|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
সুন্দরবনও কিন্তু এক জায়গায় নেই |
সুন্দরবনবিশেষজ্ঞ তুষার কাঞ্জিলাল প্রবন্ধে তিনটি অতি বেদনাময় গল্পের মাধ্যমে সুন্দরবনের হতাশাগ্রস্ত চিত্র এঁকেছেন (‘গ্রাম থেকে রাস্তায়, তার পর চাকার নীচে’, ৯-১)। তাঁর কথা অনুযায়ীই, গল্পগুলি অনেক দিন আগের। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের অজস্র নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। গোসাবা, সন্দেশখালি কিংবা হিঙ্গলগঞ্জের মতো কিছু অঞ্চল বিকাশের মাপকাঠিতে নিশ্চয়ই এখনও পশ্চাৎপদ। কিন্তু গত দশ থেকে পনেরো বছরে সুন্দরবনের দুর্বল পরিকাঠামোর লক্ষণীয় উন্নতি ঘটেছে। যেমন, সুন্দরবনের ঊনত্রিশটি ব্লকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিমি সব ঋতুতে ব্যবহারের উপযোগী রাস্তা, দুশোটির বেশি পাকা জেটি, ত্রিশটিরও বেশি ছোট-বড় সেতু নির্মিত হয়েছে। ফলে সুন্দরবনে উৎপাদিত দ্রব্য শহরের বাজারে আসতে পারছে। স্থানীয় বাজারগুলিও সমৃদ্ধ হয়েছে। সুন্দরবনের প্রান্তসীমার মানুষ একই দিনে মহকুমা, জেলা সদর বা শহর কলকাতায় এসে বাড়ি ফিরে যেতে পারছে। শিক্ষকশিক্ষিকারা কলকাতা থেকে গোসাবা, পাথরপ্রতিমার বিদ্যালয়ে নিত্যযাত্রী। কৃষি এবং বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নয়ন ঘটেছে। অনেক প্রত্যন্ত দ্বীপেও নদী অতিক্রম করে গ্রিড বিদ্যুৎ পৌঁছেছে।
তুষারবাবু প্রশ্ন তুলতে পারেন, এতে ‘শিবু’ কিংবা ‘বলাই’-এর কী লাভ? লাভ তো হয়েছেই। সুন্দরবনের গ্রামের দৈনিক মজুরির হার ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। মূলত এন আর ই জি এ’র কল্যাণে। কৃষিমজুরের অভাব এখনই কৃষিকাজে ছাপ ফেলছে। হয়তো বলা হবে, শ্রমজীবী মানুষ, মধ্যশিক্ষিত যুবক সুন্দরবন ছেড়ে কাজের খোঁজে বহির্মুখী। কিন্তু এটাই তো পরিবর্তনের অভিমুখ। কোনও অঞ্চলে নিজস্ব শ্রমশক্তি আত্তীকরণের যথেষ্ট ক্ষমতা সৃষ্টি না-হলে, শ্রমশক্তির বহির্গমন হতে বাধ্য।
প্রসঙ্গত, একফসলি কৃষিতে সুসংহত ব্যবস্থাপনা এবং বৈচিত্র এনে অতিরিক্ত শ্রমদিবস সৃষ্টি ও আয়বৃদ্ধি যে সম্ভব, সুন্দরবনের মথুরাপুর-১ ও ২, জয়নগর ১ ও ২, কুলতলি, পাথরপ্রতিমার মতো ছয়-সাতটি ব্লক তা প্রমাণ করে দিয়েছে। সীমিত সেচের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলের অনেকগুলি ব্লকে ২০-২৫ শতাংশ জমিতে একাধিক ফসলের চাষ হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অনাহারে থাকার দিনও এখন আর নেই। সরকারি কল্যাণে দ্বিপ্রাহরিক আহারের ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তা যতই অ-পর্যাপ্ত ক্যালরির হোক।
এখনও অনেক কাজ বাকি, নিশ্চয়ই। বলা যায়, একটা স্তরে আটকে আছে উন্নয়নের প্রক্রিয়া। এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রাকৃতিক কারণেই সুন্দরবনের সর্বত্র নগরজীবনের সমূহ বিস্তার অসম্ভব। পরিবেশগত কারণে সেটা কাম্যও নয়। এখানেই প্রকৃত চ্যালেঞ্জ। তুষারবাবুরা ভিন্নতর গ্রামীণ উন্নয়নের ধারা প্রবর্তনের সংকল্প নিয়ে অসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যা হয়েছে তাকে অস্বীকার না-করে শিবু, বলাই, হেঁকোদের প্রকৃত ভাল কী ভাবে করা যায়, তার দিকনির্দেশই তাঁর মতো বিশেষজ্ঞদের কাছে কাম্য।
সুভাষচন্দ্র আচার্য। সোনারপুর,
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
|
ছোট চাষির বিপদ |
অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন বলেছেন, হিমঘর চাই, রাস্তা চাই, বিদ্যুৎ চাই, তারও বেশি চাই কৃষি বিপণন। (‘ছোট চাষিদের নিজস্ব...’, ১৫-১) ছোট চাষিদের শোষণ ও বঞ্চনার মূলে আছে ত্রুটিপূর্ণ বিপণন। ভারতে কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থা কৃষিঋণের সঙ্গে যুক্ত। অতীতের মহাজন আজ নেই। আছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী, যাঁরা চাষিদের বীজ, সার ইত্যাদি দেন চড়া দামে এবং কৃষকের কাছে ফসল কেনেন বাজারের থেকে কম দামে। ছোট চাষি দু’দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এর প্রতিকার হতে পারে সমবায় কৃষিঋণ ব্যবস্থার দ্বারা। দেশে সমবায় আন্দোলনের প্রসার আশানুরূপ হয়নি। অথচ কৃষিঋণ ও কৃষিপণ্য বিপণনকে পৃথক করা না হলে ছোট চাষির অবস্থার উন্নতি হবে না। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হলে এই শোষণ ও বঞ্চনা হয়তো ঘটবে আরও বেশি, আরও নিপুণ ভাবে।
পঞ্চানন পাঞ্জা। গড়বেতা,
পশ্চিম মেদিনীপুর
|
কুকুর হইতে সাবধান |
সম্প্রতি কয়েকটি খবর ভাবিয়ে তুলল।
এক, রাজ্যের মুখ্যসচিবের পাড়ায় রাস্তার কুকুর ধরতে এসে ‘পশুপ্রেমী’দের কাছে বাধা পান পুরকর্মীরা।
দুই, দার্জিলিংয়ে ম্যাল-এর কাছে এক স্থানীয় বাসিন্দা রাস্তার কুকুরের বীভৎস কামড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
তিন, দার্জিলিংয়েই এক যুবককে কুকুরের দল ঘিরে ফেলে বীভৎস ভাবে কামড়ায়। এই দু’টি ভয়াবহ ঘটনার পরে বাসিন্দারা বলেন, “যাঁরা রাস্তার কুকুর ধরার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছেন, তাঁরা বরং শহরের ১০০০ পথ-কুকুরকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখুন এবং আমাদের বাঁচতে দিন।” অত্যন্ত সঙ্গত কথা। |
|
শহর মফস্সলের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য অভিযোগ আসছে যে, পথ-কুকুরের চিৎকারে সারা রাত ঘুমোনো যাচ্ছে না। যদিও মুম্বই হাইকোর্টের স্পষ্ট রায় (২০০৮) আছে, নাগরিকদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত করা মেনে নেওয়া যায় না। বাড়ির পোষা কুকুরের তারস্বরে চিৎকারও এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নিয়েও বছর কয়েক আগে একটা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় ছিল যে, বাড়ির পোষা কুকুর চিৎকার করলে বা অন্যের বাড়ির সামনে মলত্যাগ করলে, অবশ্যই স্থানীয় পুরসভার উপর তার দায় বর্তাবে। কারণ, তারাই লাইসেন্স ইস্যু করে।
স্বঘোষিত পশুপ্রেমীরা জানেন কি, বিদেশে কুকুর সংক্রান্ত অভিযোগ এলেই প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। কোথাও কোথাও ‘কুকুর-পুলিশ’ও আছে।
সবুজ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা-৩৯ |
|
|
|
|
|