শৌচাগার ব্যবহার করা নিয়ে প্রচার চলছিল দুবরাজপুর ব্লক এলাকায়। মূলত সেই সমস্ত পরিবারগুলির জন্য, যাঁদের ঘরে শৌচাগার নির্মাণের জন্য একটা বড় অংশের টাকা দেবে সরকার। সম্প্রতি দুবরাজপুর ব্লকের পদুমা পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচার চলাকালীন এক বধূ তাঁর বাড়িতে শৌচাগার বসাতে রাজি হন। তার পর থেকেই তাঁকে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে শৌচাগার নির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প খুব একটা আশানুরূপ নয় দুবরাজপুর ব্লকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্মিত শৌচাগারগুলি হয় ব্যবহার করছেন না অথবা এই প্রকল্পের আওতায় আসতে ইচ্ছুক নন লোকজন।
|
সজনী মাড্ডি।
—নিজস্ব চিত্র। |
পরিস্থিতি বদলাতে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী থেকে রাজনৈতিক দল এবং পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে প্রচার চলে। শৌচাগার ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝতে পেরে এই প্রকল্পের আওতায় আসতে রাজি হন পদুমা পঞ্চায়েতের কাঞ্চননগর আদিবাসী পাড়ার বধূ সজনী মাড্ডি। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি।
রাজমিস্ত্রি হওয়ায় একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তিনি নিজের বাড়িতে যেমন শৌচাগার বসাতে পারবেন, তেমনি পঞ্চায়েতের অন্যের বাড়িতে তা বসানো ও ব্যহারের গুরুত্ব বোঝাতে পারবেন। সেই সঙ্গে তাঁর আয়ও হবে।
দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আইনের মধ্যে থেকে এই কাজে যদি মহিলাদের যুক্ত করা যায়, তা হলে স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে একটা বড় পদক্ষেপ হবে। দ্বিতীয়ত-- এলাকার মহিলাদের শৌচাগার ব্যবহারের উপযোগিতা সম্পর্কে বোঝানো আনেক সহজ হবে তাঁর পক্ষে, যিনি হাতে কলমে কাজটা করছেন।” তিনি জানান, এই কাজে নিয়োজিত স্যানেটারি মার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ওই মহিলা রাজমিস্ত্রিকে প্রশিক্ষণ এবং কাঁচামাল দিয়ে সাহায্য করতে ওরা রাজি। তবে এই পরিকল্পনার কৃতিত্ব ব্লকের যুগ্ম বিডিও মানিক সিংহ মহাপাত্রকেই দিয়েছেন কুণালবাবু। মানিকবাবুর কথায়, “রাজমিস্ত্রির কথা বলতে শুধুমাত্র পুরুষদের কথাই ভাবা হয়। অথচ আমাদের ব্লকেই এক আদিবাসী মহিলা রাজমিস্ত্রি আছেন, যিনি পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা কাজ করে চলেছেন। ব্লকের মহিলা বিকাশ আধিকারিক রঞ্জনা দের কাছ থেকে তাঁর বিষয়ে জানার পরেই তাঁকে এই কাজে নিযুক্ত করার কথা ভাবি।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, সাড়ে ৫ হাজার টাকা ব্যায়ে এই শৌচাগার নির্মাণ হয়ে থাকে। বিপিএল পরিবার ৯০০ টাকা দিলে বাকি টাকা সরকার দেবে। সম্প্রতি বিপিএল পরিবার ছাড়াও তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি বা কোনও পরিবারে যদি প্রতিবন্ধী সদস্য থাকেন, সেই পরিবার এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের পরিবার এমনকী মহিলা দ্বারা পরিচালিত পরিবার পরিবার ৪৬০০ টাকা পাবে। দেখা গিয়েছে, পদুমা পঞ্চায়েতে বিপিএল ২৫২২ এবং সম্পন্ন ২৩০০ পরিবার রয়েছে। ৫০ শতাংশ পরিবারই শৌচাগার ব্যবহার করেন না।
আর যাঁকে ঘিরে এত পরিকল্পনা সেই সজনী মাড্ডির কথায়, “বিয়ের আগে ও পরে রাজমিস্ত্রির যোগাড়ের কাজ করতাম। স্বামীও রাজমিস্ত্রি। বিয়ের পর তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে যখন আভাবে দিন কাটছে, তখন স্বামীই বলেছিল রাজমিস্ত্রির কাজ শিখতে। সেই শুরু। এখন অভাব কমেছে। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছেলে মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতায় কম্পিউটার শেখে এবং ছোট মেয়েও পড়াশোনা করে।” স্বামী বাবুলাল মুর্মু বললেন, “ব্লক থেকে কাজ দিলে সে কাজও ভাল ভাবেই করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।” |