ছিল স্কুলবাড়ি। হয়ে গেল বৌভাতের ভোজবাড়ি। অভিযোগ, সেখানে শুধু পাত পেড়ে খাওয়াই নয়, মাঝরাত পর্যন্ত চলেছে বড় বড় বক্স বাজিয়ে নাচ-গান-হুল্লোড়। অভিযোগ মদ্যপানেরও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তাঁদের অভিযোগ পেয়ে মাঝরাতে ছুটে আসে পুলিশ। শেষে পুলিশি হস্তক্ষেপেই গান বন্ধ হয়।
হাওড়া শহরে বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনা ঘটেছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের এক হিন্দি মাধ্যম স্কুলে। বিক্রম বিদ্যালয় ব্রাঞ্চ নামে ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রী প্রায় তিন হাজার। পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পরেই স্কুলভবনটি ছেলের বৌভাতে ব্যবহারের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। অভিযোগ, স্কুলের ফাঁকা চত্বরে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোজের পাশাপাশি চলে গানবাজনা, হুল্লোড় ও মদ্যপান।
স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ জয়সোয়াল বলেন, “গানবাজনার শব্দে ঘুমোতে পারিনি। মাঝরাত পর্যন্ত হুল্লোড় চলে। শেষে পুলিশ এসে থামায়।” বাসিন্দাদের প্রশ্ন, স্কুলে কী করে এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়?
এ দিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, দরজা দিয়ে ঢোকার মুখেই জমে রয়েছে নোংরা জল। চার দিকে দুর্গন্ধ। তার মধ্যেই স্কুল চলছে। পান-গুটখার পিক দেওয়ালে ও মেঝেতে। স্কুলের সকালের বিভাগের শিক্ষক ব্রিজকিশোর মিশ্র বলেন, “কী ভাবে স্কুল নোংরা করেছে দেখুন। এ ভাবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল বৌভাতে ব্যবহার করতে দিয়ে নাচ-গান-মদ্যপানের আসর বসানো যায় কি?” স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরেশ রায়ের দাবি, তিনি অনুষ্ঠানের কথা জানতেন না। এমনকী, বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে যাওয়ার আগেও নয়। তাঁর দাবি, তিনি জানলে এ সব হতে দিতেন না। সুরেশবাবু বলেন, “এ ধরনের অনুষ্ঠান যে হবে, তা আমাকে জানানো হয়নি। পরিচালন কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়নি। যা হয়েছে তা স্কুলের সম্পাদক সঞ্জয় সিংহ নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছেন।”
স্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদক তথা হাওড়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন বিজেপি কাউন্সিলর সঞ্জয় সিংহ বলেন, “কোনও অন্যায় করিনি। এক জন গরিব মানুষের বৌভাতে স্কুল ব্যবহার করতে দিয়েছি। সেখানে নাচ-গান মদ্যপান হয়েছে বলে জানা নেই। খোঁজ নেব।” তবে বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামল হাতি স্পষ্ট জানান, স্কুলে এমন অনুষ্ঠান তাঁরা সমর্থন করেন না। শ্যামলবাবু বলেন, “স্কুল পঠনপাঠনের জায়গা। সেখানে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান হবে কেন? খোঁজ নিয়ে দেখব কেন ওই অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি দেওয়া হল।”
হাওড়ার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপসকুমার বিশ্বাস বলেন, “স্থানীয়েরা অভিযোগ করলে আমরা স্কুল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব। কারণ দর্শাতেও বলা হবে। স্কুলের মধ্যে যা খুশি করা যায় না।” |