শনিবারের নিবন্ধ ২
ঘরের বাইরে ঘর...
ড়িতে রাত ন’টা। লম্বা লাইন সল্টলেকের করুণাময়ী অটোস্ট্যান্ডে। এঁদের বেশির ভাগই সল্টলেকের আই টি সেক্টরে কর্মরত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এঁদের আসা। আ ওয়ার্ল্ড অব মিক্সড ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্ট। প্রশ্ন একটাই, থাকেন কোথায় এই এক্সিকিউটিভরা? কথা হচ্ছিল ত্রিপুরার ছেলে অনীশ-এর সঙ্গে। বছর পঁচিশ বয়স। একটি নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করছেন প্রায় তিন বছর হল। বললেন, ‘‘আমি থাকি আইসি ব্লকে। একটা ভাড়া ফ্ল্যাটে। আরও দু’জন ইনমেট থাকেন। ওরা অবশ্য অন্য কোম্পানিতে কাজ করেন। তবে অসুবিধে একেবারে হয় না, বলব না। মানিয়ে তো নিতেই হয়।”
এই মানিয়ে নেওয়াও পেয়িং গেস্টদের ভাল থাকার প্রথম প্রধান শর্ত। ঠিক যেমন, ওর এক ইনমেট কল্যাণীর সপ্তর্ষি। সেক্টর ফাইভেই এক কলসেন্টার এক্সিকিউটিভ। “আসলে সারা রাত কাজ করে আর কল্যাণীতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। এতটাই ক্লান্ত থাকি যে বন্ধু অনীশ রান্না করা খাবারটাও টেবিলে দিয়ে দেয়।” বন্ধুর জন্য বন্ধু। একে অপরের মানসিকতাকে ভাগ করে নেওয়া।
এ রকমই কলকাতার সব প্রান্তেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন অসংখ্য পেয়িং-গেস্ট। পেশাদার অথচ ফাস্ট লাইফ। পরিবার থেকে এত দূরে থেকেও কিন্তু পরিবার তৈরি করে নিয়েছে।
সল্টলেকেই থাকেন মৈত্রেয়ী। বাড়ি সেই সুদূর উত্তরপ্রদেশে। এখানে থাকতে তো তিনি অনেক সময় বাড়ির কথাও ভুলে যান। “আমরা তো প্রত্যেক উইক-এন্ডে ব্যাপক হইচই করি! আমি, ইনা আর রোমিতা তো এখন বেস্ট অব ফ্রেন্ডস।” মৈত্রেয়ী ছাড়াও এই টগবগে তরুণীরা কাজ করে সেক্টর টু-এর একটা রিক্রুটমেন্ট ফার্মে। তিনি এই শহরকে এতটাই ভালবেসে ফেলেছেন যে আবেগে বলে ফেললেন,“কলকাতার সঙ্গে অ্যাটাচড হয়ে গিয়েছি খুব। তা ছাড়া এই যে দেখছ না, আমার এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি? মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখা, পার্টি করা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, সব জায়গাতেই এই ডেভিলগুলো সঙ্গে থাকে। মায়া পড়েছে এদের ওপরও।”
পেশা বা লেখাপড়া—সব কিছুর জন্যই চাই একটি সুন্দর পরিবেশ। যখন সে সবের প্রয়োজনে নিজের ঘর-বাড়ি, পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে চলে যেতে হয় অন্যত্র, তখন তো মনও খোঁজে একটি নিরাপদ আশ্রয়। সঙ্গী-সাথিরাই হয়ে ওঠে নিকটাত্মীয় থেকেও অনেক বড়। কখনও মান অভিমান, কখনও বা ঝগড়া। যেমন, উত্তর কলকাতার একটি পরিচিত পেয়িং গেস্ট হাউসের পল্লবী। “জানো তো, সুদেষ্ণা আমাদের এখানে রান্না করে হেভি। বিরিয়ানি তো তুলনা নেই। তবে কেএফসি-তে গেলে ‘জিঙ্গার বার্গার’ ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না।” রোমিতাও ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। “আ বে তু ভি তো কুছ কম নেহি যাতি। খুব কিপটেমি করে জানো তো? কিছুতেই পয়সা বের করতে চায় না।” একে অপরের পিছনে লাগা।
কিন্তু তাই বলে সমস্যা নেই?
অবশ্যই আছে। এক এক জন একেক রকম। স্বভাবে এবং ব্যবহারে। যেমন, খড়গপুরের মেয়ে তানিয়া, মালদহের অঙ্কিতা, শিলিগুড়ির রেশমি। অভিযোগও আছে, “তানিয়া ভীষণ ট্যাঁশ। কেমন যেন। আমি আর রেশমি যদি কখনও জোরে কথা বলি বা গল্প করি, ওর দারুণ অসুবিধে হয়। তা ছাড়া ঘরের কোনও কাজে ও হেল্পও করে না।” অঙ্কিতা বলে ওঠে। একসঙ্গে থাকা, তাই বলে একটু-আধটু পলিটিক্স থাকবে না? “রেশমি আর অঙ্কিতা পলিটিক্স করতে ওস্তাদ। ঘরে ফিরেই রোজ কূটকচালি শুরু করে দেয়। বসেদের সঙ্গে ঝামেলা করে অফিসে। আর এখানে ফিরে আমার ওপর ফ্রাস্ট্রেশন তৈরি করে। ওদের মনে রাখা উচিত, এটা বাড়ি নয় যে যা খুশি তাই করবে।” এমন তো হামেশাই শোনা যায়।
আনন্দ যেমন আছে, রয়েছে ক্ষোভও। রয়েছে আরও হাজারো সমস্যা। সেই থেকে ঝগড়াও। একজন আরেক জনের বয়ফ্রেন্ডকে ফুসলিয়ে নেওয়ার পরিণতি শেষমেশ তুমুল ঝগড়ায় পরিণত হয়। তিন বন্ধু মিলে থাকে বেলঘরিয়ার একটা মেসে। সম্প্রতি চিড় ধরেছে সেই সুমধুর সম্পর্কে। “আর এক মুহূর্তও এখানে থাকতে চাই না।” কান্নায় ভেঙে পড়লেন দেবারতি। ওর আশা, এই পরিবেশ থেকে বেরোলেই বয়ফ্রেন্ড আবারও ফিরে আসবে।
তবে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের কালচারের পার্থক্য অনেক। “আমাদের একসঙ্গে হওয়া মানেই একটু এটা-ওটা চলতে থাকে। না হলে ফুলটুস মস্তি-টাই তো হয় না। তবে হ্যা।ঁ উই নেভার ক্রস আওয়ার লিমিটস,” বালিগঞ্জ এলাকার একটি অতিথিনিবাসের বহু দিনের আবাসিক মৃত্যুঞ্জয় সরকার এমনই মনে করেন। এখানে ছেলেদের হুল্লোড়বাজি প্রায়ই মাত্রা ছাড়ায়। দেরি করে ফেরা তো আরও এক ঝামেলা।
এমন তো হয়েই থাকে। মানিয়েও নেন গৃহকর্তা। এরকমই একজন বললেন, “হাতের পাঁচ আঙুল তো সমান হয় না।”
তবে সব কিছুরই তো শেষ আছে। চাকরি বা পড়াশোনা শেষ হলে আবারও চলে যেতে হয় সবাইকে এই সাময়িক ‘মায়া’ কাটিয়ে। আবারও সেই চেনা বাড়ি, বাড়ির লোক আর পরিচিত ফেলে আসা পরিবেশ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.