ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে এখন বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা। দেড় থেকে তিন হাজার টাকায় মিলে যাচ্ছে ওয়ান-শটার। দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি ওই অস্ত্র সহজেই চলে আসছে সাধারণ মানুষের নাগালেও। এমনকী, ছোটদের কাছ থেকেও তা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গোয়েন্দারা তদন্তে জেনেছেন, রিভলভার-পিস্তলকে ছাড়িয়ে ওই অস্ত্র চোরাগোপ্তা ভাবে আসছে শিল্পাঞ্চলের সীমানা-এলাকা এবং কামারহাটি-জগদ্দল থেকে। কিন্তু এই ব্যবসা যে ঠেকানো যাচ্ছে না তা ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
গত বছর ২০ জানুয়ারি ব্যারাকপুরে পুলিশ কমিশনারেট গঠিত হয়। তার পর থেকে শিল্পাঞ্চলের ১২টি থানা এলাকায় গত বছর খুন হন ৮২ জন (অধিকাংশই ওয়ান-শটারের গুলিতে)। আগ্নেয়াস্ত্র মেলে ১৮০টি। তারও অধিকাংশই ওয়ান-শটার। এর আগে, জেলা পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১ সালে শিল্পাঞ্চলে খুন হন ৮৩ জন। আগ্নেয়াস্ত্র মেলে ১৩৬টি। অর্থাত্, খুনের সংখ্যার বিশেষ হেরফের না হলেও আগ্নেয়াস্ত্রের আমদানি বেড়ে গিয়েছে।
পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা মেনে নিয়েছেন পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কী ভাবে শিল্পাঞ্চলে ঢুকছে, তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এ ভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার রুখতে থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।’’ |
উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন ওয়ান-শটার পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, পুলিশের থ্রি নট থ্রি রাইফেলে যে গুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলিই এতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, ৭.৮৬ ক্যালিবারের পিস্তলের গুলিও ব্যবহার করে অনেকে। তবে, এগুলি সবই ব্যবহৃত গুলি। বারুদ ঠেসে ‘রিফিল’ করা হয়। একেবারে দেশীয় প্রক্রিয়ায় গুলির মুখের সরু অংশটা ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে গুলি ওয়ান-শটারের মধ্যেও ফাটে। তা সত্ত্বেও, সস্তার এই আগ্নেয়াস্ত্রই দুষ্কৃতীদের হাতে দেদার ঘুরছে। পুলিশের মতে, আগে বিহার থেকে আনানো পিস্তল বা রিভলভার ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে কিনতে হত দুষ্কৃতীদের। কিন্তু এখন সে সবের বালাই নেই। ওই টাকায় বেশি পরিমাণ ওয়ান-শটার মিলছে।
গত ১৯ জানুয়ারি হালিশহরে বিয়ের আসরে গুলিতে খুন হন বর। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল ওয়ান-শটার। তার দু’দিন পরেই নৈহাটিতেও এক জমির দালাল ওয়ান-শটারের গুলিতে খুন হন। টিটাগড়ে এমকো চটকলের কুলি লাইনে খেলা নিয়ে বচসার জেরে ১৪ বছরের এক কিশোর ও তার তরুণ সঙ্গী সাত বছরের এক বালককে গুলি করে খুন করে বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও ওয়ান-শটারই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানায়। দিন কয়েক আগে টিটাগড় থানা এলাকার বড়পোল থেকে একটি ওয়ান-শটার ও এক রাউন্ড গুলি-সহ জয়ন্ত রায় নামে এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
অর্থাত্, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু শিল্পাঞ্চলে তার আমদানি ঠেকানো যাচ্ছে না। |