দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
বেহাল হাসপাতাল
ভঙ্গুর পরিষেবা
মূল ভবনের বাইরের অংশের দীর্ঘ দিন সংস্কার হয়নি। কোথাও বারান্দা, কোথাও জানলার কার্নিশ ভেঙে পড়ছে। কোথাও আবার ভেঙে গিয়েছে রেনপাইপ। দেওয়ালের ফাটলে গাছ গজিয়েছে। গোটা চত্বর আগাছায় ভরা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে চিকিৎসা-বর্জ্য। এমনই হাল বজবজের কর্মচারী রাজ্য বিমা হাসপাতালের (ইএসআই)।
শুধু কর্মচারীরাই নন, এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন বজবজ, নুঙ্গি, মহেশতলা, পূজালি এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাও। আপৎকালীন চিকিৎসার জন্য অনেকেই এই হাসপাতালে ছুটে যান। বাসিন্দারা জানান, এলাকায় উন্নতমানের কোনও হাসপাতাল না থাকায় অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের বজবজ ইএসআই হাসপাতালে যেতে হয়।
কিন্তু এই হাসপাতাল নিয়ে বাসিন্দা এবং রোগীর পরিজনদের অভিযোগের শেষ নেই। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসক এবং কর্মীর অভাব রয়েছে। নানা পরীক্ষার জন্য বাইরে যেতে হয়। বেশির ভাগ সময়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এক রোগীর আত্মীয় সৈকত রায় বলেন, “পানীয় জলের মান খুব খারাপ। চিকিৎসকরাও সময়মতো আসেন না। অধিকাংশ জিনিস বাইরে থেকে কিনতে হয়।” অভিযোগ, কর্মী আবাসনের এমনই অবস্থা যে অনেক কর্মীই আবাসন ছেড়ে অন্যত্র থাকেন।
যদিও এ সব অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বজবজ ইএসআই হাসপাতালের সুপার সুরেশচন্দ্র সাহা। তাঁর দাবি, “গত ছয় মাসে এই হাসপাতালের চেহারা বদলে গিয়েছে। গ্রাউন্ড ফ্লোর, রান্নাঘর, লেবার রুম, হাসপাতালের ছাদ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সংস্কার করা হয়েছে। রোগীদের খাবারের মানও অনেক উন্নত হয়েছে। আগামী দিনে হাসপাতাল চত্বরে সাইকেল রাখার স্ট্যান্ড করা হবে। নতুন জেনারেটর, এক্সরে মেশিন এবং প্যাথোলজি পরীক্ষার জন্য উন্নত সরঞ্জাম আনা হবে।”
হাসপাতালের বাইরের নানা জায়গা যখন ভেঙে পড়ছে তখন ভিতরে ঝাঁ-চকচক করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, রোগীদের চিকিৎসার মান আরও উন্নত করার চেষ্টা করা হোক। বজবজ ইএসআই হাসপাতাল সূত্রের খবর, মূল ভবনটির বাইরের অংশ সংস্কারের জন্য ৬৩ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির অনুমোদন হলে সংস্কার হবে।
তবে হাসপাতাল চত্বরের আগাছা সাফাই, কর্মী আবাসনের সংস্কার, চিকিৎসা-বর্জ্য সাফাইয়ের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ কথা বলতে চাননি।
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “রাজ্যের সব ক’টি ইএসআই হাসপাতালের সমস্যার কথা কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ইএসআই কর্পোরেশনকে জানানো হয়েছে। তাঁদের কাছে প্রকল্পও পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বজবজের হাসপাতালও রয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন এলে গুরুত্ব অনুযায়ী ধাপে ধাপে হাসপাতালটির উন্নয়নের কাজ হবে।”

ছবি: অরুণ লোধ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.