বেড়ানো...
ঈশ্বরের বাগান
ংলু। জেলা দার্জিলিং। এই পাহাড়ি গ্রামে থাকেন দুটো পরিবারের সাত জন মাত্র লোক। পাহাড়ি রাস্তায় মাত্র তিন ঘণ্টা হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় এই নিরালা ভূখণ্ডে।
হাঁটা আছে, কিন্তু মাইলের পর মাইল নয়। বড় জোর ঘণ্টা তিন-চার। উচ্চতা দশ বারো হাজার ফুটের মধ্যে। এমন জায়গায় ইদানীং বেড়াতে যাচ্ছেন অনেকে।
রাস্তা চড়াই নয়। সরু পথে খাদের ধার ঘেঁষে সাবধানে পা ফেলারও ঝুঁকি নেই। রুকস্যাক, স্লিপিং ব্যাগ বওয়া নেই। ন্যাপ স্য্যাকই যথেষ্ট। রেশনও নিতে হয় না। কিন্তু অল্প একটু হেঁটেই যেন অন্য গ্রহে পৌঁছে যাওয়া!
সাধ থাকলে এমন ট্যুরে যেতে বহু ক্রনিক রোগীকেও ছাড় দিচ্ছেন ডাক্তাররা। শুধু যাওয়ার আগে একবার রুটিন চেকআপ, মেডিকেল কিটটা ঠিকঠাক গুছিয়ে নেওয়া, ব্যস।
বার্সে। ছবি: অভ্র ঘোষ
‘আমরাই স্পট খুঁজছি। আপাতত কোনও ভ্রমণ সংস্থাই এ ধরনের কোথাও নিয়ে যায় না।’ বললেন কলকাতার এমনই এক সংস্থার প্রধান। “কয়েকটা লোকেশন দেখেওছি। তার মধ্যে টংলুর দিকের রাস্তাটা সবচেয়ে সহজ।”
টংলু। আয়তনে সাতাশ হেক্টর। মাত্র দুটো ঘরের গ্রাম। গ্রামের মধ্যিখানে একটা টিলা। ট্রেকার্স হাট থেকে টিলার মাথা তিন-চার তলা বাড়ি উঁচুতে। ওখানে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখলে সারা জীবনের অনেক না-পাওয়ার শোক যেন নিমেষে উধাও হয়ে যায়। পাখির উন্মুক্ত ডানার মতো দুধসাদা পাহাড়টা আকাশের নীল চাঁদোয়ার গায়ে এমন করে জেগে থাকে, বুকের কাছ ধক করে ধাক্কা লাগে।
হু হু কনকনে হাওয়া সারাক্ষণ। চাইলেই হাটের ভিতরে ঢুকে গরম ওম নেওয়া যায়। কিন্তু কিছুতেই মন চায় না। ছোট্ট মজে যাওয়া একটা পুকুর, ট্রেকার্স হাট, তার বাঁশের বেড়া, লোমশ দুয়েকটা সারমেয়র ইতিউতি ঘোরা, হাটের লাগোয়া রান্নাঘর, কেয়ারটেকার সিরিংজির পোষা মোরগ...। উপকরণ বলতে এগুলোই। কিন্তুই তাতেই অদ্ভুত সব দৃশ্যকল্প তৈরি হয়। আর এক অনাবিল প্রশান্তি। অবশ করে দেয় গোটা শরীর। ঈশ্বরের বাগানে এলে বোধহয় এমনই হয়!
শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা সুখিয়াপোখরি পেরিয়ে মানেভঞ্জন পেরিয়ে ধোত্রে। তার পর পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ি গ্রাম টংলু।
ধোত্রে। সে’ও বড় বিচিত্র। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটা গ্রাম। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, যখন তখন পাইনবনে মেঘ-রোদের লুকোচুরি। ডোরাকাটা আলো-আঁধারি। আকাশ সাফা তো কাঞ্চনজঙ্ঘা পরি হয়ে ফুটে থাকে আসমান জুড়ে। পাহাড়ের আড়াল শেষে, খাদের ধারে দাঁড়িয়ে সার সার কাঠের বাড়ি। খান কতক কংক্রিটের। লোকজন বড় আলাপি। কথা নেই, বার্তা নেই দু’কান জোড়া হাসি।
ধোত্রে থেকে টংলুর রাস্তাটা কখনও বাঁধাই, তো কখনও পাথুরে, কখনওবা মেঠো। দুধারে জংলা গাছ। কচি বাঁশের ঝোপ, পাইনের দঙ্গল, লকলকে ফারের সারি। থরে থরে ওষধি। শীতে গাছের ছায়ার নীচে বরফের আলপনা। আর কাঞ্চনজঙ্ঘা? হরকদম। মার্চে গেলে বনে তখন অন্য সাজ। আগুনে লাল, রডোডেনড্রনে।
পথে পড়ে একটা বিশাল বুগিয়াল। সেখানে দুদণ্ড জিরিয়ে আবার হাঁটা। এক ঘণ্টায় সোজা সিরিং শেরপার ডেরা। সিরিংজির বৌয়ের রান্না তোফা।
টংলু থেকে মেঠো পাহাড়ি পথ বেয়ে মিনিট চল্লিশেই হুস করে নেমে যাওয়া যায় টুমলিং। নেপাল বর্ডার। চাইলে এক পা ভারতে, আর এক পা নেপালে রেখে হেসেখেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় ওখান থেকে।
যেমন খুশি খাওয়া নেই। তেমন কোথাও যাওয়ার নেই। সেভেন পয়েন্ট-ফাইভ পয়েন্টের ঘোরা নেই। মোবাইলের লাইন এই আছে, তো এই নেই। শুধু আছে পাহাড়ের কোলে এখানে ওখানে ঘোরা আর অনাড়ম্বর নিস্তরঙ্গ জীবনে দিন কয়েক গড়িয়ে নেওয়া। তাতেই ফেরার দিন বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে!

যোগাযোগ: ৯৭৩৪১৫৭৫৬৫, ৯৭৩৩০ ০৫১৯১ (ধোত্রে),
৭৭৯৭৮০৫১৫৮ (টংলু), ৯৭৩৫০ ০০৬১৫/৯৫৯৩৩২০৪০৮ (টুমলিং)

আরও চার
রামিতে ভিউ পয়েন্ট
শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙের পাহাড়ি বসতি পেডং-বিশ মাইল গাড়িতে ৪ ঘণ্টা। সেখানেই রিসর্টে রাত কাটিয়ে পরদিন হাঁটা শুরু। পেডংয়ের মিলিটারি ক্যাম্পের উল্টো দিকে জংলা পাহাড়ি রাস্তা। ৩ কিমি হাঁটলে ডামসাংফোর্ট ধ্বংসাবশেষ। লেপচা রাজা গ্যাবো আচুকের বাড়ি। আরও ৩ কিমি হাঁটাপথে সিলারিগাঁও। সেখানেই হোম-স্টে। রাস্তা গোটাটাই জঙ্গল। পাহাড়ি গাছে ছাওয়া। পরদিন ১ কিমি-র একটু বেশি হাঁটলে একেবারে পাহাড়ের চুড়োয় রামিতে ভিউ পয়েন্ট। চারদিকে ঘেরা কালো পাথুরে পাহাড়, এখানে ওখানে সবুজ গাছ, গুল্মে ভরা। বহু নীচে বয়ে চলে তিস্তা নদী। আকাশ জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
বার্সে
শিলিগুড়ি থেকে গাড়িতে ৫/৬ ঘণ্টায় সিকিমের হিলে। সেখানে এলএন শেরপার লজে থাকা। পরদিন সকলে স্যাংচুয়ারিতে ঢোকার অনুমতি নিয়ে ট্রেক শুরু জংলা পথে। দু’ধারে সার সার রডোডেনড্রন, কচি বাঁশের ঝোপ। চার কিমি হাঁটলেই বার্সে। থাকার জন্য গুরাসকুঞ্জ ট্রেকার্স হাট। হাটের সামনে খোলা চত্বর। ঝাঁকড়া মাথাওয়ালা গাছ। পাহাড়ি ফুল। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। বার্সে থেকে ছোট ছোট ট্রেক করে যাওয়া যায় ডেনটাম, সোরেং, বুড়িখোপ। হাট থেকে ৪ কিমি দূরে গুরাসতাল।
দেওরিয়াতাল
হরিদ্বার থেকে গাড়িতে উখিমঠে এসে ওখানেই রাত কাটান। পরদিন গাড়িতে চলুন ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম সারি। লখপত সিং নেগির ট্রেকার্স হাটে। সারি থেকে হাঁটা পথে ৩/৪ ঘণ্টায় দেওরিয়াতাল। হ্রদের সামনে টেন্টে রাত কাটান। উল্টো দিকে চৌখাম্বা পাহাড়। হ্রদের জলে তার ছায়া তির তির করে কাঁপে। সারি থেকে গাড়িতে গিয়ে থাকতে পারেন চোপতায়। সেখান থেকে হাঁটা পথে ৩-৩.৫ কিমি দূরে তুঙ্গনাথ। আরেক নিরালা ঠিকানা। ভোরের আলো ফোটার আগেই ১ ঘণ্টার খাড়াই পথ পেরলে চন্দ্রশিলা। যেখানে দিনের প্রথম আলো গায়ে মেখে দু’ হাত ছড়িয়ে জেগে ওঠে হিমালয়।
কুর্গ
কর্নাটকের পাহাড়ি জেলা কুর্গে হোম স্টে-তে থাকাই যায়। কিন্তু ছোট একটা টেন্ট সঙ্গে নিলে আঠেরো আনা অন্য স্বাদ। বেঙ্গালুরু থেকে রাতে বাসে উঠে সকালে মাদিকারি (স্থানীয় নাম মারকারা)। এর পর গাড়িতে ১০ কিমি দূরে কুর্গের অন্দরমহল। পাহাড়ি ঢালে কফি আর ওষধি চাষের জমি। মশলার বাগান। সবুজ উপত্যকা। হাঁটা পথে কিছুটা গিয়ে ক্যাম্পিং করে রাত কাটানো যায়। তা না চাইলে ৩কিমি পায়ে হেঁটে চলে যান হানি ভ্যালি। সবুজ পাহাড়, কখনও মেঘ, কখনও রোদ। হঠাৎ কুয়াশা। ওখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থাভিয়ানভামোন দেখতে সকালে বেরিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায়।


তথ্য সহায়তা: বিজয় দত্ত, সুপ্রতিম ঘোষ ও অভ্র ঘোষ

চেক লিস্ট
• পর্যাপ্ত শীতের জামা কাপড় নেবেন। উলের ক্যাপ, উলিকটের আপার ও লোয়ার ইনার, ভালো জ্যাকেট, সোয়েটার, গ্লাভস, উলের মোজা
• ন্যাপ স্যাক হালকা রাখুন, দরকারে পোর্টার নিন
• ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধপত্র
• হাঁটার সময় কাছে লজেন্স রাখবেন, ভর দিয়ে চলার লাঠি
• জল ফুটিয়ে খাবেন
• খাওয়া-থাকা নিয়ে কোনও বিলাসিতা পাবেন না, টয়লেট ইন্ডিয়ান স্টাইল
• বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটর চলে অল্প সময়ের জন্য। তাতে সুযোগ মতো মোবাইলে চার্জ দেওয়া যায়
• হাঁটার সময় বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা বা বড় প্লাস্টিক কাছে রাখুন


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.