নির্যাতিতাদের হয়ে মামলা লড়েন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের কর্মস্থলেই মহিলা কর্মীদের যৌন নিগ্রহ প্রতিরোধে উদ্যোগের অভাব! এ পর্যন্ত ক’টি বার অ্যাসোসিয়েশন এ জাতীয় অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ শোনা ও নিষ্পত্তির জন্য সেল তৈরি করেছে? শুক্রবার এই প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি।
দিল্লিতে সাম্প্রতিক গণধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে সিটি সিভিল কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল এ দিন। বিষয় ছিল ‘নারী নির্যাতন সামাজিক ও আইনি প্রতিকার।’ বিশিষ্ট আইনজীবী, প্রাক্তন বিচারপতি থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতারা অংশ নেন আলোচনায়। সেখানেই বিচারপতি বাগচি বলেন, “আমাদের আইনের আঙিনায় প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানি ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিকা (বিশাখা গাইডলাইন) দিয়েছিল ১৯৯৯ সালেই। তাতে সরকারি-বেসরকারি সব অফিসে বিশেষ সেল খুলতে বলা হয়। এমনকী, গত বছরও মধু লেলে নামে এক আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট দেশের প্রত্যেক বার অ্যাসোসিয়েশনে এই সেল খোলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যে কোনও বার অ্যাসোসিয়েশনই তা করেনি।” তাঁর কথায়, “আলোচনা করা ভাল, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপও করতে হবে।”
বিভিন্ন বার অ্যাসোসিয়শনের তরফেও স্বীকার করা হয় যে, ওই সেল খোলা হয়নি এখনও। সিটি সিভিল কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সীতেশ দত্তচৌধুরী বলেন, “সত্যি বিষয়টা আমাদের মাথায় ছিল না। আমরা তাড়াতাড়ি এটা করব।” কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সচিব ভাস্কর বৈশ্য যুক্তি দেন, “এত দিন মহিলা কর্মীরা এই রকম কোনও অভিযোগ নিয়ে আসেননি, তাই সেল খোলার কথা মনে হয়নি। এ বার খোলা হবে।”
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুধু আইন করে নারীর উপর অত্যাচার বন্ধ হবে না। সমাজকে বদলাতে হবে। সরকার নীরব হয়ে রয়েছে। দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার মানসিকতা নেই।” বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির খেদ, “নারী নিগ্রহ রোধে নতুন কোনও আইন বা তা সংশোধনের জন্য এ দেশে প্রতি বারই কোনও চরম নির্যাতনের ঘটনা ঘটার দরকার হয়।” এই প্রসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৮০-তে মেরঠের থানায় ১৬ বছরের এক মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ার পরে ধর্ষণের বিচার সংক্রান্ত আইনে নতুন ধারা যোগ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ধর্ষিতার বয়ানকে সত্য বলে ধরতে হবে। তিন দশক পর দিল্লির গণধর্ষণ নিয়ে দেশ তোলপাড় হওয়ার পর গড়তে হয়েছে বিচারপতি বর্মা কমিটি। অথচ ২০০০ সালেই ল কমিশন তাদের ১৭২তম রিপোর্টে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞা ও আইন সংশোধন নিয়ে তাদের সুপারিশ জানিয়েছে। কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামাননি এত দিন। |