এক বছরেই পুলিশের খাতায় লাফিয়ে বেড়েছে যৌন নিগ্রহ
র্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় এক বছরে লাফিয়ে বেড়েছে নারীদের প্রতি আক্রমণের অভিযোগ। এর মধ্যে ধর্ষণ যেমন আছে, রয়েছে অপহরণও।
কখনও অপরিচিত লোকের বিরুদ্ধে, কখনও আবার বাড়িরই গুরুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। স্ত্রীর প্রথম পক্ষের তিন বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টার অভিযোগে বুধবারই গ্রেফতার করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। তার বাড়ি মুর্শিদাবাদে হলেও ঘটনাস্থল কাটোয়া।
যদিও আগের অবিভক্ত জেলা এবং বর্তমানে আসানসোল-দুর্গাপুর মহকুমা বাদে শুধু গ্রামীণ এলাকা নিয়ে পুলিশ যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে গার্হস্থ্য হিংসা প্রায় আসেইনি। যত অভিযোগ হয়েছে, তার বাইরেও রয়ে গিয়েছে প্রচুর ঘটনা। সম্ভবত যে কারণে দু’বছরে একটিও ইভটিজিংয়ের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়নি, সাধারণ বুদ্ধিতে যা প্রায় অবিশ্বাস্য। সম্প্রতি রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সামনে ২০১১ ও ২০১২ সালের (জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) ওই পরিসংখ্যান পেশ করা হয়। যদিও মহিলা কমিশনের সদস্যারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
পুলিশের খাতায় যে সব অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে তা আবার বলছে, নির্যাতনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ২০১১ সালের তুলনায় পরের বছর ১১ মাসে বেশি ঘটনা ঘটেছে। যদিও ২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর বর্ধমান জেলা পুলিশ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। তার আগে অবিভক্ত জেলার ৩২টি থানা এলাকার অভিযোগ রিপোর্টে এলেও এলাকা ভাগের পরে শুধু গ্রামীণ ১৭টি থানা এলাকার ঘটনা তালিকাভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এলাকা যখন প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে, নথিভুক্ত অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে!
যা-ও বা অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, বিচার বা সাজা তত হয়নি। ২০১১ সালে যে চারটি গণধর্ষণের অভিযোগ হয়েছিল, তার মধ্যে তিনটির চাজর্র্শিট দিতে পেরেছে পুলিশ। ৪৭টি ধর্ষণের অভিযোগের মধ্যেও পাঁচটির ক্ষেত্রে চার্জশিট বা চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগের ৯টির কোনও কিনারা হয়নি এখনও। ১৩টি নারী অপহরণের মামলারও কিনারা হয়নি। ২০১২ সালের সাতটি গণধর্ষণের মামলার মধ্যে পুলিশের পরিভাষায় তিনটি এখনও ঝুলে আছে। ১৮টি ধর্ষণের মামলায় এখনও তদন্ত চলেছে। ধর্ষণের চেষ্টার ৩৩টি অভিযোগের কিনারা হয়নি। ১৫টি শ্লীলতাহানি ও ৩৮টি নারী অপহরণের মামলারও একই অবস্থা। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “দু’টি বছরেই ইভটিজিংয়ের কোনও অভিযোগ মেলেনি। তাই রিপোর্টে নির্দিষ্ট জায়গাটি খালি রাখা হয়েছে।”
বাকি সব অপরাধ এত বাড়ল কেন? পুলিশ সুপারের দাবি, অপরাধ তত বাড়েনি। কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেশি নির্যাতিতা মহিলা অভিযোগ জানাতে এগিয়ে আসছেন। আদালতে ধর্ষণের মামলা দায়ের হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে ধর্ষণের অভিযোগ তোলার প্রমাণও মিলেছে। এত মামলা ঝুলে আছে কেন? পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যা, “মামলাগুলি নানা কারণে পড়ে রয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে হয়তো ফরেন্সিক বিভাগ থেকে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট মেলেনি। কোনও ক্ষেত্রে আবার সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তারা পলাতক। তাই মামলার চাজর্র্শিট দেওয়া যায়নি। তবে আমরা থানাগুলির তদন্তকারী অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি, যে সমস্ত রিপোর্ট পেলে মামলায় চার্জশিট দেওয়া সম্ভব সেগুলি সংগ্রহে উদ্যোগী হতে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্যেও লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপহরণের ক্ষেত্রে অপহৃতার বয়সের প্রমাণপত্র না মেলার কারণেও অনেক মামলা বকেয়া পড়ে রয়েছে।”
২০১১ সালে ধর্ষণের যে ৪৭টি মামলা দায়ের হয়েছিল, তার মধ্যে তিনটি ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। ওই মামলাগুলিতে চার্জশিটের বদলে ‘ফাইনাল রিপোর্ট’ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে দায়ের হওয়া ধর্ষণের ৬৯টি মামলার মধ্যে ৫টি ক্ষেত্রেও দেওয়া হয়েছে ফাইনাল রিপোর্ট। জেলা পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয় দু’টি ক্ষেত্রে। যদি দেখা যায়, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ মিলছে না। অথবা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বর্ধমান আদালতের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, “থানায়-থানায় আদালতের নির্দেশে দায়ের হওয়া মামলার স্তূপ জমে রয়েছে। অন্যথায় ধর্ষণের নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা আরও বাড়ত। আদালত বহু ক্ষেত্রে ধর্ষণের মামলা দায়ের করে ঘটনাটির দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ সেই মামলাগুলি ফেলে রেখেছে দিনের পর দিন। পরে পুলিশ যখন মামলা দায়ের করছে, তত দিনে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ধর্ষিতাকে চাপ দিয়ে তিনি যাতে আর আদালতে না যান, অভিযুক্তেরা সে ব্যবস্থা করে ফেলেছে। তা ছাড়া ধর্ষণের মামলার ডাক্তারি পরীক্ষা সঙ্গে সঙ্গে না করলে ধর্ষণ প্রমাণে সমস্যা দেখা দেয়।”
পুলিশ সুপার অবশ্য দাবি করেন, “ধর্ষণের ঘটনা তো চেষ্টা করে ঠেকানো যায় না! তবে অভিযোগ পেলেই আমরা সঙ্গে-সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি।”
শাস্ত্রে বলে, ফলেন পরিচিয়তে...।

নারীই নিশানা
  ২০১১ ২০১২*
গণধর্ষণ
ধর্ষণ ৪৭ ৬৯
ধর্ষণের চেষ্টা ৪৭ ৮০
অপহরণ ৮২ ৯২
শ্লীলতাহানি ২১ ৪৮
ইভটিজিং
*জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.