শহরের অন্যতম পুরানো হোটেলকে বন্ধ করা ঘিরে শ্রমিকপক্ষ এবং মালিকপক্ষের বিবাদ তুঙ্গে উঠেছে। শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোজের ‘রণজিৎ হোটেল’টি বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকপক্ষ। ওই হোটেলটি ছাড়াও একই ভবনে মালিকপক্ষের একই সঙ্গে ‘সিরাজ’ নামের একটি পানশালা ও রেস্তোরা রয়েছে। সেটিও একসঙ্গে এদিন বন্ধ করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা এ দিন বিকালে সিটু নেতৃত্বের উপস্থিতিতে হোটেলের সামনে মিছিল, বিক্ষোভ সভা করেন। তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে লেখা পোস্টার হোটেলের বন্দ গেটের সামনে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।
মালিকপক্ষের দাবি, গত ডিসেম্বর মাসে রীতিমত নোটিশ দিয়ে সমস্ত ইউনিট বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, শ্রমিকপক্ষের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিতেও তাঁরা প্রস্তুত। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকানা সম্পর্কিত সমস্যার কথা জানিয়ে হোটেলটি বন্ধের পিছনে মালিকপক্ষের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। তাঁরা সমস্ত শ্রমিকদের ছাঁটাই করে পরবর্তীতে অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে সংস্থাটি চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি, সরকারি আইন মেনেও হোটেলটি বন্ধ করা হয়নি। বিষয়টি ইতিমধ্যে শ্রম দফতরে পৌঁছেছে।
রাজ্য শ্রম দফতরের শিলিগুড়ির যুগ্ম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “দু’পক্ষের সঙ্গে এক দফায় আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হচ্ছে। দুই তরফেই চিঠি দিয়েছে তাঁদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন।” আর হোটেল মালিকদের সংগঠন হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, “অংশীদারদের মধ্যে কোনও সমস্যা চলছে শুনেছি। তবে সংগঠনকে মালিক কর্তৃপক্ষ এখনও কিছু জানাননি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” |
শহরের হিলকার্ট রোডের একটি সিনেমা হলের উল্টোদিকে রণজিৎ হোটেলটি রয়েছে। প্রায় ৬০ বছরের পুরানো হোটেলটির বর্তমানে সুন্দরপাল সিংহ এবং মনপ্রীত কৌর নামের দুই জন মালিক আছেন। তাঁদের হয়ে হোটেলটির দেখাশুনো করেন মনপ্রীতদেবীর স্বামী বলবিন্দর সিংহ। তিনি বলেন, “গোটা উত্তরবঙ্গে রণজিৎ হোটল পরিচিত। বন্ধ করে দিতে আমাদেরও কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমার শারীরিক সমস্যা, অংশীদারি নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই গত ১২ ডিসেম্বর সমস্ত স্তরে নোটিশ দিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা শ্রমিকদের বকেয়া মিটিয়ে দিতে প্রস্তুত।” রণজিৎ গ্রুপের রেঁস্তোরা, পানশালা এবং হোটেল মিলিয়ে ৪৭ জন কর্মী আছেন। এরমধ্যে ৩৫ জন স্থায়ী বাকিরা অস্থায়ী কর্মী। সরকারি নিয়ম অনুসারে, এই ধরণের সংস্থাকে বন্ধ করতে গেলে দুই মাস আগে সরকারকে চিঠি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে সংস্থার কর্মী সংখ্যা অবশ্যই ৫০ জনের বেশি হতে হবে। এ ছাড়া গ্র্যাচুইটি, পিএফ এবং গ্র্যাচুইটির সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণও দিতে হয়। এ ছাড়া বকেয়া বেতনও রয়েছে। রণজিৎ হোটেলের কর্মীরা ডিসেম্বর মাস অবধি বেতন পেয়েছেন। এ দিন থেকে হোটেলটি বন্ধ হওয়ায় কর্মীরা জানুয়ারি মাসের বেতন নেননি। সিটুর জেলা সভাপতি অজিত সরকার এবং সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, “সঠিক নিয়ম মেনে হোটেলটি বন্ধ হয়নি। অংশীদারি নিয়ে সমস্যা জেরে কর্মীরা পথে বসতে পারে না। আর আমাদের মনে হচ্ছে, হোটেল কর্তৃপক্ষ সব কর্মীদের ছাঁটাই করে পরবর্তীতে অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে হোটেল চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।” |