হুগলিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্প। চলতি আর্থিক বছর (২০১২-২০১৩) শেষ হতে চলল। অথচ, ওই প্রকল্পে এ বারে বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি এখনও খরচ করতে পারেনি জেলা পরিষদ। উপভোক্তা নির্বাচনের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছিল, তা-ও পূরণ হয়নি। এই অবস্থায় চলতি আর্থিক বছরে আর যে ক’দিন রয়েছে, তার মধ্যে উপভোক্তা নির্বাচন করে প্রকল্পের টাকা খরচ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসনেরই একাংশ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে ১৮টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েতের ১২,০৬৪ জন উপভোক্তার হাতে ওই প্রকল্পের টাকা তুলে দেওয়া হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৫৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে জেলা পরিষদ প্রথম দফায় ৫০৬১ জন উপভোক্তার জন্য ২২ কোটি ৭৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ব্লকগুলিতে ভাগ করে পাঠায়। এই টাকারই অর্ধেকের বেশি পড়ে আছে। বাকি ৩১ কোটি ৫১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা খরচের উপভোক্তাই বাছা হয়নি।
১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি সারা দেশে চালু হয়। উপভোক্তাপিছু বর্তমানে বরাদ্দ ৪৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে ৭৫ শতাংশ, বাকিটা রাজ্য সরকার। উপভোক্তাদের অবশ্যই বিপিএল তালিকাভুক্ত হতে হবে। তাঁদের কমপক্ষে একটি ২১৫ বর্গফুটের পাকা ঘর এবং সঙ্গে ধোঁয়াহীন চুল্লি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার বানাতে হবে। প্রথম কিস্তিতে উপভোক্তাদের সাড়ে ২২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তাঁরা সেই টাকার সদ্ব্যবহার দেখাতে পারলে পঞ্চায়েত প্রধানদের শংসাপত্র অনুযায়ী ব্লক অফিস থেকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পান।
কিন্তু হুগলিতে প্রকল্পটি এ বারে মুখ থুবড়ে পড়েছে কেন?
কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসন বেশ কিছু সমস্যার দিকে আঙুল তুলেছে। প্রথমত, প্রথম দফায় যে ক’জনকে নির্বাচিত করে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে, তা সদ্ব্যবহারের শংসাপত্র ব্লকগুলি পাচ্ছে না বললেই চলে। শংসাপত্র না-পাওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পড়ে রয়েছে। শংসাপত্র দেওয়ার কথা পঞ্চায়েত প্রধানের। কিন্তু প্রধানরা তদন্তে গিয়ে দেখছেন, অনেক উপভোক্তা বাড়িই করেননি। আবার যাঁরা করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই প্রকল্পের নিয়ম মোতাবেক বাড়ি নির্মাণ করেননি।
প্রকল্পের জেলা আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামীণ পরিবার সমীক্ষায় প্রকল্পের শর্ত মেনে উপভোক্তা খুঁজে পাওয়া সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। বিপিএল-এর নির্দিষ্ট মান থেকে অনেক গ্রামবাসীই উন্নীত হয়েছেন।” এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন গত ১৪ জানুয়ারি বিডিও-দের নিয়ে একটি বৈঠকও করে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) জানান, অসুবিধা কাটিয়ে বিডিওদের প্রকল্পটির রূপায়ণে গতি আনায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দ্রুত টাকা খরচ করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত কয়েকটি ব্লকে প্রকল্পটি কতটা রূপায়িত হয়েছে, তা এক বার দেখা যাক। পুড়শুড়ায় ৪৫০ জন উপভোক্তাকে টাকা দেওয়া হবে বলে স্থির হয়। তার মধ্যে ব্লক প্রশাসন ২৫১ জনকে নির্বাচন করে প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছে গত বছর অগস্টে। কিন্তু এখনও অবধি মাত্র ৪৭ জন উপভোক্তা টাকা সদ্ব্যবহার করেছেন বলে শংসাপত্র পাওয়া গিয়েছে। বাকি ২০৪ জনের অনেকেই বাড়ি না-করে টাকা খরচ করেছেন। কেউ বাড়ি তৈরি শুরু করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে মাটির গাঁথনি করেছেন বলে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানেরা জানান। গোঘাট-১ পঞ্চায়েতে এখনও পর্যন্ত ১৪৫ জনকে নির্বাচিত করে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা সদ্ব্যবহারের শংসাপত্র মেলেনি। আরামবাগ ব্লকের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৮০০ জন। এর মধ্যে ৪১০ জনকে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকার সদ্ব্যবহারের শংসাপত্র গুটিকয়েক মিলেছে। এই বেহাল দশা ধরা পড়েছে ধনেখালি, খানাকুলের দু’টি ব্লক, তারকেশ্বর-সহ জেলার অধিকাংশ ব্লকে। বহু পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য মনে করেন, উপভোক্তাপিছু বরাদ্দ বাড়ানো হলে প্রকল্পে গতি আসবে। |