চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
বাউল মনে ফুটে ওঠে লৌকিকের নানা দিক
ম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে ‘ক্যালকাটা পেন্টার্স’ দলের ৪৮তম বার্ষিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল। ১৯৬৪-র নভেম্বরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই দলের প্রথম সম্মেলক। ছ’জন শিল্পী ছিলেন তাতে। নিখিল বিশ্বাস, রবীন মণ্ডল, বিজন চৌধুরী, প্রকাশ কর্মকার, গোপাল সান্যাল ও রঞ্জন রুদ্র। সে বছরই জানুয়ারিতে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই শিল্পীদের একটি সম্মেলক। এই ছ’জন ছাড়াও আরও দু’জন শিল্পী ছিলেন সেই প্রদর্শনীতে। বিমল বন্দ্যোপাধ্যায় ও গগুনব্রিট স্ভেনসন। পরে তাঁরা আর দলে যোগ দেননি। দিল্লির প্রদর্শনীর সাফল্যে উত্‌সাহিত হয়ে এই দল গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৬০-এর দশকের বাস্তবতায় ছবিতে নতুন আঙ্গিক গঠনের জন্য কাজ করেছেন এই শিল্পীরা। পরে এই দলে যুক্ত হয়েছেন অমল নাথ চাকলাদার, যোগেন চৌধুরী, অনিতা রায়চৌধুরীর মতো আরও অনেক শিল্পী। অনেকে ছেড়েও দিয়েছেন দল। তাঁদের সংঘবদ্ধতা ৪৮ বছর পরে আজও অটুট আছে। যদিও ষাটের সেই ‘স্পিরিট’ আজ আর নেই। আলোচ্য প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ২৩ জন শিল্পী। এর মধ্যে দু’জন ভাস্কর। প্রদর্শনীটি বিজন চৌধুরীর স্মৃতিতে উত্‌সর্গীকৃত।
ভাস্কর্যে বিপিন গোস্বামীর সাতটি ব্রোঞ্জ ও একটি কাঠের রচনা ছিল। আদিমতা, লৌকিক ও অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিক মিলিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব রূপকল্প। দ্বিতীয় ভাস্কর প্রদীপ মণ্ডল অনেক তরুণ। তাঁর ছ’টি নানা মাধ্যমের কাজে তিনি আধুনিক রূপভঙ্গি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। মূর্ত ও বিমূর্তকে মিলিয়েছেন।
শিল্পী: বিজন চৌধুরী
বিজন চৌধুরীর চারটি ক্যানভাস ছিল। ‘রাগমালা’, ‘বাউল সিঙ্গার’ ও ‘বাবু কালচার’ শীষর্ক ছবিতে লৌকিকের নানা দিককে তিনি আত্মস্থ করেছেন। ‘ডিসেন্ডিং ফ্রম দ্য ক্রস’ ছবিটিতে ঝোঁক পড়েছে পাশ্চাত্য অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিকের উপর। অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিকের ভিতর দিয়েই তিনি এক রহস্যময় সৌন্দর্যকে বের করে এনেছেন। যোগেন চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথ’ মুখাবয়বটিতে সভ্যতার সংকটে চিন্তাক্লিষ্ট কবির বিষন্ন আলেখ্য পাই। সামাজিক এই বিপর্যয় আজ কোন সর্বনাশের প্রান্তে এসে পৌঁছেছে, তার পরিচয় ধরা থাকে যোগেনের ‘স্কাল ৭’ শীর্ষক ছবিটিতে। ঈশা মহম্মদের ‘ইফতার (রমজান)’ শীর্ষক তেলরঙের ক্যানভাসটিতে স্বাভাবিকতার আঙ্গিকে আভাসিত হয়েছে অস্তিত্বের গভীর শূন্যতা। অনিমেষ নন্দীর ‘জার্নি’ শীর্ষক দু’টি তেলরঙের ক্যনভাস এই প্রদর্শনীর অন্যতম দু’টি শ্রেষ্ঠ কাজ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
অমলনাথ চাকলাদারকে নব্য-ভারতীয় ঘরানার একজন সার্থক উত্তরসূরি বলা যায়। টেম্পারার ১১টি নিসর্গধর্মী ছোট ছবিতে তিনি ঐতিহ্যকে আধুনিকতায় সঞ্জীবিত করেছেন। অনিতা রায়চৌধুরীর ‘ঝড়ের ছন্দে’ শীর্ষক বিমূর্তায়িত নিসর্গটিতেও প্রাচ্যচেতনার আভাস পাওয়া যায়। ১৯৬০-এর দশকে অন্যান্য শিল্পীর মধ্যে এই প্রদর্শনীতে ছিলেন বরুণ রায়, নীরেন সেনগুপ্ত, ফাল্গুনী দাশগুপ্ত ও শ্যামশ্রী বসু।
সত্তরের দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মধ্যে শিবপ্রসাদ করচৌধুরী নিসর্গ ভেঙে অলঙ্করণের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজস্ব রীতির বিমূর্তায়নের পরিচয় দিয়েছেন। দেবব্রত চক্রবর্তী তাঁর দু’টি ক্যানভাসে নিসর্গকে বিমূর্তায়িত করেছেন। তাঁর একটি ছবি ছিল অবয়বী, আধ্যাত্মিক-চেতনায় সঞ্জীবিত। দ্বিজেন গুপ্ত তাঁর ছবিতে নারী ও প্রকৃতিকে একাত্ম করে নেন।
যিশুখ্রিস্টকে নিজস্ব প্রকাশের প্রতীক করে নিয়েছেন ওয়াসিম কপূর। কণ্টকাবৃত চোখে যিশুর প্রতিমা এই সময়ের নিগূঢ় শূন্যতাকে মেলে ধরেছে। ১৯৮০-র দশকের আর একজন শিল্পী গৌতম ভৌমিক ক্যানভাসে তেলরং মোটা করে লাগিয়ে এক ধরনের বুনোট তৈরি করেছেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আদিম গুহাচিত্রের রূপ ব্যবহার করেছেন তাঁর চারটি ছবিতে। সুশান্ত চক্রবর্তী প্রতিচ্ছায়াবাদী আঙ্গিকের সঙ্গে লৌকিক সারল্যকে মিলিয়েছেন।
তরুণতর প্রজন্মের দুই শিল্পীর মধ্যে শুভব্রত নন্দীর তিনটি ছবি ভাবনা ও আঙ্গিকের স্বকীয়তায় এই সময়ের গভীর তমিস্রাকে রূপায়িত করেছে। সুব্রত ঘোষের ‘এক্সিসটেন্স’ শীর্ষক তিনটি ক্যানভাসেও অস্তিত্বের সংকট রূপায়িত হয়েছে। তাঁর আঙ্গিক অবশ্য আরও পরিশীলিত হওয়ার অপেক্ষা রাখে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.