১৭ বছরের নাতনিকে বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হলেন ৬২ বছরের ঠাকুমা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ চাঁচল থানার কান্ডারণ এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা যাযাবরদের কয়েকটি তাঁবুতেও আগুন দেয়।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম পার্বতী দেবী (৬২)। ওই ঘটনার জেরে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “ঘটনার পরে আশপাশের সমস্ত থানা থেকে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স এলাকায় পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরার জন্য তল্লাশি চলছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সামসি রেল স্টেশন লাগোয়া রেলের ফাঁকা জায়গায় ৬০ থেকে ৭০ জন রাজস্থানের যাযাবর দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করেন। ওই যাযাবর গোষ্ঠীর লোকজন প্লাস্টিকের ফুল, প্লাস্টার অফ প্যারিসের মূর্তি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে পেটের ভাত জোটায়। অভিযোগ, যাযাবরদের উচ্ছেদ করে রেলের জমি দখল করতে স্থানীয় রফিক শেখ ও তাঁর দল বেশ কিছুদিন ধরে সক্রিয়। মাঝেমধ্যে রফিক দলবল যাযাবর মেয়েদের উত্যক্ত করত ও ভয় দেখাত বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু অত্যাচারের পরে যাযাবর গোষ্ঠীর লোকজন এলাকা ছাড়েনি। ওই কারণে রফিকের দলবল ক্ষিপ্ত ছিল বলে পুলিশ জেনেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ রফিকের নেতৃত্বে ১০-১২ জন দুষ্কৃতী হাঁসুয়া তরোয়াল নিয়ে যাযাবর বস্তিতে হামলা চালায়। তখন বেশিরভাগ যাযবর তাঁবুর ভিতরে ছিলেন। মালা বেবি নামে ১৭ বছরের এক কিশোরী প্রকৃতির ডাকে বাইরে যায়। অভিযোগ, রফিকের ওই নাবালিকাকে জোড় করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিশোরীর চিৎকারে তাঁর ৬২ বছর বয়সী ঠাকুমা তাঁবু থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে নাতনিকে বাঁচাতে পার্বতী দেবী ঝাঁপিয়ে পড়লে দুষ্কৃতীরা অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপায়। ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধা মারা য়ান। এদিকে বৃদ্ধা ও নাতনির চিৎকারে আশেপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসলে দুষ্কৃতীরা কিশোরীকে ফেলে পালিয়ে যায়। মৃতা বৃদ্ধার স্বামী গোপা সিংহ বলেন, “আমার স্ত্রী এগিয়ে না গেলে রফিকরা আমার নাতনিকে তুলে নিয়ে যেত। স্ত্রী জীবন দিয়ে নাতনিকে রক্ষা করেছেন।” স্থানীয় বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে দুষ্কৃতীরা পালানোর সময় যাযাবরদের কয়েকটি তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে চাঁচল থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ছুটে আসার আগে কয়েকটি তাঁবু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা দুষ্কৃতীদের ধরতে ধাওয়া করেন। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি।
নাতনিকে বাঁচাতে গিয়ে বৃদ্ধা ঠাকুমার মৃত্যুর ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। চাঁচল ও রতুয়া থেকে বিরাট বাহিনী এলাকায় যায়। দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শুক্রবার স্থানীয় মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সি এলাকায় গেলে বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিধায়ক বলেন, “যা ঘটেছে তা নিন্দার ভাষা নেই। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানোর জন্য পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছি।” |