সকাল ১০টা থেকেই দমদমের সরোজিনী নাইডু কলেজ ফর উইমেন যেন নিশ্ছিদ্র দুর্গ। গেট বন্ধ। গেট আটকে দাঁড়িয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একদল সর্মথক। যত সময় যাচ্ছে, উল্টো দিকে যশোহর রোডে বাড়ছে তৃণমূল-সমর্থকদের জটলা। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর, দমদমের কয়েক জন তৃণমূল নেতাও হাজির। কেউ কেউ পথের ধারে চেয়ারে বসে। ধীরে ধীরে দীর্ঘ হচ্ছে মোটরবাইকের বাহিনী। অধিকাংশেরই চোখে-মুখে উত্তেজনা। পুলিশের জিপও দাঁড়িয়ে কলেজের গেটে।
এই উত্তেজনা ও জটলা ওই কলেজে নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে। আগামী ৯ তারিখ কলেজ নির্বাচন। তার আগে শুক্রবারই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
ঘড়ির কাঁটায় দুটো বাজতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল কলেজ গেটের বাইরের জমায়েত। রাস্তায় উড়তে থাকল সবুজ আবির। এসএফআই মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় কার্যত নিরঙ্কুশ ভাবে তাঁরাই জয়ী। আবির মাখতে মাখতেই এক নেত্রী সোমা আচার্য বললেন, “গত বছর এই কলেজ নির্বাচনে আমাদের একটাও মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি এসএফআই। ৩৪ বছর ধরে অনেক সহ্য করেছি। আর নয়।” |
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের বক্তব্য, এসএফআই-সমর্থকেরা কলেজে ঢুকে গোলমাল বাধাতে পারতেন। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই তাঁরা গেটের সামনে ছিলেন।
কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনার অভিযোগ, সেই এসএফআই সমর্থকেরা কোথায়? তাঁদের কলেজের কাছে দেখা যায়নি। উল্টে এসএফআইয়ের অভিযোগ, গত দু’দিন ধরে তাঁরা কলেজে এসে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। অভিযোগ, কলেজের ধারেকাছে যাওয়া দূরে থাক, কলেজের পিছনে মল রোডে এসএফআই সমর্থকেরা এলেই তাঁদের মেরে তাড়ানো হচ্ছে।
কলেজের সামনে এ দিন বরং দেখা গিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাপট। উল্টো দিকে জড়ো হওয়া বাইকবাহিনীর অধিকাংশই ছাত্রছাত্রী নয়, তা পরিষ্কার। কলেজের ধারেকাছে ঘেঁষতে পেরে দমদমের একটি দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষোভ উগরে দেয় এসএফআই। ওই কলেজে এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক শালিনী প্রামাণিকের অভিযোগ, “নির্বাচনে লড়ব কী ভাবে? গত দু’দিন ধরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে কলেজেই ঢুকতে পারছি না। বৃহস্পতিবার দলবেঁধে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম, মারধর করে তাড়ানো হয়েছে। গণতন্ত্রের জায়গায় দলতন্ত্র চলছে।” যদিও অভিযোগের জবাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেত্রী পারমিতা সেন বলেন, “আমরা কাউকে আটকাচ্ছি না। মারধরও করছি না। যে-কেউ এসেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন।”
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয় এ দিন দুপুর দুটোয়। পৌনে দুটোয় শোনা গেল, এক তৃণমূল সমর্থক এক কলেজছাত্রীকে বলছেন, “আর পনেরো মিনিট দাঁড়িয়ে থাকো।” কলেজের উল্টো দিকে যাঁরা বসেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন দমদম পার্কের তৃণমূল কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। কলেজ নির্বাচনে তাঁরা এসেছেন কেন? মৃগাঙ্কবাবুর উত্তর, “মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে আমাদের ভাইবোনদের উত্সাহ দিতে এসেছি। কোথাও যাতে কেউ গণ্ডগোল না করে, সে দিকে সজাগ রয়েছি।”
এ দিকে, কলেজের অধ্যক্ষা উর্মিলা উকিল বলেন, “ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র পাঠিয়েছিলাম। ওয়েবসাইটে ওই ফর্ম পূরণ করলেও স্বাক্ষর করতে এক জনকে কলেজে আসতে হত। এসএফআইয়ের তরফে কেউ আসেননি। আনুষ্ঠানিক ভাবে শনিবার নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে। কলেজে কোনও গণ্ডগোল হয়নি।” এ দিন দুপুরে দমদম থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। তাঁদের অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে তাঁরা মার খেয়ে ফিরে এসেছেন। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপই করেনি। পুলিশের অবশ্য দাবি, কলেজের সামনে সকাল থেকেই পাহারা ছিল। মারধরের ঘটনা ঘটেনি।
এ দিকে, ভিক্টোরিয়া কলেজেও এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। |