মঞ্চে থুতু-কাণ্ডে অভিযুক্তকে দেখে উত্তেজনা
শিক্ষক-বিক্ষোভের জেরে বিঘ্ন অনুষ্ঠানে
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দিতে গিয়ে ডিআইয়ের মুখে থুতু ছেটানোর মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মাকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পাশে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেকেই। শুক্রবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর মঞ্চে এই বিক্ষোভের জেরে অনুষ্ঠান কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব মঞ্চ থেকে নেমে বিক্ষোভরত শিক্ষকদের বিস্তর বুঝিয়ে, অনুরোধ করে, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। মিনিট দশেক পরে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এ দিন প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন চলছিল। মঞ্চে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্যও উপস্থিত ছিলেন। রঞ্জনবাবুকে মঞ্চে দেখেই শিক্ষকদের একাংশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। কোন যুক্তিতে রঞ্জনবাবু মঞ্চে জায়গা পান, সেই প্রশ্নে চিৎকার শুরু করেন শিক্ষকরা। এমনকী, ডিআইয়ের মুখে থুতু ছেটানোর মামলায় অভিযুক্ত একজন নেতা কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে শিক্ষামন্ত্রীর পাশে বসেন, সেই প্রশ্নে হইচই চলতে থাকে।
সভাস্থলে ক্ষোভ।
পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “কাকে মঞ্চে আমন্ত্রণ করা হয়েছে আর কাকে করা হয়নি, সে বিষয়টি আমি জানি না। আমি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সেখানে যাই। চিৎকার শুরু হওয়ায় নেমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলি। কোনও অভিযোগ থাকলে জানাতে বলেছি।” শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। রঞ্জনবাবু বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাই না।”
রঞ্জনবাবু বর্তমানে শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র। এ ছাড়াও তিনি শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের সদস্য। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার সহ সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। রঞ্জনবাবু তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক। বছর তিনেক আগে আগে রঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে জেলা স্কুল পরিদর্শকের মুখে থুতু দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শিক্ষকদের প্রশ্ন, যদি রঞ্জনবাবু ডেপুটি মেয়র হিসেবে মঞ্চে জায়গা পান তাহলে মেয়রকে কেন ডাকা হয়নি? অথবা তিনি সর্বশিক্ষা মিশনের সদস্য হিসেবে মঞ্চে জায়গা পেলে অন্য সদস্যদের কেন ডাকা হয়নি? রঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে যেখানে এক স্কুল পরিদর্শকের মুখে থুতু ছেটানোর অভিযোগ রয়েছে, সেখানে তিনি মঞ্চে জায়গা পান কি করে, সেই প্রশ্নেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষকদের একাংশ।
মধ্যস্থতায় মন্ত্রী।
এক শিক্ষক জয়ন্ত পাল বলেন, “রঞ্জনবাবু একজন সাধারণ প্রাথমিক শিক্ষক হয়ে মঞ্চে জায়গা পেলে অন্য শিক্ষকদের অপমান করা হয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই প্রতিবাদ করেছি।” মানিকবাবু বলেন, “সবাইকে সম্মানের সঙ্গেই মঞ্চে ডাকা হয়েছে। আমাদের নিভৃতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের ডাকা হয়েছে। ছোট বিবাদ ভুলে গিয়ে সবাইকে বড় প্রেক্ষাপটে ভাবতে হবে।”
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, এদিন যে শিক্ষকরা অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা মূলত বামপন্থী ও কংগ্রেস ঘেঁষা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূল মনোভাবাপন্ন প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন মূলত রঞ্জনবাবু দেখাশোনা করেন। শিলিগুড়ি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সমর চক্রবর্তী হলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি, নিয়োগ সহ একাধিক ছোট সিদ্ধান্তের ব্যপারেও রঞ্জনবাবু প্রধান ভূমিকা নেন বলে অভিযোগ। সে কারণেই শিক্ষকদের একাংশ রঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন। এ দিন সুযোগ মিলতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা।
প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি বিভাস চক্রবর্তী বলেন, “বর্তমান সংসদের চেয়ারম্যানকে সামনে রেখে নানা অনৈতিক কাজ হয়েছে। সেই ক্ষোভেরই প্রকাশ হয়েছে।” শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সমর চক্রবর্তী বলেন, “কেন বিক্ষোভ হল বুঝতে পারছি না। রঞ্জনবাবু শিলিগুড়ি পুরসভার শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ। সে জন্যই তাঁকে ডাকা হয়েছিল।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.