মুখোমুখি ২...
গানওয়ালা এমবিবিএস

চোদ্দো বছর ‘ইউফোরিয়া’য় কাটালেন। ক্লিনিকে যান এখনও?
আমি অর্থোপেডিক সার্জেন। দিল্লিতে থাকলে এখনও ক্লিনিকে গিয়ে বসি। আমার বাড়ির বেসমেন্টের এক দিকে আমার ক্লিনিক আর অন্য দিকে আমার স্টুডিও। ছোটবেলা থেকেই জানতাম আমাকে ডাক্তার হতেই হবে। মিউজিশিয়ান হওয়াটাকে বলি একটা ‘সুখকর দুর্ঘটনা’। তবে আমার মাকে কথা দিয়েছিলাম যে গান গাইলেও ডাক্তারি কোনও দিন ছাড়ব না। তাই আজ অবধি সেটা করি।

এখনও সার্জারি করেন?
না, সেটা আর করতে পারি না। কারণ তার জন্য তো একটা নার্সিং হোমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।

সেলিব্রিটি পেশেন্ট আছে আপনার?
আমার সব মিউজিশিয়ান বন্ধু মাঝে মধ্যে ফোন করে জিজ্ঞেস করে কী ওষুধ খাবে। এম বি বি এস ডিগ্রিটা তো আছে। তাই ওদের বলে দিই। তার পর তো এর পিঠে ব্যথা, ওর শিরদাঁড়ায় ব্যথা, লেগেই আছে।

শাহরুখ তো আপনার সঙ্গে স্কুলে পড়তেন? ওঁর যখন পিঠে ব্যথার সমস্যা হয়, কনসাল্ট করেছিলেন আপনার সঙ্গে?
শাহরুখ আর আমি স্কুলে বন্ধু ছিলাম। ও আমার থেকে এক ক্লাস জুনিয়র ছিল দিল্লির সেন্ট কলম্বাস স্কুলে। ওর পিঠে ব্যথার ব্যাপারটা শুনেছি। তবে না। আমাকে জিজ্ঞেস করেনি কিছু।

স্কুলে থাকতে শাহরুখের সঙ্গে গান, বাজনা, থিয়েটার করেছেন?
হ্যাঁ। একটা মিউজিক্যাল করেছিলাম একসঙ্গে। নাম ‘উইজার্ড অব ওজ’। শাহরুখ তো গান করতে পারে না। তাই আমি ওর প্লে-ব্যাক করেছিলাম। ও ‘ওজ’য়ের চরিত্রে ছিল। স্কুলে থাকাকালীনই আমরা বুঝতাম অভিনেতা হবে ও। ওর জগৎটাই ছিল ‘সিনেমা’। আর আমি চাইতাম ডাক্তার হতে। হয়েও গেলাম।

আজও কি শাহরুখের সঙ্গে বন্ধুত্বটা সমান ভাবে রেখেছেন?
দেখুন, আজ যদি বলি শাহরুখ আমার ভীষণ ভাল বন্ধু, তা হলে ভুল বলা হবে। তবে দেখা হলে আজও ওর মধ্যে আন্তরিকতা খুঁজে পাই। আজ জোর করে আমি বেশি বন্ধুত্ব জাহির করতে চাই না। কারণ আজকে সেটা করলে মনে হবে যে আমি ফিল্মে কাজ করতে চাই বলেই ওর সঙ্গে বন্ধুত্বটা বেশি করে দেখাচ্ছি। ফিল্মের ব্যাপারে কোনও মোহ নেই আমার।

মানে? আপনি তো বলিউডে অভিনয়ও করেছেন?
হ্যাঁ। আমি দু’টো দিকই দেখেছি। মিউজিকের দুনিয়াটাও জানি। মিউজিক নিয়েই থাকতে চাই। তবে ফিল্ম মিউজিক নয়। হিন্দি ফিল্মে গান গাওয়ার অফার পাই অনেক। ‘না’ বলে দিই।

এটা সত্যি?
হ্যাঁ। সত্যি আমি ওই ধরনের সস্তা গান গাইতে পারব না। চোদ্দো বছর মিউজিক করছি। তবে এখন যা হচ্ছে তা দেখে কষ্ট হয়। বলিউড সব কিছু গ্রাস করে নিয়েছে। এমনকী মিউজিক চ্যানেলগুলোতেও যদি আমি একটা ভাল মিউজিক ভিডিও বানাই, সেটা কিন্তু আমি দেখাতে পারব না।

কেন?
আরে সব কিছু তো বলিউড কিনে নিয়েছে। সব গানের সব স্লট প্রি-বুকড। আমার অত টাকা আছে না কি যে একটা চ্যানেল খুলে তাতে নিজের ভিডিও দেখাব? বলিউডের এখন একটাই ফর্মুলা। একশো কোটি, দু’শো কোটি টাকার ছবি বানানো। তাতে না আছে ভাল চিত্রনাট্য, না আছে ভাল এসথেটিক্স। কিন্তু সেই বাজে ছবিগুলোকে প্রোমোট করার জন্য জলের মতো পয়সা খরচ করছে প্রযোজকরা। চ্যানেলে চ্যানেলে শুধু ওই সিনেমার গান। সিনেমাগুলোকে প্রোমোট করার জন্যই গান তৈরি হচ্ছে। যাঁরা ছবি বানান, তাঁরাও জানেন যে, কোয়ালিটি জিনিস বানাচ্ছেন না তাঁরা। তাই উপায় কী? এঁরা দর্শকের মনোযোগটা পুরোপুরি কিনে নিচ্ছেন। কার্পেট-বম্বিং করছে। প্রিন্ট মিডিয়া কিনে নিচ্ছে। জায়গা কিনছে ইন্টারনেটে। আর ওখানে ওই সব গান। শ্রোতাদের না শুনে উপায় নেই। যারা বোকা তারা ওটাই শুনছে। বলিউডের তাবড় তাবড় সঙ্গীত পরিচালকই তো এই সিস্টেমের শিকার।
ইদানীং কি একটা গানও হিন্দি ছবির নেই যেটা আপনার মনের মতো হয়েছে?
‘রকস্টার’-এর গানগুলো ভাল। যদিও রহমান এর থেকেও ভাল কাজ করেছেন। তবে আমি বলব ‘রকস্টার’-এর গানগুলো কিন্তু অন্য গানের থেকে আলাদা। কারণ পরিচালক ইমতিয়াজ আলি বুদ্ধিমান।

এ সবের মধ্যে কি আক্ষেপ হয় যে আপনি ফুল টাইম ডাক্তারি ছেড়ে গানের পেছনে ছুটলেন?
না। আজও মাসে দশ-এগারোটা শো করি। তার মানে লোকে আমাদের গান ভালবেসে শুনতে চায়। যেটা খারাপ সেটা হল ‘রাউডি রাঠোর’-এর প্রযোজকের মতো আমার অত টাকা নেই, নিজের গানগুলোকে পুশ করার। শাহরুখ আমার প্রিয়। তবু বলছি যখন ‘রা-ওয়ান’ রিলিজ হল, তখন তো শাহরুখ, ছবি প্রোমোট করতে কোনও জায়গা ছাড় দেয়নি। সম্প্রতি আমার একটা ভিডিও লঞ্চ হয়েছে। নাম ‘ম্যায় হুঁ’। আমি তো কোথাও শোনানোর মতো স্লটই পাচ্ছি না। আর একটা অসুবিধে হল, অন্য শহরে মনোরঞ্জনের কোনও মাধ্যমই সে ভাবে নেই। তাই সব কিছুই ফিল্ম-কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। একটা পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের ছেলেকে জিজ্ঞেস করুন। সে বলবে জীবনে তার উদ্দেশ্য হল কী ভাবে একটা মেয়েকে পটাতে পারবে। আর পটানোর উপায়টাই বা কী। সিনেমার হিরোদের মতো দ্রুত গতিতে বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়ানো বা সস্তা কথা বলা। এটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। দিল্লির ‘ধর্ষণ’ নিয়ে এত কথা বলছি আমরা। কেউ এটা বলছে না যে, ‘উই আর গেটিং রেপড বাই দ্য সিস্টেম’। সব্বাই শুধু বোঝে টাকা আর ক্ষমতা। সৌন্দর্যবোধ, সম্মানবোধ চুলোয় যাক সব।

তা হলে এখন প্ল্যান ‘বি’টা কী?
দেখুন, আমি তা’ও ভিডিও বানিয়ে যাচ্ছি। অন্যরাও করছে। শান, সোনু সবাই করছে।

এর কারণ কি এটা নয় যে, নামীদামি গায়করা আর সেভাবে হিন্দি সিনেমাতে গাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না? যাঁরা সুর বাঁধছেন, তাঁরাই তো গাইছেন।
আরে সত্যি কথা হল যে, আজকাল গায়করা সিনেমাতে গাইলে অনেক সময় টাকাই পান না। ওদের বলা হয় গানটা গাইলে গায়করা তো শো-তে সেগুলো গেয়ে পয়সা রোজগার করবেন। তা হলে প্লে-ব্যাকের জন্য পয়সা চাওয়ার কী দরকার! এ ছাড়া এখন তো বেসুরো গায়কদের ‘পিচ-কারেকশন’ করেই গায়ক করে দেওয়া হচ্ছে। আমাকে তো ছবিতে গাইতে বললে ‘না’ করে দিই আমি।

লোকে এটা শুনলে বলবে সত্যিটা হল, আঙুর ফল টক।
লোকে বলে বলুক। আমার কী এসে যায়? আমার ‘না’ বলাটা একদম কঠিন নয়। এটা ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। একশো জন মূর্খ শ্রোতার চেয়ে দশ জন ভাল শ্রোতা শুনলে আমার বেশি ভাল লাগবে। দশ জন ভাল শ্রোতার মূল্য অনেক বেশি আমার কাছে। ড. পলাশ সেন হয়তো গান গেয়ে x পাবে। মিকা হয়তো গান গেয়ে x+y পাবে। আমি নাই বা পেলাম y টা। আমার কোনও দরকার নেই এমন একটা বাগানবাড়িতে থাকার, যেখানে উট আছে, হাতি আছে। ওগুলো দেখতে গেলে আমি চিড়িয়াখানাতে যাব। আর যাঁরা বলবেন আঙুর ফল টক, তাঁদের বলি, এখনও আমি ডাক্তার। গান চ্যানেলে না বাজতে পারে। তবু আমার থেকে আমার ডাক্তারি ডিগ্রিটা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমি যে আমার সম্মান অক্ষত রেখে এখনও চলতে পারছি, এটা তো ভগবানের আশীর্বাদ। শো-বিজ ছাড়া জীবন থাকবে না। কিন্তু বিদ্যেবুদ্ধিটা তো থাকবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.