|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
কালীঘাট যাত্রিনিবাস |
দ্বার খোলার প্রতীক্ষায় |
কৌশিক ঘোষ |
নামেই যাত্রিনিবাস। কালীঘাট মন্দিরের কাছেই এই পোড়োবাড়িটি বহু দিন ধরেই পড়ে ছিল। এলাকায় ‘দুধওয়ালা ধর্মশালা’ নামেই বেশি পরিচিত বাড়িটি। পরবর্তী কালে কলকাতা পুরসভা এই বাড়িটি সাংসদ তহবিলের অর্থে পুনর্নির্মাণ করে। গত বছরের জানুয়ারিতে এই যাত্রিনিবাসটির উদ্বোধনও করে পুরসভা। তার পর থেকে এই অতিথিশালা তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কবে এই যাত্রিনিবাস ব্যবহারযোগ্য হবে তার কোনও ইঙ্গিত এখনও মেলেনি।
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভা এই যাত্রিনিবাসটি কোনও সংগঠনের মাধ্যমে চালাতে চায়। তবে চেষ্টা চালাচ্ছি। যত ক্ষণ না কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে চূড়ান্ত ভাবে এই যাত্রিনিবাসটি হস্তান্তর করা হচ্ছে তত ক্ষণ নির্দিষ্ট ভাবে এই যাত্রিনিবাসটি খোলার ব্যাপারে কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।”
|
|
এলাকার বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যাত্রিনিবাসটি যাত্রীদের কোনও কাজেই আসছে না। তবে শুধু খুললেই হবে না। এই যাত্রিনিবাসটির প্রচার চাই। পুরসভাকেই এই কাজ করতে হবে। পুরকর্তৃপক্ষকে আমি নিজে এই যাত্রিনিবাস খোলা এবং প্রচারের ব্যাপারে জানিয়েছি।”
পুরকর্তৃপক্ষ জানান, এখনও এখানে পরিকাঠামোগত কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলি চলছে। তবে, যাত্রিনিবাস চালানো পুরসভার কাজ নয়। কোনও স্বেচ্ছাসেবী বা ধর্মীয় সংগঠনের মাধ্যমে এটিকে শর্তসাপেক্ষে চালাতে হবে। কী ভাবে তা চালানো যাবে এবং কোন সংস্থা এই যাত্রিনিবাসের দায়িত্বে থাকবে তা ঠিক করতেই সময় লাগছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, বহু দিন আগে কালীঘাটের সদর ঘাটের বর্তমান যাত্রিনিবাসটি পুরসভাকে কোনও এক ব্যক্তি দান করেন। তার পরে এই বাড়িটি ‘দুধওয়ালা ধর্মশালা’ হিসেবেই পরিচিত হয়। অনেক আগে কালীঘাটে পুণ্যার্থীরা এলে এখানে থাকতেন। পরবর্তী কালে, মেরামতির অভাবে বাড়িটির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই বাড়িটি জবরদখল করে নানা ধরনের অসামাজিক কাজের আখড়ায় পরিণত হয়।
|
|
পরে পুরকর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। ২০০৪-এ তৎকালীন স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান দিলীপ মজুমদারের উদ্যোগে এবং তৎকালীন সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ তহবিলের অর্থে যাত্রিনিবাসটি পুনর্নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই বছরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই যাত্রিনিবাসটির শিলান্যাস করেন। পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দফতর এই যাত্রিনিবাসটি পুনর্নির্মাণ করে।
পুরসভা সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের জন্য খরচ ধার্য করা হয় ৯০ লক্ষ টাকা। এই অর্থের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে ৪৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। বাকি অর্থ বরাদ্দ করে পুরসভা। দোতলা এই বাড়ির ওপরে মোট ঘরের সংখ্যা ১১। নীচে ঘরের সংখ্যা পাঁচ। পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দফতরের এক আধিকারিক জানান, নীচের ঘরগুলি অপেক্ষাকৃত বড় যাতে একসঙ্গে অনেকে থাকতে পারেন। দোতলার ঘরগুলি অপেক্ষাকৃত ছোট।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী মজুমদার বলেন, “আমি এই যাত্রিনিবাসটি খোলার ব্যাপারে পুরসভাকে অনুরোধ করেছি। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এই যাত্রিনিবাসের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে শুনেছি।” |
|
কালীঘাট মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ হালদার বলেন, “এই যাত্রিনিবাসটি চালু হলে অনেক গরিব তীর্থযাত্রীর সুবিধা হবে। রাজ্য পর্যটন দফতর এখানে একটি যাত্রিনিবাস চালাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর ভাড়া সবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই পুরসভার যাত্রিনিবাসটি খোলা দ্রুত প্রয়োজনীয়। যে ভাবে এখানে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে তাতে কালীঘাটে যাত্রীদের জন্য সুরক্ষিত যাত্রিনিবাসও প্রয়োজন। আমরা পুরসভাকে এই ব্যাপারে সহযোগিতা করতে চাই।” কালীঘাট ব্রাহ্মণ ও কর্মী সংগঠনের সহ-সভাপতি শেখর দাস বলেন, “এলাকার উন্নতিকল্পে এই যাত্রিনিবাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যাত্রিনিবাসটি খোলা ছাড়াও এলাকার রাস্তাঘাটের সামগ্রিক উন্নতি প্রয়োজন।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|