বিনোদন: বন্ধন
বেনারসি-লেহেঙ্গা টক্করে জিতল সেই বিনোদনই
প্রথমার্ধে কুলচা, দ্বিতীয়ার্ধে কড়াইশুঁটির কচুরি।
ফার্স্ট হাফে লেহেঙ্গা আর শেরওয়ানি, কিন্তু সেকেন্ড হাফে লাল বেনারসি আর ধুতি-টোপর।
সকালে শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেবকে চার বার প্রদক্ষিণ, তো বিকেলে সপ্তপদী।
আর ইন্টারভ্যালে শুধুই হুল্লোড়।
ভিলেন বাবা বাগড়া দিচ্ছেন না, খলনায়িকা ননদিনী শাশুড়ির কান ভারীও করছেন না। তবু সুপারহিট হওয়ার প্রচুর মশলা এই ছবিতে।
যে মেগা ইভেন্টের দিকে ক’দিন ধরে তাকিয়ে টলিউড, কোয়েল মল্লিক আর নিসপাল সিংহ রানের সেই গাঁটছড়া বাঁধা হয়ে গেল শুক্রবার। দু’টি পর্বে। প্রথমে রাসবিহারী গুরুদ্বারে দুপুরে দেড় ঘণ্টার একটি শিখ অনুষ্ঠান। সেই গুরুদ্বারেই, যেখানে প্রতি মাসে অন্তত এক বার আসেন নিসপাল।
সকাল ন’টায় নিসপালের আলিপুরের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেখা গেল ব্যান্ড পার্টি, ঘোড়া সব হাজির। নিসপাল তখন ডিজাইনার অভিষেক দত্তের শেরওয়ানি পরে হাতে কৃপাণ নিয়ে ‘শেহরা’ বাঁধছেন। রয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু মণি, শ্রীকান্ত, ভরত কল। কিছুক্ষণ পর এলেন জিৎ।
এক বিয়ে, দুই রীতি


শুক্রবার প্রথমে পঞ্জাবি, পরে বাঙালি মতে বিয়ে সারলেন
কোয়েল মল্লিক এবং নিসপাল সিংহ রানে। —নিজস্ব চিত্র
তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে নীচে নেমে এসে ঘোড়ায় বসলেন বর। শুরু হল ভাংরা। জিৎ-ও তখন নাচছেন ‘মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যায়’-এর তালে তালে। নিরাপত্তার কড়াক্কড়িতে আলিপুর থেকে রাসবিহারী ঘোড়ায় চড়ে আসতে পারেননি নিসপাল। ফ্ল্যাটের নীচে একটু ঘুরে বর উঠে পড়লেন তাঁর নীল বিএমডব্লিউ-তে।
গুরুদ্বারের সামনে তখন উপচে পড়া ভিড়। কোয়েলও হাজির। চারিদিকে সিকিওরিটি আর বাউন্সার। মাছি ঢোকারও অবকাশ নেই।
একটু পরেই শুরু হল শিখ মতে বিয়ে। বিয়েকে তাঁরা বলেন ‘আনন্দ কার্য’। বাঙালিদের যেমন সাত পাকে বাঁধা, শিখদের তেমন চার বার। কন্যাকর্তা রঞ্জিত মল্লিক গাঁটছড়া বেঁধে দিলেন। বর-কনে শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেবকে চার বার প্রদক্ষিণ করার পরে শেষ হল বিয়ে। গুরুদ্বারে তখন সমস্বরে সবাই বলছেন, “ওয়াহে গুরুজি কা খালসা। ওয়াহে গুরুজি কি ফতে।” চলছে ‘যো বোলে সো নিহাল সৎ শ্রী অকাল’-এর ধ্বনি।
এর মধ্যেই জিৎ হঠাৎ নগারা বাজাতে শুরু করে দিলেন। পরে জানা গেল, গুরুদ্বার কমিটির কাছে জিৎ নিজে অনুরোধ করেছিলেন, তাঁকে যেন নগারা বাজাতে দেওয়া হয়। গুরুদ্বার কমিটিও তাঁকে নিরাশ করেনি। হাজির দেব-ও।
সকালের বিয়ে-পর্ব শেষ। শুরু হয়ে গেল বর-কনের সঙ্গে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি। চলছে বাঙালি বনাম পঞ্জাবি সংস্কৃতির মধ্যে অল্পবিস্তর ঠোকাঠুকি। কনেপক্ষের এক জন আর এক জনকে বলছেন, “লুচি নেই গো, এদের শুধুই কুলচা।” সবটাই বিয়েবাড়ির মজা।
কোয়েলের কাছে...

তখন চলছে কোয়েল মল্লিকের বিবাহ-পর্ব। তারই উত্‌সুক দর্শক কনের বাবা রঞ্জিত মল্লিক।
সঙ্গে দেব এবং নায়ক ও গায়ক দুই জিত্। শুক্রবার, রাসবিহারীর গুরুদ্বারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এর মধ্যেই কোয়েল বিয়ের পর প্রথম কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। গোলাপি লেহেঙ্গায় উজ্জ্বল পঞ্জাবি নববধূ। কেমন লাগছে? “উত্তেজিত। ভীষণ উত্তেজিত। এর পর তো সন্ধেবেলা বাড়িতে বাঙালি মতে বিয়ে। পুরোটাই খুব একসাইটিং,” একগাল হেসে বললেন। সব চেয়ে মনে রাখার মতো ঘটনা কী?
“জানেন, আমার মেহেন্দি অনুষ্ঠানের ব্যাকগ্রাউন্ডে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছিল। ভাবতে পারছেন?” হেসে গড়িয়ে পড়লেন ‘নিসপাল সিং নিবেদিত’ বহু ছবির হিট নায়িকা। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল, বৃহস্পতিবার সকালেই নান্নীমুখ, গায়ে হলুদ সেরে ফেলেছিলেন। “ওটা আগে না করলে আজ কিছুতেই ম্যানেজ করতে পারতাম না,” স্পষ্ট স্বীকারোক্তি কোয়েলের।
এর পর বিরতি।
বর চলে গেলেন তাঁর বাড়ি। শেরওয়ানি ছেড়ে শর্বরী দত্তের পাঞ্জাবি পরতে। কোয়েলও সকালের লেহেঙ্গা বদলে এ বার সায়ন মিত্রের ডিজাইন করা বেনারসি পরবেন।
সন্ধে সাড়ে ছ’টা থেকে শুরু দ্বিতীয় পর্ব। মেয়ের বাড়িতে বাঙালি মতে বিয়ে হল দু’জনের। বিয়ে চলাকালীনই ঘুরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছবির ক্লাইম্যাক্স রাতে, রয়্যাল ক্যালকাটা গলফ ক্লাবে। হাজির হলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। দেব আর জিৎ তো ছিলেনই। এ যেন চাঁদের হাট। এক দিকে, মুনমুন সেন, রাইমা সেন, অজয় চক্রবর্তী, তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, নবনীতা দেবসেন, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অনীক দত্ত, জুন মাল্য। অন্য দিকে, অগ্নিমিত্রা পাল, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, আবির চট্টোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, ইন্দ্রাণী হালদার। এলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অনুপম রায়, শ্রীলেখা মিত্রও। ছিলেন শুভাপ্রসন্ন, সুব্রত ভট্টাচার্য, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। টলিউডের প্রায় সব সেলিব্রিটি। আর ছিল কষা মাংস, চিংড়ির মালাইকারি-সহ খাওয়ার এলাহি আয়োজন।
মল্লিকবাড়ি থেকে আমন্ত্রিতদের উপহার আনতে বারণ করে দেওয়া হয়েছিল। অনেকে মানলেও বহু নিমন্ত্রিতই নববধূর জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন। দেব অবশ্য বললেন তিনি সকালেই উপহার দিয়ে দিয়েছেন রানে আর কোয়েলকে। কী দিলেন? “সকালে গুরুদ্বারের সামনে আমার গাড়ির ওপর এমন হামলা হল যে গাড়ির নম্বর প্লেটটাই হাওয়া। ওটাই কোয়েল আর রানেকে আমার উপহার,” মজা করে বললেন কোয়েলের ‘পাগলু’।
এ রকম হাসিঠাট্টার মধ্যেই শেষ হল টলিউডের মেগা ইভেন্ট। বিয়ে হল বাঙালি ‘কালচার’ সংস্কৃতি আর পঞ্জাবি ‘এন্টারটেনমেন্ট’-এর। কুলচা-কচুরির লড়াইয়ে জিতল বিনোদনই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.