কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানকারী চেয়ারম্যান নান্টু পালের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আনা বামেদের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আগামী সোমবারের মধ্যে বিশেষ অধিবেশন ডাকার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত সূত্রের খবর, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস ওই আদেশ দেন। নির্দেশ মত, ওই সময়সীমার মধ্যে পুর কমিশনারকে বিশেষ অধিবেশনের দিন ঘোষণা করতে হবে।
বামেদের তরফে পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম মামলার সূত্রেই কলকাতায় রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি বলেন, “নান্টুবাবু দলত্যাগের পরে আমরা মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রশ্নে তাঁকে অপসারণের জন্য পুর আইন মেনে বৈঠক ডাকার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। তাতে সাড়া দেননি চেয়ারম্যান। পরে রাজ্য সরকারের কাছে বিষয়টি জানিয়ে হস্তক্ষেপ চাই। সেখানেও সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত সুবিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই। রায়ে আমরা খুশি। এটা গণতন্ত্রের জয়।”
যদিও শিলিগুড়ির পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান কিংবা নান্টুবাবু, কেউ রায়ের প্রতিলিপি হাতে না-পাওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কংগ্রেস নেত্রী তথা মেয়র বলেন, “এমন একটা রায় হাইকোর্ট দিয়েছে শুনেছি। রায়ের প্রতিলিপি এলে পুরসভার তরফে তা পালন করা হবে।” গত পুরভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট গড়ে ৪৭টি আসনের মধ্যে ৩০টি জেতে। সেই সময়ে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতেন নান্টুবাবু। কংগ্রেসের তরফে তাঁকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করা হলে তিনি ভোটে জয়ী হন। গত অক্টোবরের গোড়ায় নান্টুবাবু তৃণমূলে যোগ দেন। এর পরেই বামেদের তরফে ১৭ জন কাউন্সিলর নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে বোর্ড মিটিং বয়কট করেন। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একাংশও সেই মিটিঙে যাননি। ইতিমধ্যে বামেদের পক্ষ থেকে পুর আইনের ১৮ (সি) ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবি জানানো হয়। লিখিতভাবে তা চেয়ারম্যানকে জানিয়ে অপসারণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষ অধিবেশন ডাকার আর্জি জানান বামেরা। সময়সীমার মধ্যে চেয়ারম্যানের তরফে কোনও উত্তর পাননি বামেরা। তাঁরা রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। সেখানেও সাড়া না-মেলায় বাম কাউন্সিলরদের তরফে দুজন আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য ও কল্লোল বসু উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত সূত্রের খবর, নান্টু পাল আদালতকে জানান, অনাস্থা সংক্রান্ত অধিবেশন ডাকার এক্তিয়ার তাঁর নেই। তাই, তিনি তা ডাকছেন না। কিন্তু, সোমবার আদালত জানিয়ে দিয়েছে, সোমবারের মধ্যেই পুরসভার প্রতিটি কাউন্সিলরকে চিঠি দিয়ে বৈঠক ডাকতে হবে নান্টুবাবুকেই।
এদিন মামলার রায়কে স্বাগত জানান কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নান্টুবাবুর যদি ন্যূনতম লজ্জা বোধ থাকে তা হলে এখনই চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত। যে ভাবে কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, হুমায়ুন কবিররা দল ছেড়ে ইস্তফা দিয়ে ফের ভোটে দাঁড়িয়েছেন, সাহস থাকলে সেই পথে হাঁটুন নান্টুবাবু।” এ ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেছেন, “হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি হাতে আসুক। তার পরে নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।” তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, রায়ের প্রতিলিপি নিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নান্টুবাবু। |