সকালে স্কুলের পাঠ চুকলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখল নিয়ে চলছে কোচিং সেন্টার। ব্যবহার করা হচ্ছে স্কুলেরই ব্ল্যাকবোর্ড। ছাত্রছাত্রীদের খাবারের প্যাকেটে নোংরা হচ্ছে ঘর। দেওয়ালে লেখা থাকছে নানা অপ্রীতিকর মন্তব্য। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দখলদারি আটকাতে তাঁরা স্কুলের দরজায় তালা দিলেও তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট পশ্চিম চক্রের অধীন বেঁকিরহাট অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলে এমনই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভুবনেশ্বর মণ্ডল জানান, ইতিমধ্যেই বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, মহকুমাশাসক, বসিরহাট পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিডিও-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলেই জানানো হয়েছে। শিক্ষা দফতর থেকে থানাতেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “শিক্ষা সংসদ কিংবা প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া কী ভাবে স্কুলের মধ্যে কোচিং ক্লাস চলছে সে বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।”
স্কুল ও প্রশাসন সূত্রে খবর, স্কুলে সকালে শিশুদের ক্লাস হয়। গত কয়েক বছর ধরে বিকেল হলেই স্কুলের সবক’টি ক্লাসঘর দখল করে শুরু হয়েছে কোচিং ক্লাস বা গৃহশিক্ষকতা। এ জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মোটা টাকাও নেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে যিনি প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি রাজনৈতিক কারণে এই ব্যবস্থা মেনে নিলেও বর্তমান প্রধান শিক্ষক ভুবনেশ্বরবাবু এর প্রতিবাদ জানান। তাঁর অভিযোগ, তার পর থেকেই তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার নিন্দা করে বসিরহাট পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অভিজিত্ ভট্টাচার্য বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেআইনি ভাবে কোচিং করা অত্যন্ত অন্যায়। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ পাওয়ার পর কী ভাবে স্কুলে কোচিং সেন্টার খোলা হল, সে ব্যাপারে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।” অভিজিত্বাবু আরও জানান, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানান, যাঁরা ওখানে কোচিং সেন্টার চালান তাঁরা একবার কিছু টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা স্কুলের উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে অবিলম্বে স্কুলের মধ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। অভিজিত্বাবুর অভিযোগ, ওই নির্দেশের পর তাঁকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ভুবনেশ্বরবাবু লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাঁর অনুমতি ছাড়াই স্কুলের ক্লাসঘরে কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন। পড়াশোনার সরঞ্জাম যেমন চক, ডাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, ক্লাসঘরের দেওয়াল অপরিষ্কার করে রাখা হয়। দেওয়ালে অশ্লীল কথাবার্তা লেখা থাকে। যা শিশুমনে প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর আশঙ্কা, যে ভাবে বিনা অনুমতিতে স্কুলের পরে ক্লাসঘরে কোচিং সেন্টার চলছে তাতে কোনওদিন কোনও অসামাজিক কাজকর্ম ঘটলে তার দায় তাঁদের উপরেই এসে পড়বে। এ বিষয়ে গ্রামশিক্ষা কমিটির সম্পাদক আব্দুল সাত্তার বলেন, “ঘটনা সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অন্ধকারে। প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছু জানাননি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।” |