ওষুধ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ধৃত হুগলি জেলাপরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অসিত পাত্র জামিন পেলেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে ধরা পড়েন এই সিপিএম নেতা। প্রায় এক বছর পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি শুক্রবার জামিন পেয়েছেন তিনি। আপাতত আছেন চুঁচুড়া জেলে। এ দিন আদালতের কাগজপত্র এসে না পৌঁছানোয় ছাড়া পাননি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোনও রকম নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করে লক্ষ লক্ষ টাকার ওষুধ এবং চিকিত্সা সরঞ্জাম কেনার অভিযোগ ওঠে এই বর্ষীয়ান নেতার বিরুদ্ধে। বাম আমলে তত্কালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের নির্দেশে ওই অভিযোগ নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। অর্থ দফতরের কয়েক জন অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে সময়ে। বিষয়টি সামনে চলে আসায় দল অসিতবাবুকে সভাধিপতির পদ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। তাঁর জায়গায় সভাধিপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রদীপ সাহাকে। এর পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি পদক্ষেপ করেনি তত্কালীন সরকার।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় বিষয়টি ফের মাথা চাড়া দেয়। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় অর্থ দফতরের নির্দেশে হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ গ্রেফতার করে অসিতবাবুকে। একাধিক বার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করল। এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “বিচার বিচারের পথে চলছে। এখন আর আদালতে ধমকে কাজ হচ্ছে না।”
অসিতবাবু ধরা পড়ার পরে দল তাঁর পাশে ছিল না বলে সিপিএমেরই একাংশের মধ্যে ক্ষোভ আছে। আদালত চত্বরে সে সময়ে কোনও নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। এমনকী অসিতবাবু ধরা পড়ার বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতেও সে সময়ে তাঁরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। দলের তরফে কোনও আইনজীবীও দেওয়া হয়নি অসিতবাবুকে। যা নিয়ে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
অসিতবাবু সে সময়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। অসিতবাবু তৃণমূলের আমলে ধরা পড়লেও অভিযোগ কিন্তু উঠেছিল বাম আমলেই। বাম সরকারই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল। সে সময়ে দলের একটি সূত্র প্রশ্ন তুলেছিল, এত লক্ষ লক্ষ টাকার বিষয় যেখানে জড়িয়ে, দুর্নীতি যদি হয়েও থাকে, তা কি একা অসিতবাবুর নির্দেশে কী সম্ভব? দলের অন্য ‘মাথা’ এর পিছনে কাজ করছে কিনা, তা নিয়েও সংশয় ছিল ওই মহলের। |