বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে (এমজিএনআরইজিএস) নতুন দিশা দেখাচ্ছে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতি। তারা শৌচাগার নির্মাণ বা বনসৃজনের কাজ করাচ্ছে ওই প্রকল্পের আওতায়। মূলত শৌচাগারের ভিত বানানো হচ্ছে ১০০ দিনের কাজে। সেখানে কাজ পাচ্ছেন শৌচাগারের মালিকরাও। সেই বাবদ মজুরিও পাচ্ছেন তাঁরা। বাকি কাজটা হচ্ছে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনয় সাহা বলেন, “বাঁকুড়া থেকে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছিলাম। প্রকল্পগুলিতে মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে।” ১০০ দিন কাজের জেলা নোডাল অফিসার বিশ্বজিৎ মোদক বলেন, “শৌচালয়ের ভাবনাটি একেবারেই মৌলিক। রাজ্য স্তরে তা প্রশংসিতও হয়েছে।”
ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, এমজিএনআরইজিএস ও নির্মল ভারত অভিযানের যৌথ প্রকল্পে এলাকায় ২৪৩টি শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। ১০০ দিন কাজে তার ভিত তৈরির সময় মাটি কাটতে, সোকপিট ও কিচেন গার্ডেন বানাতে দেওয়া হয়েছে ১০৮৬ টাকা করে। ৩২০০ টাকা দেওয়া হয়েছে বাকি অংশ (ছাদ, দেওয়াল প্রভৃতি) করার জন্য। বিপিএল তালিকাভুক্তদের ৩২০০ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। শৌচাগার ব্যবহারকারী দিচ্ছেন ৩০০ টাকা। যুগ্ম বিডিও (ময়ূরেশ্বর ২ ব্লক) মলয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রথম দিকে তেমন ভাবে জন সচেতনতা না গড়তে পারায় ওই কাজ ততটা এগোয়নি। তবে নতুন একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রকল্পের কাজ এখন ভালই এগোচ্ছে। অনেকে আবার এই টাকার সঙ্গে আরও কিছু টাকা দিয়ে আরও ভাল শৌচাগার তৈরি করে নিচ্ছেন।” |
প্রকল্পে নির্মিত শৌচাগার।—নিজস্ব চিত্র। |
এই ব্লকের কুণ্ডলা পঞ্চায়েতের আকোলপুরের ছবি ধীবর, প্রতিমা ধীবর, মালতি রায়, কাজল বিশ্বাসদের বাড়িতে শৌচাগার তৈরি শুরু হয়েছে এ ভাবেই। সেখানে তাঁরা ১০০ দিনের কাজের টাকাও যেমন পেয়েছেন, তেমনই নির্মল ভারত প্রকল্পের টাকাও পাবেন। তবে মাটি কাটার কাজ করার সময় কিছু টাকা পেলেও বাকি টাকা কিন্তু মিলছে শৌচাগার সম্পূর্ণ হলেই। কুণ্ডলা পঞ্চায়েতের পুকুরপাড়ার লক্ষ্মী বিত্তারদের মতো অনেকে আবার নিজেরাই আরও টাকা খরচ করে ভাল শৌচাগার বানিয়ে নিয়েছেন।
ঘটনা হল, শৌচাগার তৈরির চেয়ে আম গাছের চারা লাগোনোর প্রকল্পেই মানুষের বেশি সাড়া মিলেছে। ব্লকে এখনও পর্যন্ত ৭১,২৬৫টি শ্রম দিবসে মোট ১,২২,১৬৭টি আমের চারা লাগানো হয়েছে। ব্লক থেকে সম্প্রতি সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬২ শতাংশ গাছ বেঁচে আছে। যুগ্ম বিডিও বলছেন, “আগামী ছ’বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ গাছ বেঁচে থাকবে বলেই আমাদের আশা। তা যদি হয় এবং প্রতি গাছে যদি ২০ কেজি করে আম পাওয়া যায়, তা হলে সেগুলি ১৫ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি করতে পারলেও প্রকল্পব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি টাকা পাওয়া যাবে।”
দাসপলশা পঞ্চায়েতে ওই প্রকল্পের সুপারভাইজার আবু সামাদ জানালেন, আগের বিডিও বাবুলাল মাহাতো এলাকার মানুষকে বাঁকুড়ার খাতড়ায় নিয়ে গিয়ে গাছ লাগানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। এলাকায় প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে আমের চারা লাগানো হয়েছে। পঞ্চায়েতের দাবি, প্রকল্প ঠিকমতো বাস্তবায়িত হলে সাত-আট বছরের মধ্যে এলাকার অর্থনীতির অনেকটাই উন্নতি হবে। |