তৃণমল নেতার দাবি ‘সাজানো’
সেই বারাসতেই এ বার ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা
বারও সেই বারাসত। আবারও মহিলার উপর আক্রমণের ঘটনা। শুক্রবার ভরদুপুরে বারাসতের সোনাটিকারিতে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করল একদল মদ্যপ যুবক। বাঁচাতে গিয়ে মাথা ফাটল বাবার। জখম জ্যাঠা-দাদারাও। অথচ এলাকার এক তৃণমূল নেতার দাবি, ঘটনার বেশির ভাগটাই ‘সাজানো’! পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। খোঁজ চলছে বাকিদের।
বছর দু’য়েক আগে এই ফেব্রুয়ারিতেই বারাসতে দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। তার পরেও বারাসতের পরিস্থিতি বদলায়নি। মেয়েদের উপর অপরাধের বহু ঘটনা ঘটেছে সেখানে। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। বাড়ির কাছেই অপেক্ষা করছিলেন তার দাদা। হঠাৎই মোটরবাইকে এসে দুই মদ্যপ যুবক পথ আগলে দাঁড়ায়। অশ্লীল কথা বলতে-বলতে ছাত্রীটিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা।
ছাত্রীর দাদার অভিযোগ, বোনের চিৎকারে ছুটে গেলে দুই মদ্যপ তাঁকে মারে। ছাত্রীটি ইতিমধ্যে মোবাইলে বাড়িতে ফোন করেছিল। খবর পেয়েই তার বাবা, জ্যাঠা এবং জ্যাঠতুতো দাদা ছুটে আসেন। দুই মদ্যপ যুবকও তত ক্ষণে সঙ্গীদের খবর দিয়েছে। দু’টি বাইকে চলে আসে আরও চার জন। ছ’জন মিলে ছাত্রীর বাড়ির লোকেদের পেটায়। মাটিতে ফেলে ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয় কিশোরীর বাবার মাথা। তিনি নিজে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি করেন। গুরুতর চোট নিয়ে এখন বারাসত হাসপাতালে ভর্তি।
ছাড় পাননি স্থানীয় ফলতি-বেলিয়াঘাটা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সইফার রহমানও। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তাঁর কথায়, “মদখোর-মাতাল কিছু সমাজবিরোধী দিনের আলোয় একটা বাচ্চা মেয়েকে টেনে নিয়ে যাবে, বাধা দেব না?” ওই যুবকেরা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান, বর্তমানে বিরোধী দলনেতা আবুল কাশেমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং কাশেম তাদের আড়ালের চেষ্টাও চালাচ্ছেন! কাশেমের কথায়, “ওরা সব সময় মদ খায় ঠিকই। কিন্তু ছেলে খারাপ নয়!” তাঁর দাবি, “আমার ছেলেরা মেয়েটিকে কিছু প্রশ্ন করছিল। তা নিয়েই তার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ওদের মারপিট হয়েছে। বাকিটা সাজানো ঘটনা।” সাজানো হলে ‘আপনার ছেলেরা’ পুলিশে অভিযোগ করল না কেন? কাশেমের জবাব, “পুলিশে জানানোর মতো কী এমন ঘটেছে? নিজেরাই মিটিয়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার।”
দুপুরেই বারাসত থানার আমিনপুর তদন্ত কেন্দ্রে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রীটি। পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ষণ্ডালিয়ার বাসিন্দা মহম্মদ জাফরউল্লা (১৮) এবং মেহের আলি ওরফে মেজো খোকন (৩০) নামে দু’জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
বারাসতের স্কুলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া ছাত্রীটি জানায়, গণিত শিক্ষকের কাছে পড়ে প্রথমে বাসে উঠেছিল সে। কাচকল এলাকায় বাসস্ট্যান্ডেই থাকে তার সাইকেল। তাতে চড়ে রাজারহাট রোড ধরে বাড়ি ফিরছিল। ‘দিনকাল খারাপ’ বলে সোনাটিকারির মোড়ে তাকে নিতে গিয়েছিলেন দাদা। কিন্তু পথে বেলিয়াঘাটায় একটি ধাবায় মদ্যপান করে কাচকল থেকেই দু’জন বাইকে তার পিছু নেয়। ছাত্রীর কথায়, “ওরা খারাপ কথা বলছিল। নাম জিজ্ঞাসা করছিল। পাত্তা না দিয়ে জোরে সাইকেল চালাতে থাকি। ওরা নোংরা কথা বলতে-বলতে বাইক নিয়ে সামনে দাঁড়ায়। আমি দাঁড়াতেই ওরা নেমে আমার হাত ধরে টানাটানি, অসভ্যতা করে। এত মদ খেয়ে ছিল যে দাঁড়াতেও পারছিল না।”
ছাত্রীর বাড়ির লোক ছুটে এলে দু’টি বাইকে আরও চার যুবকও চলে আসে। ছাত্রীর কথায়, “ছ’জন মিলে আমাদের মারতে থাকে। বাবা পড়ে যান। বড় থান ইট এনে ওরা বাবার মাথায় মারে।” তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন সইফার রহমানও। লোক জমে যাচ্ছে দেখে বাইকে চড়েই যুবকেরা পালায়। অ্যাম্বুল্যান্সে ছাত্রীর বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় সাতটি সেলাই পড়ে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর কাচকল থেকে চার কিলোমিটার দূরে কদম্বগাছির পূর্ব ইছাপুর গ্রামে মদ্যপদের তাণ্ডবের প্রতিবাদ করে খুন হন এক প্রৌঢ় চিকিৎসক। এর পরে এলাকার চোলাই-বেআইনি মদের ভাটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা। অভিযুক্তদের ধরাও হয়। তাতেও পরিস্থিতি না বদলানোয় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, ধাবা তো বটেই, রাস্তার পাশেও চলছে মদ, গাঁজা, সাট্টা-জুয়ার আসর। এলাকার কিছু নেতাই কায়েমি স্বার্থে দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে। এ দিনের ঘটনা তারই ফল। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শুধু বলেন, “ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.