ফেসবুকের বিক্ষোভ দেশজুড়ে
গণজোয়ারের ঢাকা যেন তাহরির স্কোয়ার
জামাতে ইসলামির নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ারে যেন কায়রোর তাহরির স্কোয়ার হয়ে উঠেছে ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ার।
জামাতের হাঙ্গামা অগ্রাহ্য করে কাল বিকেলে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের শ’তিনেক ছাত্রছাত্রী যে অবস্থান শুরু করেছিল, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আজ সারা দিন সেখানে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অন্তত এক বার হলেও হাজির থাকার চেষ্টা করেছেন। বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও। জনপ্রিয় শিল্পী, নাট্যব্যক্তিত্ব, লেখকদের পাশাপাশি এসেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাও। মঞ্চ তৈরি করে দিন-রাত চলছে গান, নাটক, সিনেমা। সঙ্গে একাত্তরের পরিচিত রাজাকার নেতাদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান। সন্ধ্যা ৬টায় শাহবাগের মঞ্চ থেকে আজও সারারাত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার এখানেই মহাসমাবেশ হবে বলে জানানো হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, রাজশাহি, রংপুর, ময়মনসিংহেও অজস্র মানুষ গণহত্যার নায়কদের ফাঁসির দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
তাদের নেতাদের বিচার বন্ধের দাবিতে কাল বাংলাদেশ জুড়ে হাঙ্গামা চালানোর পরে আজও হরতালের ডাক দিয়েছিল কট্টর ইসলামি দল জামাতে ইসলামি। সকালে বেশ কিছু জায়গা থেকে তাদের ভাঙচুরের খবর এলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের জোয়ারে তাদের কর্মসূচি কার্যত ভেসে যায়। তার পরেও ঢাকা ও চট্টগ্রামে পুলিশের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বিজিবি-কেও মোতায়েন রাখা হয়েছে।
বিক্ষোভ ঢাকার রাস্তায়। ছবি: এপি।
জামাতের ভাঙচুরের ভয়ে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও লঞ্চ ও অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিক ভাবেই চলেছে। ঢাকায় শেয়ারবাজার, ব্যাঙ্ক ও বেশির ভাগ বাজার-দোকান খোলা ছিল। রাস্তায় ছিল প্রচুর রিকশা । তাহরির স্কোয়ারের মতো ঢাকার বিক্ষোভও কাল শুরু হয়েছিল ফেসবুক-টুইটারের মতো স্যোসাল সাইটগুলির প্রচারে। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের এই আন্দোলনই রাত গড়াতে পরিণত হয়েছে গণপ্লাবনে। মিরপুরের ‘কসাই’ কাদের মোল্লাকে প্রায় সাড়ে তিনশো খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেও ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। তার প্রতিবাদেই ক্ষুব্ধ মানুষ নেমে এসেছেন ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে। তাঁদের দাবি, গোলাম আজম, সাকা চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামি-র মতো গ্রেফতার হওয়া গণহত্যাকারীদের ফাঁসি দিতে হবে। গণসঙ্গীতের পাশাপাশি অবস্থানকারীদের জন্য চাঁদা তুলে খিচুড়ি রাঁধা হয়। কাল রাতেই বেশ কিছু বামপন্থী নেতা শাহবাগ স্কোয়ারে এসে বক্তৃতা দেন, আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন। সরকার-বিরোধী বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আন্দোলনকারী তরুণদের ‘এ যুগের মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যা দেন। তাঁর অভিযোগ, জামাত ও সরকারের বোঝাপড়ার কারণেই কাদের মোল্লাকে লঘু শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামি লিগের নেতারা সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে কাজ করছে। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানান, কাদের মোল্লার প্রাণদণ্ড না হওয়ায় সরকারও হতাশ। তবে সরকার ফাঁসি চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করছে। দুপুর থেকেই শাহবাগ স্কোয়ারের আন্দেলন ছড়িয়ে যায় দেশজুড়ে। অন্য শহরের পাশাপাশি ঢাকার অন্যত্রও শুরু হয় অবস্থান বিক্ষোভ। দেশ জুড়ে এই গণজোয়ারে জামাত যেমন কোণঠাসা, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বিএনপি-ও। খালেদা জিয়ার দল জানায়, তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.