নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মালদহর পুলিশ সুপার জয়ন্ত পালকে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার দুপুরে কমিশনের সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়। বুধবারই রাজ্যের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কাজও। মুর্শিদাবাদের রেজিনগর, বীরভূমের নলহাটি এবং মালদহের ইংলিশবাজার কেন্দ্রে এই উপনির্বাচন হবে। ইংলিশবাজার কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যেরই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। সম্প্রতি মালদহের জেলাশাসকের তরফে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয়। সম্প্রতি মালদহ বইমেলার মিছিল করা নিয়ে নানা মহল থেকে আপত্তি করা হয়। ওই মিছিল রোখার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, সঙ্গে সঙ্গেই নির্দেশ পালন করা হয়েছে। গোটা বিষয়টির ভিডিও পর্যন্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্রে দাবি। তবে জেলাশাসকের তরফে স্পষ্ট ভাবে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন অফিসারের মাধ্যমে তা নির্বাচন কমিশনের কাছে যায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলেই কমিশনের তরফে মালদহের এসপিকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। তা রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারাও জানতে পারেন। মহাকরণ সূত্রের খবর, মালদহের পুলিশ সুপারের তরফেও অভিযোগের জবাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। শুক্রবার বেলার দিকে জয়ন্তবাবু রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের অফিসে যান। ওই অফিস থেকে জয়ন্তবাবু চলে যাওয়ার পরই কমিশনের সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে রাজ্য সরকার জানতে পারে। জয়ন্তবাবু বলেন, “বদলির কথা শুনেছি। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” প্রশ্ন উঠেছে জয়ন্তবাবুর জায়গায় মালদহের পুলিশ সুপার কে হচ্ছেন। কমিশন সূত্রে খবর, মালদহে যেহেতু নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই রাজ্য সরকার নিজেদের পছন্দ মতো এখন কাউকে ওই পদে বসাতে পারবেন না। কমিশনের কাছে রাজ্যকে তিন জন আইপিএসের নামের তালিকা পাঠাতে হবে। কমিশন ইচ্ছে করলে তিন জনের মধ্যে কাউকে দায়িত্ব দিতে পারে, তা না করে নতুন তালিকাও চাইতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম চৌধুরী বলেন, “নিবার্চন বিধি ভেঙে সরকারের হয়ে ইংরেজবাজারে উত্তরবঙ্গ উৎসব করছেন জেলাশাসক। তাই তাঁকে অপসারিত করার দাবি জানিয়েছিলাম। এখন শুনছি পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিস্মিত।” বদলির বিষয়টি জানাজানি হতে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরেও চলছে নানা জল্পনা। মালদহে জেলাশাসক শ্রীমতী অর্চনা কাজে যোগ দেওয়ার কিছু দিনের মাথায় তাঁর বাংলোয় কর্তব্যরত একজন মহিলা এনভিএফ কর্মী নিগ্রহের অভিযোগ তোলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, বাংলোতে বাতানুকূল যন্ত্র চালু করতে না-পারায় তাঁকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। জেলাশাসক অভিযোগ অস্বীকার করেন। পুলিশ ওই মহিলার অভিযোগ থানায় নথিভুক্ত করে। সেই অভিযোগ মানবাধিকার কমিশনে বিচারাধীন। তাতে ডিএম-এসপি দূরত্ব বাড়ে বলে প্রশাসনের অনেকেরই অনুমান। শুধু তাই নয়, এতদিন মালদহ পুলিশ লাইন মাঠে প্রজাতন্ত্রদিবস পালন হত। সেখানে থাকতেন জেলাশাসক। এ বার বৃন্দাবনী মাঠে প্রজাতন্ত্রদিবস পালন করা হয়। বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে জেলাশাসকের বক্তব্য চেষ্টা করে জানা যায়নি। |