|
নানা রকম ১... |
|
কাব্যনাট্যে নিপুণ মহাভারত কথা |
‘প্রথম পার্থ’ দেখে এসে লিখছেন বারীন মজুমদার |
বিষয়বস্তু এক হলেও রবীন্দ্রনাথের ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’ যতটা সাধারণের মধ্যে পরিচিত বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রথম পার্থ’ ততটা নয়। অথচ কী বলিষ্ঠ লেখনীর মধ্যে দিয়ে বুদ্ধদেব বসু মহাভারতের এই বিশেষ অংশটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর কাব্যনাট্যে। প্রতিটি অংশেই টানটান উত্তেজনা। চরিত্রগুলি যেন চোখের সামনে বাস্তব হয়েই ধরা দেয়। পাণ্ডব জননী কুন্তী এসেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে অধিরথ সূতপুত্র কর্ণের কাছে তাঁকে জ্যেষ্ঠ পুত্ররূপে বরণ করে নিতে। এই নিয়ে তাদের সংলাপের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে ঘাত-প্রতিঘাতের বিষয়। এটাই নাটকের প্রথম অঙ্ক। দ্বিতীয় অঙ্কে কর্ণ ও দ্রৌপদীর সংলাপ। |
|
তৃতীয় ও শেষ অঙ্কে কৃষ্ণ ও কর্ণের বাকযুদ্ধ। মধ্যে দুই বৃদ্ধ আছেন যাঁরা অনেকটা সূত্রধরের ভূমিকা পালন করেন। ‘উপাসক’এর আয়োজনে ও রায়া ভট্টাচার্যের সামগ্রিক পরিকল্পনায় ‘প্রথম পার্থ’ উপস্থাপিত হল কলামন্দিরে শ্রুতিনাট্যরূপে।
যে কারণে রায়া যথার্থই ধন্যবাদার্হ। এমন গভীর নাট্যসম্পন্ন অনুভূতিতে ঠাসা চারটি চরিত্রের কাব্যনাট্য পাঠ ইদানীং শুনিনি। শ্রোতাদের কৌতূহল ছিল তাই তুঙ্গে।
এ দিনের বিস্ময়কর প্রাপ্তি কর্ণের ভূমিকায় শ্রীকান্ত আচার্য, তিনি যে দক্ষ সঙ্গীতশিল্পী সে কথা সর্বজনবিদিত। কুরুসেনাপতি ও আপন পৌরুষে বলীয়ান কর্ণের ভিতরের দ্বন্দ্ব যে ভাবে তাঁর কণ্ঠাভিনয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে এক কথায় তাকে অনবদ্য বলা যেতে পারে।
এ যেন শ্রীকান্তের অন্য প্রতিভারও অভাবনীয় প্রকাশ। শ্রুতিনাটকে শারীরিক ভাষা না থাকলেও শুধু কণ্ঠের মাধ্যমে একটা চরিত্রকে কতখানি প্রাণবন্ত করা যায় তার উজ্জ্বল নিদর্শন রেখে গেলেন তিনি। রায়া ভট্টাচার্য শুরু থেকেই কুন্তীরূপে চরিত্রের ভিতরে ডুবে গিয়েছিলেন।
কণ্ঠের অভিব্যক্তির মাধ্যমে যে বুদ্ধিমত্তার ছাপ তিনি রাখলেন তাতে তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য প্রকাশ পায়। কর্ণ আর কুন্তী অর্থাৎ শ্রীকান্ত আর রায়ার জুটি বহু দিন মনে রাখবেন শ্রোতারা। কেউ-ই কম যাননি। |
|
দ্রৌপদীর চরিত্রে অসাধারণ দাপটের সঙ্গে গার্গী রায়চৌধুরী নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। কখনও ধীর-স্থির, কখনও স্ব-মহিমায়। দ্রৌপদীর ভূমিকায় গার্গী চূড়ান্ত সফল। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী (কৃষ্ণ) স্বাভাবিক অভিনয়েই দৃষ্টি কাড়েন। কোনও সময়েই তাঁকে ভাবাবেগে ভেসে যেতে দেখি না। অথচ কী নিপুণ শক্তিশালী উচ্চারণ। ধনঞ্জয় দাস ও সুমিত্রও যথাযথ। আলোর প্রক্ষেপণ, মঞ্চ পরিকল্পনা, সঙ্গীতের ব্যবহার সব মিলিয়ে ‘প্রথম পার্থ’ একটি মুহূর্তের জন্যও শ্রোতাদের অন্যমনস্ক হতে দেয় না।
দ্বিতীয়ার্ধে ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় ও দীক্ষামঞ্জরীর ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা নিবেদিত হল রবীন্দ্রনাথের ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্যটি। সঙ্গীতাংশ সিডিতে ধৃত। মঞ্চের ব্যবহারে সামগ্রিক পদছন্দে সর্বোপরি দেহভঙ্গিমায় কমলিকা করে তোলেন ডোনা। অরুণেশ্বরের ভূমিকায় ছিলেন রঘু যাঁর নৃত্যছন্দও চমৎকার। ডোনার পাশাপাশি সানাকেও মঞ্চে পাওয়া গেল যেখানে সানা নৃত্যের প্রতিটি ছন্দে সফল ভাবে উত্তীর্ণ। |
ছবি: কৌশিক সরকার |
|