উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-পেট্রোপোল সীমান্তে অত্যাধুনিক ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) করার জন্য সরকারি তরফেই বোজানো হচ্ছে ১০০ বিঘার একটি জলাশয়। শুক্রবার আনন্দবাজারে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ করলেন বনগাঁর মানুষ। প্ল্যাকার্ড, পোস্টার নিয়ে বাঁওড় ভরানোর প্রতিবাদে নামলেন বনগাঁ লইয়ারস অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ বার অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের সদস্যরা। সামিল হলেন স্থানীয় শিক্ষক, সাহিত্যিক, ও ছাত্র-ছাত্রীরাও।
বনগাঁ আদালত চত্বর থেকে মিছিল শুরু হয়ে বনগাঁ শহর ঘুরে মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ হয়। মহকুমাশাসকের কাছে দেওয়া হয় স্মারকলিপি। লইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস বলেন, “মহকুমাশাসকের কাছে আমরা জানতে চেয়েছি, সাধারণ মানুষ জলাশয় ভরাট করলে তাঁকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হবে। তা হলে এই ১০০ বিঘার বাঁওড় ভরাটের জন্য কাকে ধরা হবে? এটা বন্ধ না করা হলে সবার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছি।” |
যেখানে ভরাটের কাজ চলছে, সেখানে এ দিন পরিদর্শনে যান বিএসএফের ডিজি সুভাষচন্দ্র জোশী। সমস্ত এলাকা ঘুরে ঠিকাদার সংস্থার কর্তাদের কাছে তিনি জানতে চান, যে ভাবে জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে, তাতে নিকাশির সমস্যা হলে সমাধান কী?” এর সদুত্তর মেলেনি।
এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিদলও। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে ওই জলাভূমিটির চরিত্র বদলের (জলা থেকে বাস্তু) সরকারি প্রক্রিয়াও শুরু হয়। অথচ জলাশয় ভরাটের কথা জানেন না বলে বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন জেলাশসক সঞ্জয় বনশল। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকেও যে জলাশয় ভরাটের অনুমতি মেলেনি, এ দিন তা স্পষ্ট হয়েছে তাঁর কথাতেই। তিনি বলেন, “প্রশাসনের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে তদন্ত করছেন। ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে জমির চরিত্র বদলের আবেদন জানানো হয়েছে।”
যদিও এ দিন ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রক্রিয়াকরণ না করে আইসিপি-র জন্য তড়িঘড়ি জমি দেওয়াতেই এই বিপত্তি। আসলে এই জলাশয়টি প্রাকৃতিক। একটি নদীর মতো। সরকারি সম্পত্তি হলেও যেহেতু জলাশয় বলে রেকর্ড রয়েছে, সেই জমির মিউটেশন করার কোনও আইনই নেই। কোনও সরকারই তা পারে না। চরিত্র বদল তো পরের প্রশ্ন। এটা যে-ই করুক, আদালতে চ্যালেঞ্জ হলেই বিপদে পড়তে হবে!” চরিত্র বদল যদি সম্ভবই হয়, তবে তা না করে কেন বেআইনি ভাবে জলাশয়টির একাংশ ভরাটের কাজ শুরু হল? জেলাশাসক বলেন, “যত একর জলাশয় ভরাট হয়েছে, তার বিকল্প জলাশয় তৈরির ব্যবস্থা হবে।”
এখানেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। স্থানীয় মানুষের যুক্তি, “সেই জমি কোথায়? সে ক্ষেত্রে তো উচ্ছেদের প্রশ্ন আসবে। জমি কেটে যদি পুকুরই করা যায়, তা হলে সেই জমিই ইসিপি তৈরির জন্য নেওয়া হচ্ছে না কেন?” তাঁদের আরও যুক্তি, “পেট্রাপোল থেকে বারাসত পর্যন্ত যশোহর রোডের বাইপাস তৈরির জন্য ওইটুকু জমি অধিগ্রহণ করা গেল না বলে টাকা ফেরত চলে গেল। আর এখানে বিকল্প জলাশয় তৈরির মতো এত জমি কোথায় মিলবে?” ঘটনা হল, ১০০ বিঘের জলাশয় তৈরির জমি গোটা বনগাঁ মহকুমাতেই পাওয়া দুষ্কর। এর পরেও ওই জলাশয়ে এক ফোঁটা মাটি ফেললে সমস্ত মানুষ সেখানে গিয়ে আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। |