দিন টেকে না। পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র চুয়াল্লিশ শতাংশ অফিস-প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। তা ছাড়া বেশির ভাগ সম্পর্কই মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়ে।
সেই পরিস্থিতি কী ভাবে কাটিয়ে উঠবেন? অফিসে নিজেদের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হবে না তো? সম্পর্ক ভেঙে গেলে পুরোনো পার্টনারকে রোজ চোখের সামনে দেখতে হবে। সম্পর্কে যাওয়ার আগে তাই একুশ বার ভেবে নেওয়া উচিত।
কাল ভ্যালেনটাইন’স ডে। প্রেম দিবসের প্রাক্মুহূর্তে তাই মনের কথা প্রকাশ করে ফেলুন অফিসের তাকে। বেরিয়ে পড়ুন অভিসারে...
প্রেমতত্ত্ব
মুখ বুজে থাকুন। উত্তেজিত হয়ে পড়লেও বন্ধুস্থানীয় সহকর্মীকে ব্যক্তিগত কথা নাই বা জানালেন।
উল্টো দিক থেকে সবুজ সংকেত না পেলে চুপ করে যাওয়াই ভাল।
ডেট করে পছন্দ না হলেও একে অন্যের ব্যাপারে উল্টোপাল্টা রটিয়ে বেড়াবেন না।
বিবাহিত সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম না করাই উচিত।
প্রেম ভেঙে গেলে যত কষ্টই হোক না কেন চুপ করে থাকুন। আবেগের বশে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি করবেন না যাতে অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.