|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
অজন্তা বসু (২৯) • মা (৫৮)
বেসরকারি সংস্থার কর্মী • শহরতলিতে নিজেদের বাড়ি • মা চাকরি করেন কিন্তু পেনশন নেই • অজন্তার লক্ষ্য,
৪০ বছরেই অবসর • বিয়েতে আগ্রহী নন আপাতত • ইচ্ছে, কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনা • পরে কোনও
কারণে কম বেতনের চাকরি করতে হলে, কী ভাবে টাকা জমাবেন, চিন্তা রয়েছে তা নিয়েও
|
নিট আয় (মাসে): ৩২,০০০ |
খরচ (মাসে) |
১০,০০০ |
লগ্নি (বছরে) |
সম্পদ |
পিএফ |
পিএফ |
১৮,০০০ |
২,৩৬,০০০ |
পিএফ (অতিরিক্ত) |
পিপিএফ |
১,২০,০০০ |
২,৪৫,০০০ |
পিপিএফ |
জীবন বিমা |
১,০০,০০০ |
৫০,০০০ (এককালীন) |
নগদ |
৪,০০,০০০ |
স্থায়ী আমানত |
৩,২০,০০০ |
অফিসে স্বাস্থ্য বিমা ২ লক্ষের |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
অজন্তার
জন্য লেখা শুরুর আগে একটা কথা বলতে চাই। অনেক সময়ই অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয় করতে গিয়ে আমরা বর্তমানের ছোট ছোট চাহিদাগুলির কথা মনে রাখি না। তাই সব সময়ই মিলিয়ে-মিশিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি লগ্নি করা উচিত। যাতে প্রয়োজনে তার কিছুটা ভাঙানো যায়।
অজন্তার বয়স কম এবং তিনি লক্ষ্যে স্থির। সেই অনুসারে সঞ্চয়ও শুরু করেছেন। তবে তাঁর বর্তমান সঞ্চয়ের বেশির ভাগটাই ঋণপত্র নির্ভর এবং সুরক্ষিত লগ্নি। সংস্থার পিএফ ছাড়াও তিনি প্রতি মাসে এই খাতে আরও ১০,০০০ টাকা লগ্নি করেন। সেটিও একাধারে দীর্ঘ মেয়াদি এবং সুরক্ষিত লগ্নি। কিন্তু আমার মতে তাঁর যা বয়স, তাতে একটু ঝুঁকি নিলে নিজের সঞ্চয় আরও বাড়াতে পারবেন।
কলকাতায় ফ্ল্যাট
অজন্তা কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান। যদি ধরে নিই তিনি বর্তমান বাড়ি বিক্রি করবেন না, তা হলে কিন্তু তাঁকে বেশ বড়সড় অঙ্ক লগ্নি করতে হবে।
বতর্মানে কলকাতায় প্রতি বর্গ ফুটের গড় দাম ৩,০০০ টাকা (বেশি দামি জায়গা বাদে)। তাই ২ বেডরুমের ১,০০০ বর্গফুট মাপের ফ্ল্যাট কিনতে তাঁর প্রয়োজন হবে ৩০ লক্ষ টাকা। গ্যারাজের জন্য ধরতে হবে আরও ২ লক্ষ। অর্থাৎ মোট লগ্নি ৩২ লক্ষ টাকা। রয়েছে রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদির খরচও।
হাতে থাকা নগদ ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে তিনি ডাউনপেমেন্টও করলেও তাঁকে গৃহঋণ নিতে হবে ২৬ লক্ষ টাকার। সে ক্ষেত্রে ১১ বছরের মাসিক কিস্তি দাঁড়াবে ২৮ হাজার টাকারও বেশি (যেহেতু তিনি ৪০ বছর বয়সে অবসর নিতে চান)। এই কিস্তি এখন অজন্তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
তা ছাড়া, প্রতিটি ব্যাঙ্কই ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকের টাকা ফেরতের ক্ষমতা যাচাই করে। সেই অনুসারেই ঋণের ঊর্ধসীমা ধার্য করে তারা। তাই এখন অজন্তার যা আয়, তাতে অতখানি ধার দিতে রাজিও হবে না ব্যাঙ্কগুলি। সুতরাং এক মাত্র উপায় অনেক বেশি অর্থ ডাউনপেমেন্ট করা। মায়ের সঙ্গে মিলে তা করতে পারলে ভাল। নইলে আপাতত এই পথে পা না বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
|
|
অবসর পরিকল্পনা
অজন্তা ৪০ বছরে অবসর নিতে চান। অর্থাৎ ১১ বছর সময় পাচ্ছেন অবসর পরিকল্পনা তৈরির জন্য। এখন তাঁর যা সম্পদ আছে, তার সঙ্গেই যদি লগ্নি করেন, তা হলে ২০২৪ সালে কত টাকা জমবে তাই দেখব।
১) তিনি প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা পিএফ দেন। আগামী ১১ বছর এই হারে পিএফ দিলে প্রায় ৩.২ লক্ষ টাকা জমবে (৮.২৫% সুদ ধরে)। একই হারে তাঁর সংস্থাও পিএফ দিলে জমবে আরও ৩.২ লক্ষ টাকা।
তাঁর পিএফ অ্যাকাউন্টে বর্তমানে ২.৩৬ লক্ষ টাকা রয়েছে। সেই টাকার উপরও ১১ বছর ধরে ৮.২৫% সুদ মিলবে। মোট হবে ৫.৬৫ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এই খাতে মোট সম্পদ
৩.২ লক্ষ+৩.২ লক্ষ+৫.৬৫ লক্ষ=১২.০৫ লক্ষ টাকা
২) ধরে নিচ্ছি পিপিএফ অ্যাকাউন্টটি তিনি ২-৩ বছর আগে শুরু করেছেন। ফলে এই অ্যাকাউন্টের মেয়াদও তাঁর অবসরের সময়ের কাছাকাছিই শেষ হবে। পিপিএফে এখন ২.৪৫ লক্ষ টাকা আছে। ১১ বছর পর সেই টাকার উপর ৮.৮% সুদ জমলে দাঁড়াবে প্রায় ৬.২ লক্ষ। অবসর পর্যন্ত প্রতি বছর ১ লক্ষ করে লগ্নি করলে প্রাপ্য দাঁড়াবে ১৮.৪৫ লক্ষ টাকা। সুতরাং পিপিএফে মোট সম্পদ ২৪.৬৫ লক্ষ।
৩) পিএফ-এ অতিরিক্ত টাকা না দিয়ে বরং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি শুরু করুন। ভাল হয় সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে (এসআইপি) লগ্নি করলে।
লগ্নির ধরন হওয়া উচিত
লার্জ ক্যাপ ডাইভার্সিফায়েড শেয়ার: ৫,০০০ টাকা
মিড ক্যাপ শেয়ার: ২,৫০০ টাকা
দীর্ঘ মেয়াদি ঋণপত্র: ২,৫০০ টাকা
এই বিনিয়োগ থেকে অজন্তার সম্ভাব্য প্রাপ্য অর্থ
ইক্যুইটি ফান্ড (শেয়ার): ২০ লক্ষ টাকা (৭,৫০০ টাকা প্রতি মাসে এবং বার্ষিক ১২% রিটার্ন ধরে)
ডেট ফান্ড (ঋণপত্র): ৫.২৫ লক্ষ টাকা (২,৫০০ টাকা প্রতি মাসে এবং বার্ষিক ৮% রিটার্ন ধরে)
অর্থাৎ এই খাতে মোট সম্পদ ২৫.২৫ লক্ষ টাকা। এই টাকা ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট কেনায় সাহায্য করতে পারে।
৪) অজন্তা এখনই বিয়েতে আগ্রহী নন। তাই আলাদা বিমার প্রয়োজন নেই। তবে এককালীন ইউলিপ প্রকল্পটি মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত ধরে রাখুন।
৫) স্থায়ী আমানতও চালিয়ে যান। ব্যাঙ্কে যে নগদ আছে, তার থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা জরুরি অবস্থার জন্য রেখে বাকিটা স্থায়ী আমানতে লগ্নি করতে পারেন। ১১ বছর পর পাবেন প্রায় ১৩.২ লক্ষ।
৬) অফিসের স্বাস্থ্য বিমা থাকলেও অজন্তার আলাদা মেডিক্লেম নেই। চাকরি ছাড়লে কিন্তু প্রয়োজন আলাদা বিমা। মায়ের বয়স হয়েছে। তাঁর জন্যও স্বাস্থ্য বিমা জরুরি।
অজন্তার জমা-খরচের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে তাঁর হাতে প্রায় ৩,৭০০ টাকা (বছরে প্রায় ৪৪,৪০০ টাকা) থাকে। সেই টাকা থেকেই স্বাস্থ্য বিমা করান। ৫ লক্ষ টাকা বিমার জন্য তাঁর নিজের প্রিমিয়াম পড়বে প্রায় ৫,৫০০ টাকা আর আলাদা ভাবে মায়ের ওই একই পরিমাণ বিমার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হবে ১৬,০০০ টাকা।
৭) এর পরও হাতে প্রায় ২২,৫০০ টাকা থাকছে। যা তিনি রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস প্রকল্পে লগ্নি করতে পারেন। যা শেয়ার বাজারে লগ্নির প্রথম ধাপ। এতে প্রথমবার কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন। তবে শুরুতে এই খাতে লগ্নি করে তার পর মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন। তা হলেই পাবেন ওই কর ছাড়। দ্বিতীয় বছর থেকে হয়তো কর ছাড়ের সুবিধা আর পাবেন না। কিন্তু শেয়ারে টাকা ঢালা চালিয়ে গেলে ১১ বছর পর প্রায় ৬ লক্ষ টাকা জমবে।
অতএব...
হিসাব অনুযায়ী, ১১ বছর পর অজন্তার ঋণপত্র ও শেয়ারে সম্পদের অনুপাত দাঁড়াবে প্রায় ৭০:৩০ (মিউচুয়াল ফান্ডের একটা অংশ ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে লগ্নি করা হয়েছে)। সব মিলিয়ে তাঁর মোট সম্পদ প্রায় ৮৩.৬৫ লক্ষ টাকা। ৪০ বছরে যা যথেষ্ট হলেও, তাঁর পর আরও জীবন পড়ে থাকবে, তাই বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লগ্নিও বাড়ান।
এ বার আসি চাকরি বদল প্রসঙ্গে। কম বেতনের চাকরিতে ঢুকলে খরচ কমাতে হবে। টান পড়বে লগ্নিতেও। তখন এই সম্পদ তৈরি অজন্তার পক্ষে সম্ভব হবে না। মূল্যবৃদ্ধির যা দৌড়, তা মাথায় রেখে বলতে পারি, চাকরি বদলালেও, বেশি বেতনের চাকরিতে ঢোকারই চেষ্টা করুন।
|
(প্রেরকের অনুরোধে নাম পরিবর্তিত) |
|
|
|
|
|