অবশেষে ‘মা’ পেল তিন মাসের সেই পিগমি হাতি।
গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার গুনুং রারা ফরেস্ট রিজার্ভে মায়ের মৃতদেহের পাশে তাকে দেখতে পেয়েছিলেন বন দফতরের কর্মীরা। শুঁড় দিয়ে মাকে জাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল সে। পরে চিকিৎসকরা জানান, শরীরে বিষক্রিয়ায় তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
সেই থেকেই বন দফতরের কর্মীদের কাছে রয়েছে সে। নাম রাখা হয়েছে ‘জো’। কিন্তু কর্মীদের শত আদর আর যত্নেও জো-র শরীর ক্রমেই ভেঙে যাচ্ছিল। তার মৃত্যুর আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরা। জো-কে উদ্ধার করা না হলে, হয়তো সে মায়ের পাশেই না খেতে পেয়ে মরে যেত। তা ছাড়া, ভয়ে, উত্তেজনায় ওজনও বেশ কমে গিয়েছিল। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, মায়ের দুধের সঙ্গে তার শরীরেও বেশ কিছুটা বিষ ঢুকেছিল।
এর পরেই জো-এর সঙ্গে দেখা হল বনদফতরের এক কর্মী অগাস্টিন ডেভিডের। জো-এর নতুন মা। |
তিন মাসের সন্তানকে মানুষ করতে আপাতত রাত জাগছে অগাস্টিন। দু’ঘণ্টা অন্তর অন্তর জোকে খাওয়ানো। তার পছন্দের মিল্কশেক বানিয়ে দেওয়া। জো-র খেলার সঙ্গীও অগাস্টিন। ‘লোক কাউই’ চিড়িয়াখানার বিশাল চত্বরটাতে তার সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলেন অগাস্টিন। এই খেলাটা জো-র খুব পছন্দ। ছোটাছুটি পর্ব চলে স্নানের সময়ও। জো-র একদম পছন্দ নয় স্নান করা। তাই খাঁচার মধ্যেই সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অগাস্টিন বলেন, “ওর পছন্দ, অপছন্দগুলো খুব স্পষ্ট।” আরও বলেন, “মানুষের বুড়ো আঙুল চুষতে খুব ভাল লাগে ওর একদম মানুষের বাচ্চার মতোই।”
আর একটা জিনিস চাই-ই চাই। সেটা হল ‘মনোযোগ’। ওর দিকে ঠিক মতো নজর না দিলেই মাকে গিয়ে নালিশ করতে দেরি করে না জো। গিয়েই পায়ের মধ্যে সজোরে লাথি। গর্বিত মায়ের বক্তব্য, “ও খুব কাজের, ছটফটে, আবার দুষ্টু।”
তবে, এত কিছুর পরও জো-কে নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না ডাক্তাররা। পশুচিকিৎসক ডায়ানা র্যামিরেজের কথায়, “বিপদ কেটে গিয়েছে এখনই এতটা নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব। অনেক সময়, হাতির ছটফটে ছানাকে দেখে মনে হয় সে ভালই আছে, কিন্তু হঠাৎ তার মৃত্যু হয়। আরও ছ’-সাত মাস কাটলে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। তবে হ্যাঁ, ওর বাঁচার সম্ভবনা যথেষ্টই রয়েছে।”
দুনিয়ার দুই তৃতীয়াংশ বোর্নিও পিগমি হাতির বাস মালয়েশিয়ায়। সেখানে গত এক মাসে বিষক্রিয়ার জেরে জো-এর মা-সহ ১৪টি হাতির মৃত্যুতে চিন্তিত বন্যপ্রাণী সংগঠনগুলি।
জো ভাল হয়ে গেলে তাকে একটা পার্কে পাঠানো হবে। তবে জো সেখানে একা থাকবে না। গুনুং রারা জঙ্গলে তারই মতো বাবা-মা-ভাইবোনকে হারিয়েছে আরও অনেকে। খুব শিগগিরি সেই বন্ধু-হাতিদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হবে জো-কে। |