ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে না প্রযুক্তি, দেখাল দিল্লির কারুশিল্প মেলা
তঙ্ক আর ত্রাসের প্রতিমূর্তি।
স্টেনলেস স্টিল আর ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি অত্যাচারে জর্জরিত এক নারী শরীর। মাটি থেকে এক ফুট উপরে লোহার শিকল, নাট বোল্ট দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তাকে।
রাজধানীর ইন্ডিয়া আর্ট ফেয়ারে আপনাকে স্বাগত! মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকেই আপনার বিবেকের টুঁটি চেপে ধরার জন্য এই ইনস্টলেশনটিই যথেষ্ট। সাম্প্রতিক ধর্ষণ-কাণ্ডের ছায়া ঘিরে রয়েছে কৃষ্ণা মুরারির এই কাজকে।
ভারতীয় কারুশিল্প মেলার পঞ্চম সংস্করণে এ রকম বিভিন্ন আইডিয়ার ছড়াছড়ি। ভিডিওগ্রাফ, মাইক্রো সেন্সর, লোহার ট্রাঙ্ক থেকে পলিথিনের তার ইনস্টলেশন নিজেকে ক্রমাগত প্রসারিত করেছে এ বারের মেলায়। সিমা আর্ট গ্যালারির কর্ণধার রাখী সরকারের কথায়, “বিদেশে এই ধরনের কাজ সত্তরের দশকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এখানে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এই ইনস্টলেশনের যুগ শুরু হল।” বিভিন্ন আইডিয়াকে মূর্ত করার জন্য এখন বাঁধা-ধরা কোনও মাধ্যম আর থাকছে না। শব্দ অথবা আলো দিয়েও বিভিন্ন আইডিয়ার প্রকাশ শুরু হয়ে গিয়েছে। “কিন্তু আইডিয়ার মূলটা আমাদের দেশের ঐতিহ্যের মধ্যেই রয়েছে। প্রাচ্যের অনেক ধারণাকে নিয়েই পাশ্চাত্য তার কারিগরি ও প্রযুক্তিকে অবলম্বন করে নতুন ধরনের কাজ করছে,” বললেন রাখী।

সিমা আর্ট গ্যালারির স্টলে গণেশ পাইনের মহাভারত। ছবি: কস্তুরী ঘটক
এ বারের মেলায় সিমা-র স্টল ঐতিহ্যের পথেই হেঁটেছে। ছিমছাম স্টলে গণেশ পাইনের মহাভারত সিরিজ কোথাও চারকোল-ক্রেয়ন, কোথাও বা টেম্পেরায় অন্ধ পিতার অসহায়তা, দ্রৌপদীর গর্বিত গ্রীবা, কৃষ্ণর প্রয়াণ-দৃশ্য।
ঐতিহ্য এবং উত্তর-আধুনিকতা। পেনসিল ও পিক্সেল। এ বারের শিল্পমেলাতে এটাই যুগ্ম থিম। শিল্পী যোগেন চৌধুরী জানাচ্ছেন, নতুন ধরনের কাজ হলেই যে পুরনো ঘরানা নস্যাৎ হয়ে যাবে, বিষয়টি সে রকম নয়। তাঁর কথায়, “আধুনিকতা মননের বিষয়। কাদা বা মাটির মতো প্রাগৈতিহাসিক মাধ্যমেও উত্তরাধুনিক কাজ হচ্ছে। মানুষের শরীর তো কবেকার মোটিফ। তাকে নিয়েই নতুন ভাবে কাজ হচ্ছে।” ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের অধ্যাপক ও শিল্পী শমীন্দ্রনাথ মজুমদার অবশ্য কিছুটা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। প্রশ্ন তুলছেন, “অতিরিক্ত প্রযুক্তি-প্রবণতা ও উত্তর-আধুনিকতার পিছনে দৌড়নো কি শিল্পীর অর্ন্তনিহিত চাহিদা থেকে গড়ে উঠছে? নাকি নিছক ফ্যাশনের কারণে, সমকালীন হাওয়ায় গা ভাসাতেই এর আমদানি?”
শিল্পী পরেশ মাইতি নিজে জলরঙের পাশাপাশি ইনস্টলেশনের কাজ করে চলেছেন অক্লান্ত ভাবে । এ বারের মেলায় তাঁর কাজ দেখতে যথারীতি সারিবদ্ধ মানুষ। তাঁর মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কাজের পরিবর্তন আসে। কিন্তু ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগ থেকেই যায়। সামনেই দাঁড় করানো নিজের একটা কাজকে উদাহরণ দিলেন। আটটি ট্রাঙ্ক, একটির উপর একটি রাখা রয়েছে (বিভিন্ন দিকে কোণ করে)। প্রত্যেকটির গায়ে আঁকা শাহী দিল্লির বিভিন্ন কেল্লা, মসজিদের ছবি। মাথায় একটি নৌকো। পরেশবাবুর বক্তব্য, “যাঁরা হস্টেলে থেকেছেন, তাঁদের যৌবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ট্রাঙ্ক। আমারও তাই। সেই সনাতন বিষয়টিকেই নতুন ভাবে পরিবেশন করা হয়েছে এখানে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.