|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৫... |
|
দোহাই, একটুকু চুপ কর |
বইপোকা |
হুজুগপ্রিয় বঙ্গভাষী আরও এক বার মেলায় মাতিয়াছে। যাঁহারা মেলা করিতেছেন, যাঁহারা সে স্থলে পসরা সাজাইয়া বসিয়াছেন মাতন শুধু তাঁহাদিগেরই নহে, উড়াইয়া দিবার মাতন সমালোচকদিগেরও। কেহ বলিতেছেন, মেলায় গ্রন্থ অপেক্ষা সাড়ে বত্রিশভাজা অধিক বিক্রয় হয়, কেহ বা তাহার উপর সাক্ষরতা প্রসারের ন্যায় শুভকর্মের ভার চাপাইতে ইচ্ছুক। কিন্তু যে মেলা গ্রন্থভুবনের ভারই ঠিকঠাক সামলাইতে পারে না তাহার উপর ভুবনের ভার চাপাইবার আশা কেন? চাপাইয়া লাভই বা কী? ‘ভুখা মানুষ, বই ধরো, ওটা হাতিয়ার’ স্লোগানটির উদ্দেশ্য মহত্ কিন্তু একটু ভাবিলেই বুঝা যাইবে ওই ‘বই’ এক বিশেষ শ্রেণির বই। আসলে চেতনে-অবচেতনে অধিকাংশ বাঙালি হেতুবাদে বিশ্বাসী। অর্থাত্, ইহা করিতেছি উহা করিব গোছের একটি ভাবনাক্রম সদাই জাগ্রত থাকে আমাদিগের মনে। কিন্তু গ্রন্থপাঠকে সেই উদ্দেশ্যের ভার হইতে মুক্ত করিলেই মঙ্গল। গ্রন্থ বিদ্যাচর্চার বাহন নিশ্চয়, কিন্তু শুধু বিদ্যাচর্চাই তাহার লক্ষ্য নহে। বস্তুত সেই পাঠই সর্বার্থে নিবিড়তম পাঠ যাহার কোনও লক্ষ্যই নাই। স্নাতকোত্তরের প্রশ্নোত্তর লিখিব বলিয়া যিনি ‘পথের পাঁচালী’ পড়েন কিংবা যিনি গত শতকের বিশের দশকের গ্রামজীবনকে চিনিব বলিয়া ‘পথের পাঁচালী’ পড়েন তাঁহাদিগের অপেক্ষা তিনিই শ্রেষ্ঠতর পাঠক যিনি নিছক পড়িবার জন্যই পড়িয়া থাকেন। অহৈতুকী সেই পাঠ, অহৈতুকী প্রেমের ন্যায়। কলেজ স্ট্রিটের একটু বড় সংস্করণ এই যে বইমেলা সেখানে অদ্যাপি এমন অহৈতুকী প্রেমের প্রেমিকাসকল থরেবিথরে সাজানো থাকেন। তাঁহাদের সহিত প্রথম পরিচয়ের প্রশস্ত সুযোগ এই মেলা। স্লোগান, তর্ক, উপদেশের কোলাহলে বিরক্ত প্রেমিক যদি এই বার বলিয়া উঠেন, দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর! তাহাতে ক্ষতি কার? |
|
|
|
|
|